মৃত মাছসহ বিভিন্ন জলজপ্রাণী ভাসছে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে

হৃদয় দেবনাথ, শ্রীমঙ্গল ।।

মৃত মাছসহ বিভিন্ন জলজপ্রাণী ভাসছে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে
বিভিন্ন জাতের মাছ ও জলজপ্রাণী মরে ভেসে উঠেছে বড়লেখা উপজেলার মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের পানিতে। এগুলো থেকে জলপ্রপাতের পানির পাশাপাশি এলাকার বাতাসেও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
শনিবার (২ নভেম্বর) থেকে সেখানে জলজ প্রানীর মৃত্যু শুরু হয়েছে। মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের এই পানি ছড়া দিয়ে গিয়ে হাকালুকি হাওরে পড়ছে। পানি বিষাক্ত হলে হাওরেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। মারা যেতে পারে হাওরের হাজার হাজার মাছ।
মাছ মারা যাওয়ার খবর পেয়ে সোমবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে মৎস্য বিভাগের লোকজন মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করেছেন। এতে তারা (মৎস্য বিভাগ) পানির প্যারামিটার মোটামুটি স্বাভাবিক পেয়েছেন। তবে তাদের (মৎস্য বিভাগের) ধারণা, মাছ মারার জন্য কেউ পানিতে পাহাড়ি বিষ লতা প্রয়োগ করেছে। ফলে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে।
 
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে ভাসছে মৃত মাছসহ বিভিন্ন জলজপ্রাণী

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে ভাসছে মৃত মাছসহ বিভিন্ন জলজপ্রাণী

বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (২ নভেম্বর) সকালে মাধবকুন্ড এলাকায় পর্যটক, পর্যটক পুলিশসহ স্থানীয় লোকজন মাধবকুন্ডের পানিতে মাছসহ বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণী ভেসে ওঠতে দেখেন। মৃত মাছের কারণে মাধবকুন্ড পর্যটন এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। জলপ্রপাতের পানিতেও দুর্গন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে ছিল পাহাড়ি বামাস মাছ, কাঁকড়া, পুঁটি, ব্যাঙ, পাহাড়ি চিংড়ি, পিপলা, ছোট বাইন, সরপুঁটিসহ বিভিন্ন ধরনের জলজ কীটপতঙ্গ।
স্থানীয় লোকজনের ধারণা মৃত বামাসের বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর হতে পারে। স্থানীয় লোকজন ও মাধবকুন্ড ইকোপার্কের কর্মীরা মরা মাছ পানি থেকে তুলে সরিয়ে ফেলেন। গত শনিবার মারা যাওয়া মাছের সংখ্যা বেশি ছিল।
সোমবারও (৪ নভেম্বর) কিছু কাঁকড়া, বাইন, ব্যাঙ, পুঁটি, বিভিন্ন ধরনের জলজপ্রাণী পানিতে ভেসে থাকতে দেখা গেছে। তবে আগের চেয়ে এগুলো সংখ্যায় কমে এসেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
সোমবার মাধবকুন্ড জলপ্রাপাতে দেখা গেছে, স্থানীয় লোকজন কিছু মরা বামাস মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ পঁচা মাছ পানি থেকে তুলে ফেলছেন। যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায়। কিছু মাছসহ জলজ প্রাণী জলপ্রপাতের ছড়ার আশেপাশে ছড়িয়ে আছে। এগুলো থেকে জলপ্রপাতের পানির পাশাপাশি এলাকার বাতাসেও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
স্থানীয় লোকজনের ধারণা, পাহাড়ি ছড়ায় অনেক ধরনের মাছ থাকে। মাছ ধরার জন্য মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের উপরের অংশে কেউ বিষ প্রয়োগ করতে পারে। উপর থেকে গড়িয়ে পড়া ঝর্নার পানিতে দুর্গন্ধ রয়েছে। এই পানি ছড়া দিয়ে গিয়ে হাকালুকি হাওরে পড়ছে। পানি বিষাক্ত হলে হাওরেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। হাওরের মাছ মারা যেতে পারে।
 
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে ভাসছে মৃত মাছসহ বিভিন্ন জলজপ্রাণী

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে ভাসছে মৃত মাছসহ বিভিন্ন জলজপ্রাণী

মাধবকুন্ড জলপ্রপাত এলাকার ব্যবসায়ী কবির আহমদ জানান, শনিবার এসে পানির মধ্যে মরা মাছ ভাসতে দেখি। এই পানি হাকালুকি হাওরে যাবে। সেখানে মাছ মরবে। তখন সেখানে মাছ ধরবে। এই পানি অনেকে খেয়ে থাকে। বিষ দেওয়া হলে মানুষ ও পশুপাখির ক্ষতি হবে।
মাধবকুন্ড ইকোপার্কের কর্মী সামির বলেন, ‘গত শনিবার সকালে এসে দেখছি মাছ মরা। পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছিল। তাই মাছ তুলে ফেলেছি। বেশ কয়েকটা মরা বামাস মাছ তুলেছি। কাঁকড়াসহ বিভিন্ন ধরনের মাছও ছিল। বিষ দেওয়া হলে; জগন্য কাজ করেছে।’
বড়লেখা উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কুলাউড়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘খবর পাওয়ার পর পানির কোয়ালিটি পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে পানির কোয়ালিটি প্যারামিটার মোটামুটি স্বাভাবিক পাওয়া গেছে। আমাদের ধারণা পাহাড়ি বিষ লতা কেউ পানিতে দিয়েছে। যার কারনে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে পানিতে ওষুধ প্রয়োগের ব্যবস্থা করছি। আশা করছি ওষুধ দেওয়ার পরে পানির বিষাক্ততার প্রভাব কমে যাবে।’
বন বিভাগের সহযোগী রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন জানান, ‘মাছ মরার ঘটনা শুনে গিয়ে দেখেছি। কারণ জানতে অনুসন্ধান চলছে।’