লকডাউনে পর্যটনশূন্য সীতাকুণ্ড, নিজ সাজে সেজেছে চন্দ্রনাথ পাহাড়

লকডাউনে পর্যটনশূন্য সীতাকুণ্ড, নিজ সাজে সেজেছে চন্দ্রনাথ পাহাড়
লকডাউনে পর্যটনশূন্য সীতাকুণ্ড, নিজ সাজে সেজেছে চন্দ্রনাথ পাহাড়

লিটন চৌধুরী , সীতাকুণ্ড ।। 

সারাদেশে দফায় দফায় লকডাউনের কারণে পর্যটন ও দর্শনীয় এলাকায় মানুষের আনাগোনা ও কোলাহল কম ছিল। আর সে কারণে উন্মুক্ত হতে শুরু করেছে  প্রকৃতি এবং কমেছে পরিবেশ দূষণের মাত্রা। নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পেয়েছে প্রকৃতি। এতে পাল্টে গেছে সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়ের প্রকৃতিও। যেন অচেনা রূপ ধারণ করেছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থক্ষেত্র ও পর্যটন এলাকা চন্দ্রনাথ ধাম।

সীতাকুণ্ড উপজেলার সব পর্যটন স্পটগুলো একেবারেই ফাঁকা। চিরচেনা দৃশ্যের কিছুই নেই এখন। উপজেলা হচ্ছে দূষণমুক্ত। থেমে গেছে প্রাণের কোলাহল। সীতাকুণ্ডে এমন দৃশ্য সত্যিই বিরল। পাহাড়ে যেন আগের রূপ ফিরে পাচ্ছে। এখানেই রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর প্রাকৃতিক নৈসর্গ। এ পাহাড়কে ঘিরে রয়েছে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বৃহত্তম বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পশুপাখির অভয়ারন্য ও প্রদর্শনী বন রয়েছে। এছাড়া রয়েছে পৃথিবীর একমাত্র গরম পানির ঝর্ণা। সহস্রধারা, সুপ্তঝর্ণা, সীতাকুণ্ড ঝর্ণা, ঝরঝরা ট্রেইল, বড়দারোগাহাট ঝর্ণাধারার মত ছোট বড় অসংখ্য ঝর্ণা তো আছেই। শুধু ঝর্না নয়, রয়েছে অন্যতম সুন্দর ও বৃহত্তম প্রাকৃতিক লেক ‘ভাটিয়ারী লেক’।

পরিবেশবিদ, সচেতন নাগরিক এবং শিক্ষাবিদদের মতে, মানুষের আগ্রাসনের কারণে পাহাড়ের পশু-পাখি বাঁচার পরিবেশ হারিয়ে ফেলেছিল। আমাদের আচরণে পশু-পাখি এবং নদ-নদী বিরক্ত। এ স্থানে তীর্থক্ষেত্র ও পর্যটন এলাকা হওয়ায় পাহাড়ে এত বেশি মানুষের ঢল, এমন কোলাহলের কারণে বন্যপ্রাণিগুলো অনিরাপদ বোধ করে। যখন কোলাহল থেমে গেলো পাহাড় যেন আগের রূপ ফিরে পাচ্ছে। ইপসার প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে মানুষের জীবনযাত্রা থেমে গেছে। করোনাভাইরাস ঝুঁকি এড়াতে পর্যটক নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। তবে এই সময়ে সীতাকুণ্ড পাহাড়ে পর্যটকের আনাগোনা এবং স্বাভাবিকভাবে পরিবেশের উপর একটা চাপ থাকে। পরিবেশ প্রকৃতি যেন নিজের রূপে ফিরে এসেছে। কোথাও দূষণ নেই, মানুষের সমাগম নেই, প্রকৃতি দূষণ নেই, ঝর্ণা ও লেকের পানি স্বচ্ছ হয়ে গেছে।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সুনিল বন্ধু নাথ বলেন, পাহাড়ে অবাধ বিচরণের কারণে সেখানকার প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে থাকলেও এখন আর সেই দৃশ্য নেই। আশার কথা হলো অন্তত এ দুর্যোগ মুহূর্তে প্রকৃতি তার নিজের পরিবেশ ফিরে পেয়েছে। তাই এ পরিবেশকে ধরে রাখতে হবে। তার মতে, তীর্থক্ষেত্র ও পর্যটন এলাকা হওয়ায় অতিমাত্রায় মানুষের উপস্থিতি হয়। যেটা এ পরিবেশের জন্য উপযোগী নয়। সে জন্য বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যটক আগমন সীমিত এবং পর্যটন শিল্পকে পরিবেশবান্ধব গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। তাহলে পর্যটন-প্রকৃতি দুটোকেই রক্ষা করা যাবে।

সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবের সভাপতি সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে তীর্থ দর্শন বা পর্যটক এলাকায় সমাগম কম হচ্ছে। এতে প্রকৃতি তার আপন রূপ ফিরে পেতে শুরু করেছে। প্রকৃতিতে এখন পশু-পাখির কোলাহল কোকিলের ডাক শোনা যাচ্ছে। যার কারণে প্রকৃতি তার আপন রূপে ফিরে গেছে। সব মিলিয়ে সীতাকুণ্ড অপরূপ সাজে সেজেছে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় বলেন, লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে নিজেদের পুরোদমে সঞ্জিবিত করে এখন অন্যরকম এক আবেশ ছড়াচ্ছে প্রকৃতি। এখানে তীর্থযাত্রী ও ট্যুরিস্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপে আমরা অনেক সুফল ফেয়েছি। পর্যটন স্পট যেগুলো রয়েছে সেখানে জনসমাগম না থাকায় এটা পরিবেশের জন্য একটা পজেটিভ। তবে সীতাকুণ্ডে আসা পর্যটক যদি একটু সচেতন হন, পরিবেশের বিধিনিষেধ তারা মেনে চলে সেখানে পরিবেশ দূষণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।