পাহাড়ে আর একটি কোপও দেওয়া যাবে না : ভূমিমন্ত্রী

পাহাড়ে আর একটি কোপও দেওয়া যাবে না : ভূমিমন্ত্রী
পাহাড়ে আর একটি কোপও দেওয়া যাবে না : ভূমিমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেছেন, কোন অবস্থায় পাহাড় কাটা যাবে না। পাহাড়ে আর একটি কোপও দেওয়া যাবে না। পাহাড় রক্ষায় কোন ছাড় নেই। সমুদ্র-পাহাড় ঘিরে কত সুন্দর চট্টগ্রাম শহর। চট্টগ্রামকে বাঁচাতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্ত থাকলে কারও কিছু করার সাহস হবে না।

গতকাল চট্টগ্রামের পাহাড় কাটা বিপর্যয় বন্ধে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও এএলআরডি’র যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।

ভূমিমন্ত্রী বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ল্যান্ড জোনিং কার্যক্রম শুরু করেছে। কোন পাহাড় কি অবস্থায় আছে তা নির্ধারণ করে পাহাড় রক্ষা করা হবে। আমি ক্লিয়ারলি বলতে চাই, পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। কারণ একটা ভবন ভেঙে গেলে তা নির্মাণ করা সম্ভব। একটি খাল ভরাট হয়ে গেলে সেটাও পুনর্খনন করা সম্ভব কিন্তু পাহাড় বানানো সম্ভব নয়। পাহাড়-পর্বত সমৃদ্ধ সুন্দর চট্টগ্রামকে বাঁচাতে হবে। প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন, সিডিএ, সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ অংশীজনদের সমন্বয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

পাহাড়কাটা ফৌজদারি অপরাধ উল্লেখ মন্ত্রী বলেন, পাহাড় কাটার অপরাধে শুধু শ্রমিক নয় এখন মূল মালিককেও মামলার আওতায় আনা হচ্ছে। ভূমি অপরাধ ও প্রতিরোধ আইন করা হয়েছে। এটা ছিল আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

বেলার প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, চট্টগ্রামে এখনও পাহাড় কাটা চলছে। দিনে অভিযান চালানো হলে রাতে পাহাড় কাটা হয়। অনেক ক্ষেত্রে পাহাড় কাটায় নারী শ্রমিক ব্যবহার করা হয়। আদালতের আদেশও মানা হচ্ছে না।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কামাল হোসাইন। এতে বলা হয়, একসময় নগরীতে ছোট-বড় ২০০টি পাহাড় ছিল। ইতিমধ্যে ১২০টি পাহাড় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচটি থানা (বায়েজিদ, খুলশী, পাঁচলাইশ, কোতোয়ালী ও পাহাড়তলী) এলাকায় পাহাড় ছিল ৩২.৩৭ বর্গকিলোমিটার। ২০০৮ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১৪.২ বর্গকিলোমিটারে। গত ৩২ বছরে ১৮.৩৪৪ বর্গকিলোমিটার পাহাড় নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে। যা মোট পাহাড়ের প্রায় ৫৭ শতাংশ।

জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন, পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি প্রফেসর মুহাম্মদ সেকান্দার খান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ইন্টেলিজেন্স বিভাগের পুলিশ সুপার সফিজুল ইসলাম, এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, চবি প্রাক্তন অধ্যাপক ড. শফিক হায়দার চৌধুরী প্রমুখ।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, সমন্বিত সার্ভের মাধ্যমে পাহাড় দখলদারের তালিকা করা হবে। এখন উপজেলা পর্যায়েও পাহাড় কাটা হচ্ছে। উপজেলায় পাহাড় রক্ষা কমিটি গঠন করা হবে। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাহাড় থেকে বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিচ্ছিন্ন করা না হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;