আওয়ামী লীগের তৃণমূলে শুদ্ধি অভিযান : ২০০৯-২০১৯ অনুপ্রবেশকারীরা পদ হারাবেন

আওয়ামী লীগের তৃণমূলে শুদ্ধি অভিযান  : ২০০৯-২০১৯ অনুপ্রবেশকারীরা  পদ হারাবেন
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
যারা অন্য দলগুলো থেকে ২০০৯ সালের পর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে এবং বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়েছে সারা দেশের এমন নেতাদের তালিকা তৈরি হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এসব তালিকা তৈরিতে সহায়তা করেছে। দলের কোনো পর্যায়ে তারা পদ পাবেন না। প্রধানমন্ত্রীর চলমান শুদ্ধি অভিযান প্রক্রিয়ার অংশ এটি। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও আওয়ামী লীগের নিজস্ব একটি দল অনুপ্রবেশকারী দেড় হাজার নেতার নামের তালিকা চূড়ান্ত করেছে। যারা বেশিরভাগই যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগের বিভিন্ন কমিটিতে বড় বড় পদ দখল করে রেখেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে অনুপ্রবেশকারী নেতারা গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। অনেকে জনপ্রতিনিধিও হয়েছেন। এই অনুপ্রবেশকারীদের দলের জাতীয় সম্মেলনের আগে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
 
চলতি মাসে শুরু হওয়া আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনেও তারা অংশ নিতে পারবেন না। এই বার্তা ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনুপ্রবেশকারী নেতারা কোনোভাবে যাতে কাউন্সিলর ডেলিগেট হতে না পারে সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে।
 
এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিতর্কিত, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ, অনুপ্রবেশকারী ও ভূমি দখলকারীসহ অসাধু ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতে স্থান পাবে না। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনেও যেন এ ধরনের কেউ স্থান না পায়।
 
কাদের আরও বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে থাকতে পারবে না। অনেকেই আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে নানা ধরনের অপকর্ম করছে। এই ধরনের অনুপ্রবেশকারী যাতে আমাদের দলের জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলর ডেলিগেট হতে না পারে সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আওয়ামী লীগে কোনো অসাধু ব্যক্তির স্থান নাই।
 
অনুপ্রবেশের তালিকা তৈরিতে ছিল পুলিশসহ সরকারি আরও একটি সংস্থা। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত দলে অনুপ্রবেশকারী নেতাকর্মীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভিন্ন দল থেকে ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিয়েই যারা জুয়া, ক্যাসিনো, মাদক ও টেন্ডারবাজিতে জড়িয়েছে তাদের নাম উঠে এসেছে তালিকায়। এ তালিকায় আওয়ামী লীগের কিছু নেতার নামও রয়েছে; যারা এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে ২২ অক্টোবর গোয়েন্দা পুলিশকে দলে অনুপ্রবেশকারীর তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর পরপরই এই তালিকা প্রণয়নের জন্য প্রত্যেক থানার ওসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই মতে, শুধু আওয়ামী লীগ নয়, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে একই সময়ে অনুপ্রবেশকারীদেরও তালিকা করা হয়েছে।
 
সূত্র মতে, ২০০৯ সালের পর থেকে অদ্যবধি বিএনপি ও জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোট ও তাদের অঙ্গ সংগঠন থেকে যারা আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে তাদেরকেই প্রাথমিকভাবে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তালিকা তৈরির সময় যে বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছেÑ তার মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা আওয়ামী লীগ নেতা। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে কিংবা আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন এমন নেতা।
 
আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া এসব সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজের আগের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মামলা থাকলে তার বিবরণ। সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের আগের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতার নাম-পদপদবি ও পরিচয়। তাদের বর্তমান আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতার নাম-ঠিকানা এবং তাদের বর্তমান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিবরণ।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সারা দেশে প্রধানমন্ত্রী শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করছেন। এখন সেই শুদ্ধি অভিযানে নিজ দলের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা অনুপ্রবেশকারীদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। কেননা যারা বিএনপির সময় বিএনপির সুবিধা নিয়ে এখন আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে ভিড়েছেন তাদের অবশ্যই চিহ্নিত করা দরকার। ফ্রিডম পার্টি করে আসা লোক হয়তো কোনো কারণে নিজের স্বার্থে আওয়ামী লীগে ভিড়তে পারে কিন্তু সে কোনো দিনই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী হতে পারে না। সুন্দর অট্টালিকায় যদি দুর্গন্ধ থাকে তাতে কেউ প্রবেশ করতে আগ্রহী হয় না। তেমনি দলের ভেতর আগাছা থাকলেও দলে অস্বস্তি বিরাজ করে।