ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিরাগত ও অছাত্ররা হল ছাড়েনি , তবে এক শর্তে হল ছাড়তে রাজি অছাত্ররা !

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিরাগত ও অছাত্ররা হল ছাড়েনি , তবে এক শর্তে হল ছাড়তে রাজি অছাত্ররা !
ঢাবি প্রতিনিধি ।।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল প্রশাসন বহিরাগত এবং অছাত্রদের হল ছাড়তে ১৫ দিন সময় বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার ১ মাস পেরিয়ে গেলেও হল ছাড়েনি তারা। এতে ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, বিজ্ঞপ্তি দিয়েই নীরব ভূমিকা প্রশাসনের। অন্যদিকে, অছাত্ররা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই আইন যদি ছাত্রলীগসহ দল-মত নির্বিশেষে   সবার জন্য প্রয়োগ করে, তবে তারাও হল ছাড়বেন।
 
জানা যায়, গত ১০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আবাসন সঙ্কট দূরীকরণে স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার পর অর্ধ মাসের মধ্যে হল ছাড়তে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেক হলগুলোর কক্ষগুলোয় নোটিসের মাধ্যমে অছাত্রদের হল ত্যাগ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে এই নির্দেশনার ১ মাসের বেশি পার হলেও এখন পর্যন্ত কোনো অছাত্র বা বহিরাগত শিক্ষার্থীকে বের করতে পারেনি প্রশাসন।
 
১০ অক্টোবরের প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোনো শিক্ষার্থীর মাস্টার্স শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে হল ছাড়তে বাধ্য করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কেউ যদি হল না ছাড়ে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যাবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কোনো শিক্ষার্থী প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া হলে উঠতে পারবে না। এই সিদ্ধান্তের পর প্রশাসনকে সাধুবাদ জানিয়েছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যদিও এর বাস্তবায়ন নিয়ে তারা সংশয়ে ছিল।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে তীব্র আবাসন সঙ্কট দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে। এর অন্যতম কারণ হলো মেয়াদোত্তীর্ণ ও বহিরাগতদের অবস্থান। এ ছাড়া বছর বছর শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধিও এর অন্যতম একটি কারণ। যদিও শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধির বিপক্ষে প্রশাসন কঠোর হয়েছে। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় কোনো আসন বৃদ্ধি করেনি প্রশাসন। তবে বহিরাগত ও মেয়াদোত্তীর্ণদের বের করার ব্যাপারে ‘বিজ্ঞপ্তির’ মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে প্রশাসন।
 
তবে ছাত্রীদের হলগুলোয় মাস্টার্স শেষ হওয়ার পরপরই হল ছাড়তে হয় মেয়ে শিক্ষার্থীদের। যেটার উল্টো চিত্র ছেলেদের হলগুলোতে। সেখানে হলে অবস্থানরত মোট শিক্ষার্থীর এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী বহিরাগত ও মেয়াদোত্তীর্ণ। কিছু কিছু হলে সিট বরাদ্দ দেওয়া হলেও রাজনৈতিক করণে সেই সিটে উঠতে পারে না শিক্ষার্থীরা। যার কারণে সে হলগুলোতে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা গণরুমে অবস্থান করে। আর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কক্ষগুলোতে অবস্থান করে মেয়াদোত্তীর্ণ ও বহিরাগতরা।
 
রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়াও কৌশলে অনেক অছাত্র হলে অবস্থান করছে। মেয়াদোত্তীর্ণ এমন কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা তখনই হল ছাড়বে যদি মেয়াদোত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থীকে বের করা হয়। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যারা হলে অবস্থান করছে তাদের হল থেকে বের করা প্রশাসনের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
 
তাদের বক্তব্য হলো প্রশাসন চাইলেও রাজনৈতিক কাউকে হল থেকে বের করতে পারে না। এ বছর ২৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসিমউদ্দিন হলে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক এমন কয়েকজন অছাত্রকে বের করতে গিয়ে ছাত্রলীগের ধাওয়ার শিকার হয়েছেন ওই হলের প্রভোস্ট ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক রহমত উল্লাহ। এ সময় তাকে ভুয়া ও জামায়াতি বলে আখ্যা দেওয়া হয়। এরপর থেকে আর কোনো বহিরাগত উচ্ছেদ অভিযান কোনো হলেই দেখা যায়নি। শুধু কয়েকদিন পরপর একটি বিজ্ঞপ্তিতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
 
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসিম উদ্দিন হলের প্রভোস্ট বলেন, আমরা হলের কি কাজ করেছি না করেছি এই তথ্য আমি তোমাকে দেব কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাপতিত্বে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তুমি উপাচার্যকে জিজ্ঞাসা কর। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আক্তারুজ্জামান বলেন, এক মাস অতিবাহিত হয়েছে আরও অতিবাহিত হবে। আমরা এই ব্যাপারে তাড়াহুড়া করছি না। সিদ্ধান্ত যখন হয়েছে আস্তে আস্তে তা বাস্তবায়ন করব। হঠকারী করে উসকানি দিয়ে কোনো রক্তারক্তির মধ্য দিয়ে আমরা এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে চাই না। আমরা সবকিছু নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বাস্তবায়ন করব। অসততার কোনো জায়গা এই বিশ্ববিদ্যালয় হবে না।