বিএনপির আর সুযোগ নেই,যারা সংসদে আছে তাদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার হতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

বিএনপির আর সুযোগ নেই,যারা সংসদে আছে তাদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার হতে পারে : প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির আর সুযোগ নেই,যারা সংসদে আছে তাদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার হতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠন করা হলেও সংসদে না থাকায় বিএনপির সেই সরকারে থাকার সুযোগ নেই বলে । তিনি বলেন, ‘আমরা এটুকু উদারতা দেখাতে পারি, পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য যারা আছে, তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা পোষণ করে নির্বাচনকালীন সময়ে তারা সরকারে আসতে চায়, সেটা আমাদের মধ্যে আছে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এমনকি ২০১৪ সালে খালেদা জিয়াকেও আমরা আহ্বান করেছিলাম, তারা তো আসেনি। এখন তো তারা নাইও পার্লামেন্টে, কাজেই ওটা নিয়ে চিন্তারও কিছু নেই।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘ওয়েস্টমিনস্টার অব ডেমোক্রেসি আমরা ফলো করি। দেখুন, ব্রিটেনে কীভাবে ইলেকশন হয়, তারা কীভাবে করে, আমরা সেভাবেই করব।’

গতকাল সোমবার বিকেলে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সদ্যসমাপ্ত জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

নিষেধাজ্ঞা যারা দেবে, তাদের কাছ থেকে কিচ্ছু কিনব না 

বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাবের ওপর দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংকশনের (নিষেধাজ্ঞা) বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। যারা আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে তাদের কাছ থেকে কিছু কেনাকাটা করব না। ভয়ের কিছু নেই, আমাদের সব জমি আবাদ করব, আমরা অন্যের ওপর নির্ভর করব না।’

এর আগে ত্রিদেশীয় সফর শেষে গত শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ৬০তম কনভেনশনে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি আরেকটি সিদ্ধান্ত নিতে বলেছি। স্যাংকশন দেওয়ার একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যাদের দিয়ে সন্ত্রাস দমন করি তাদের ওপর স্যাংশন দেওয়া হচ্ছে! আমি বলে দিয়েছি, যে স্যাংকশন দেবে তাদের কাছ থেকে আমি কিছুই কিনব না। আমি আর কী করব! বাবা-মা-ভাইবোন সবাইকে মেরে ফেলেছে। আমার তো হারানোর কিছু নেই। আমার দেশটিকে আমি এগিয়ে নিতে চাই।’

একদিকে ডলার সংকট আবার স্যাংকশনসহ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভীতি রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘ভয়ের কিছু নেই। আমাদের সব জমি আবাদ করব, আমরা অন্যের ওপর নির্ভর করব না। আমরা নিজেরটা দিয়ে চলব। বিশ্বব্যাপী খাদ্যের অভাব। উন্নয়নশীল না উন্নত দেশেও খাদ্যের সমস্যা। একটার বেশি টমেটো কেনা যাবে না, ছয়টার বেশি ডিম কেনা যাবে না। রোজায় তো কোনো হাহাকার শোনা যায়নি। কেউ কি আসছে আপনাদের কাছে ভিক্ষা চাইতে? আসেনি। সবাই ইফতারের জন্য এগিয়ে এসেছে। আমাদের দল ও নেতাকর্মীদের এজন্য ধন্যবাদ জানাই।’

র‌্যাব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের কী কারণে স্যাংকশন (নিষেধাজ্ঞা) দেবে? যাদের নিয়ে (র‌্যাব) আমরা সন্ত্রাস দমন করলাম, জঙ্গিবাদ দমন করলাম। হলি আর্টিজানের পর বাংলাদেশে আর তেমন কোনো বড় ঘটনা ঘটেনি। কারণ আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গোয়েন্দা নজরদারি এবং আরও কিছু ভালো কাজ করেছে। যার ফলে আর কিছু তেমন হয়নি। এরপরও স্যাংকশন কেন, সেটাই আমাদের প্রশ্ন।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়কে, কেনাকাটার বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে বলে দিয়েছি। এখন থেকে আমাদের শর্ত থাকবে, যারা আমাদের স্যাংকশন দেবে তাদের থেকে আমরা কোনো কিছু কেনাকাটা করব না। পরিষ্কার কথা।’

‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র‌্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

রিজার্ভ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই 

রিজার্ভ নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিন মাসের খাদ্য কেনার মতো ডলার যেন আমাদের হাতে থাকে, সেটা নিয়েই আমাদের চিন্তা। রিজার্ভ নিয়ে চিন্তা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের রিজার্ভ এখনো যা আছে তাতে অন্তত এটুকু বলতে পারি, আমাদের এমন কোনো সংকট এভাবে নেই। তবে আমরা সবসময় রিজার্ভ ধরে রাখারই চেষ্টা করি।’

