পেঁয়াজের বাজার অস্থির, ছয় দেশ থেকে ৩৯ হাজার ৯১৩ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি

পেঁয়াজের বাজার অস্থির, ছয় দেশ থেকে ৩৯ হাজার ৯১৩ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি
পেঁয়াজের বাজার অস্থির, ছয় দেশ থেকে ৩৯ হাজার ৯১৩ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

পেঁয়াজের বাজার এক বছর পর আবার অস্থির । ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর থেকে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণে গিয়ে ঠেকেছে। একই অবস্থা খুচরা বাজারেও। তবে আশার কথা হচ্ছে, ইতোমধ্যে মিয়ানমার, চীন, মিশর, পাকিস্তান, তুরস্ক ও নেদারল্যান্ডস থেকে ৩৯ হাজার ৯১৩ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন আমদানিকারকরা। এর মধ্যে শুধুমাত্র গতকাল একদিনেই এসব দেশ থেকে ৬৮টি আমদানি অনুমতিপত্রের (আইপি) বিপরীতে ৩০ হাজার ৮১২ টন পেঁয়াজ আনছেন ২৫ আমদানিকারক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের (প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টিন স্টেশন) উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল।

তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি আঁচ করতে পেরে আমদানিকারকরা গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে আইপি নেওয়া শুরু করেন। সেই থেকে আজ (গতকাল) পর্যন্ত ১০১টি আইপি ইস্যু হয়েছে। বিপরীতে ৬টি দেশ থেকে ৩৯ হাজার ৯১৩ টন পেঁয়াজ আনার অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে চীন থেকে আসবে ৮ হাজার ৭৮০ টন, মিয়ানমার থেকে ৯ হাজার ৫০২ টন, পাকিস্তান থেকে ৯ হাজার ১৭৯ টন, মিশর থেকে ১০ হাজার ৩৫৩ টন, তুরস্ক থেকে ১ হাজার ৮০০ টন এবং নেদারল্যান্ডস থেকে ৮০০ টন পেঁয়াজ আসবে।

এদিকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সকালের দিকে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কম থাকলেও বিকাল গড়াতেই কেজিতে দাম ১০ টাকা বেড়ে গিয়ে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। যদিও খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। কাজির দেউড়ি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতায় অস্বস্তিতে ক্রেতারা।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, আজ (গতকাল) খাতুনগঞ্জের বাজারে এক ট্রাক পেঁয়াজও আসেনি। তবে বেচাবিক্রি বেড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত আড়তদারদের কাছে পেঁয়াজ মজুদ আছে। ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় গত বছরের মতো পেঁয়াজের বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। সংকট মোকাবেলায় ব্যবসায়ীরা আগের মতো মিয়ানমার, চীন, মিশর, পাকিস্তান ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন। কিন্তু এসব পেঁয়াজ দেশের বাজারে আসতে ন্যূনতম ১৫ দিন থেকে এক মাস সময় লাগবে। আবার আমাদের সংকটের বিষয়টি বুঝতে পেরে এসব পেঁয়াজের বুকিং রেটও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, ভারতের স্থলবন্দরে ১৭০ ট্রাক পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক অপেক্ষমাণ আছে। ভারতের ব্যবসায়ীরা এলসি (ঋণপত্র) সংশোধন ছাড়া এসব পেঁয়াজ আমাদের দেশে রপ্তানি করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সর্বশেষ ভারতীয় পেঁয়াজের বুকিং রেট ছিল ৪৬০ ডলার। এখন তারা সেগুলো ৭৫০ ডলার করে চান। এগুলো হয়ত একটা সমঝোতার ভিত্তিতে রপ্তানি করবে।

চাক্তাইয়ের আফরা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. আলাউদ্দিন বলেন, আমাদের দেশের পেঁয়াজের বাজার ভারতের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। আমাদের দেশে যখন কৃষকরা পেঁয়াজ ঘরে তুলে তখন ভারতীয় পেঁয়াজের দাম পড়ে ১৫-১৬ টাকা। তখন দেশি পেঁয়াজ চাষিদের লোকসান গুনতে হয়। লোকসানে অনেকে পেঁয়াজ চাষ করা ছেড়ে দিয়েছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা আবারও হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা যাবে, তত দ্রুত বাজার স্থিতিশীল হবে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়ে চিঠি ইস্যু করে। চিঠিতে বলা হয়, সব ধরনের পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ এবং এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে। এর আগে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। সেই সময় দুই দফায় পেঁয়াজের দাম দ্বি-শতক পেরিয়ে যায়। পরবর্তীতে পেঁয়াজ আমদানিকারকরা মিয়ানমার, চীন, মিশর, পাকিস্তান ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন।