প্রধানমন্ত্রী'র অঙ্গিকারে যুক্তরাষ্ট্রের আস্থা

প্রধানমন্ত্রী'র অঙ্গিকারে যুক্তরাষ্ট্রের আস্থা
প্রধানমন্ত্রী'র অঙ্গিকারে যুক্তরাষ্ট্রের আস্থা

বিশেষ প্রতিবেদক , ঢাকা ।।

'অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন' - প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনর্বার এ অঙ্গিকার করেছেন তাতে আস্থা প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন মার্কিন প্রতিনিধিদল। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিনিধিদলের সাক্ষাতে নির্বাচন, গণতন্ত্র, সুশীল সমাজ ও  সংবাদ মাধ্যমের  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার ও সমাবেশের স্বাধীনতা বিষয়ে আলাপ হয়।

সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ‘মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সব সময়ই দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য লড়াই করেছি। এবং ইতিমধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করেছি। আমরা সব সময়ই জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকারের জন্য লড়াই করেছি।’

প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী গত ২০১৩-১৫ সালে বিএনপি ও তার মিত্রদের নৃশংসতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অগ্নিসংযোগের কথা স্মরণ করেন। ওই সময়ে ওইসব ঘটনায় ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ওপর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা উল্লেখ করেন। ওই ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষা করেন।

শ্রম ইস্যুতে প্রতিনিধিদলকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘শ্রমিকদের মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে শিল্পমালিকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন।’ 

রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রতিনিধিদলকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে দেশের দুটি ভিন্ন স্থানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু এখন শিবিরগুলোতে মানব পাচার ও অসামাজিক কার্যকলাপ হচ্ছে, যা দেশের নিরাপত্তার জন্য খুবই উদ্বেগজনক।’

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ ইস্যুতে ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানিয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা মানবিক সহায়তা থেকে শুরু করে লিঙ্গ সমতাকার্যক্রম সমন্বয় করা-সহ যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যকার শক্তিশালী ও ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, সুশীল সমাজ ও  সংবাদ মাধ্যমের  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার ও সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখার ব্যাপারে তারা আলোচনা করেন।’

এছাড়াও আন্ডার সেক্রেটারি এবং প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদারতা এবং তাদের প্রয়োজন মেটাতে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়েও আলোচনা করেন। যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদেরকে আশ্রয়দানকারী বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলের স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে ২০১৭ সাল থেকে ২১ হাজার কোটি টাকারও বেশি (২.১ বিলিয়ন ডলার) মানবিক সহায়তা দিতে পেরে গর্বিত। এছাড়াও আন্ডার সেক্রেটারি বার্মায় অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয়দানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠীদের জন্য প্রায় ৬১০ কোটি টাকার সহায়তাসহ বার্মা ও বাংলাদেশে চলমান কার্যক্রমগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেয়া অতিরিক্ত ৭৪০ কোটি টাকারও বেশি (৭৪ মিলিয়ন ডলার) মানবিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি তুলে ধরেন। যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জীবিকার সুযোগ সম্প্রসারণের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের বৃহত্তর পরিসরে সহায়তা করতে বর্তমান ও সম্ভাব্য দাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র শরণার্থী শিবিরগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। সঙ্কটের অবসান ঘটাতে এবং রোহিঙ্গাদের সবকিছু জানিয়ে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই উপায়ে নিজ মাতৃভূমিতে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্র বার্মার সামরিক শাসনের উপর চাপ বজায় রেখেছে।

জানা গেছে, সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ও ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস উপস্থিত ছিলেন।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;