মহামায়ার পর্যটন সুবিধা বাড়াতে প্রয়োজন পরিকল্পিত উদ্যোগ

মহামায়ার পর্যটন সুবিধা বাড়াতে প্রয়োজন পরিকল্পিত উদ্যোগ

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই ।।

প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের নয় বছর পার হলেও এখনো আশানুরূপ বাড়েনি সম্ভাবনাময় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম লেক মহামায়ার পর্যটন সুবিধা। লেকটি এলাকার সেচ কার্যে যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা রাখলেও প্রাকৃতিক সমৃদ্ধতার পাশাপশি কৃত্রিম সংযোজনে সমন্বয়হীনতার অভাব পরিলক্ষিত। তবে নৌকা, প্রবেশ পথ, বাউন্ডারী, পার্কিং, কয়েকটা ছাউনি, বন বিভাগ কর্তৃক একটি কটেজ, মৎস্য চাষ, অভয়ারণ্যের চেষ্টা ইত্যাদি কিছু কার্যক্রম থাকলেও উদ্বোধনকাল থেকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্যাবল কার, দর্শনার্থীদের আবাসিক সুবিধা, মানসম্মত শৌচাগারসহ অনেক পরিকল্পনাই এখনো কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে বন বিভাগ কর্তৃক অভয়ারণ্যকে আরো সমৃদ্ধ করা যেমন জরুরি, তেমনি ইকোপার্ক নামকরণের সার্থকতায় অবকাঠামোতে আরো পরিবর্তন প্রয়োজন। নামেমাত্র কয়েকটি ছাতা নির্মাণ করলেও এখনো দর্শনার্থীদের বসার বা বিনোদনের তেমন সুবিধা সৃষ্টি হয়নি। ক্যাবল কার নির্মাণ, লাইভ ফিস মিউজিয়াম, শব্দহীন উন্নতমানের নৌকার সংযোজন ইত্যাদি বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এছাড়া পিকনিক দলের জন্য ভিন্ন ভিন্ন জোন সৃষ্টি করার বিষয়ে বন বিভাগের ধীরগতি আশা হত করেছে দর্শনার্থীদের।
চট্টগ্রাম শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন মীরসরাই উপজেলার ৮ নম্বর দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘী বাজার থেকে এক কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে এর অবস্থান। এই এলাকার জলাবদ্ধতা ও পাহাড়ি ঢল নিরসন এবং শুষ্ক মৌসুমে কৃষিখাতে সেচ সুবিধার লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯৯৯ সালে মহামায়া খালের ওপর স্লুইস গেট স্থাপন করে। ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহামায়া সেচ প্রকল্প উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং মৎস্য বিভাগ পর্যায়ক্রমে এই হ্রদে প্রায় ৩০ টন পোনা অবমুক্ত করে। বর্তমানে হ্রদে প্রচুর মাছ থাকলেও রাতের অন্ধকারে চুরির অভিযোগ উঠেছে। মৎস বিভাগের এ নিয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতেও দেখা যায়নি।
দর্শনার্থীরা নানা প্রজাতির উদ্ভিদ, অতিথি ও দেশিয় পাখি, স্তন্যপ্রায়ী প্রাণী, উভচর প্রাণীসহ অসংখ্য স্থলজ ও জলজ প্রাণী এবং জীববৈচিত্র্য বাড়ানোর দাবি জানান।
তাদের অভিযোগ, এখানে দর্শনার্থীদের জন্য কোনো নির্দেশনাসহ স্বেচ্ছাসেবক টিম নেই। ময়লা আবর্জনা যত্রতত্র ফেলা হ্‌েচছ। প্লাস্টিকের বর্জ্য, পলিথিন চিপস-চানাচুরের প্যাকেট ফেলে লেকের পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। এছাড়া উচ্চ শব্দের ইঞ্জিন চালিত নৌকা, স্পিডবোট নিয়ে প্রবেশ করছেন পর্যটকরা। সম্প্রতি স্বল্প শব্দের বোট দেখা গেলেও তা নামে মাত্র কয়েকটি। পাশাপাশি অনেককে মাইক বাজিয়ে পিকনিক করতে দেখা গেছে। তবে পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, শীঘ্রই এসব শব্দ দূষণ বন্ধ করা দরকার। কারণ এতে জলজ-স্থলজ প্রাণির ক্ষতি হচ্ছে।
দর্শনার্থী প্রফেসর রবিউল হাসান বলেন, বর্তমান সরকারের সফল পদক্ষেপের মধ্যে মহামায়া বাস্তবায়নএকটি সার্থক উদ্যোগ। কিন্তু এর ব্যবস্থাপনা ও স্বপ্ন অনুযায়ী বাস্তবায়ন গতিতে আমরা হতাশ। এই বিষয়ে বন বিভাগের মীরসরাই রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে এই লেককে আধুনিক ও সময়োপযোগী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অভয়ারণ্য সৃষ্টি সময় সাপেক্ষ বিষয়। সেই নিরিখেই কাজ চলছে। মীরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল এই এলাকার কয়েকটি ইউনিয়নে সেচ কার্যক্রমে কৃষিতে অগ্রগতি, সেক্ষেত্রে আমরা সফল হয়েছি। অনেকের বাড়ি বন্যার সময় ডুবে যেত এখন আর ডুবছে না। এই দর্শনীয় স্থানকে ভবিষ্যতে আরো সুন্দর করতে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। ক্যাবল কার ও ফিস মিউজিয়ামের বিষয়ে শীঘ্রই কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।