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোনো ভয় নেই 

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সরকার কোনো ভয়ে নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন আসছে বলে ভয় পাব? কেন ভয় পাব? আমি জনগণের জন্য কাজ করেছি, জনগণ যদি ভোট দেয় আছি, না দিলে নাই।’

বিএনপির আন্দোলন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা মাইক লাগিয়ে আন্দোলন করেই যাচ্ছে। সরকার হটাবে। আমরা তো তাদের কিছু বলছি না। আমরা যখন অপজিশনে ছিলাম আমাদের কি নামতে দিয়েছে? গ্রেনেড হামলা করে হত্যা করার চেষ্টা করেছে। আমাদের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারছে। নির্বাচন ঠেকাতে ৫০০ স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে। সাড়ে তিন হাজার লোককে আগুনে পোড়ানো হয়েছে। ৩ হাজার ৮০০ গাড়ি, ২৭টি রেল, ৯টি লঞ্চ, ৭০টি সরকারি অফিস পুড়িয়েছে। তারা তো জ¦ালা-পোড়াওই করে গেছে।’

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলে দিয়েছি, আন্দোলন করুক কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু জ্বালায়-পোড়াও যদি করে, কোনো মানুষকে যদি আবার এরকম করে পোড়ায়, তাকে ছাড়ব না। মানুষের ক্ষতি করতে আর দেব না।’

আলোচনায় কীসের জন্য ডাকতে যাব 

দেশে আন্দোলনরত বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আলোচনায় কীসের জন্য ডাকতে যাব? তাদের ডিমান্ডই তো ঠিক নেই।’

যুক্তরাষ্ট্র সফরে নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখার সময় বাইরে অনেক লোক বিক্ষোভ করছিল, তখন তাদের ডেকে কথা বলতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার স্পিস রাইটারের এ বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রশ্ন করা হয়, এটি ঠিক কি না? জবাবে মাথা নেড়ে হ্যাঁ-সূচক অভিব্যক্তি জানান প্রধানমন্ত্রী। এভাবে দেশে যারা রোদের মধ্যে কষ্ট করে আন্দোলন করছেন তাদের সঙ্গে সংলাপের বিষয় প্রশ্ন করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে যারা ছিলেন তখন বৃষ্টি নেমেছিল। আমি ভাবলাম বাংলাদেশের প্রবাসী তারা বৃষ্টিতে ভিজবে তার চেয়ে তাদের ডাকি, কী বলতে চায় শুনি। এখন ঢাকায় বা বাংলাদেশে যারা, তাদের যদি বৃষ্টিতে ভেজা শখের মধ্যে থাকে তারা থাকুক।’

আগামী নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণাই হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের আগামী নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণাই হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। যদিও এটা আগে বলে দিয়েছি, তবে এটাই হবে আমাদের মেইন, অর্থাৎ বাংলাদেশকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। বাংলাদেশে কোনো দারিদ্র্য থাকবে না, দেশের সব মানুষ উন্নত জীবন পাবে।”

বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারত্বে উন্নীত হয়েছে 

বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারত্বে’ উন্নীত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে দ্রুততম সময়ে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি সম্পাদন, আঞ্চলিক যোগাযোগ জোরদারকরণ, অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়ন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, জাপান ওভারসিজ কো-অপারেশন ভলান্টিয়ার প্রকল্প পুনরায় চালু করা, বাণিজ্য বৃদ্ধি, বাংলাদেশের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপানি বিনিয়োগ, মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল, ঢাকা-টোকিও সরাসরি বিমান চলাচল বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

জাপানে জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাপানে জনশক্তি রপ্তানি আমরা করতাম না, করি না। আর জাপান চায় দক্ষ জনশক্তি ও শিক্ষিত। আরেকটা বিষয় হচ্ছে জাপানের ভাষা। জাপানে কাজ করতে হলে জাপানি ভাষা শিখতে হবে। আমাদের যারা জাপানি ভাষা শিখবে তারাই যেতে পারবে। আর যে কাজে যাবে তার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ট্রেনিং নিতে হবে। তবেই জাপানে যেতে পারবে।’

মোখার আঘাতে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমি নিজে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়েছি, বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা উপকূলীয় ১৩টি জেলায় ৭ হাজার ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছিলাম। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সাড়ে সাত লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।’

বিশ্বের কারও যদি পেইন্টিং প্রয়োজন হয়, আমাদের কাছে চাইতে পারবেন 

শেখ হাসিনা তার যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের কাছে পদ্মা বহুমুখী সেতুর একটি পেইন্টিং তুলে দেওয়ার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাড়া পড়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পেইন্টিংটা আমরা এ জন্য নিয়ে গেছি যে, আমাদের দেশে যে খুব ভালো পেইন্টার আছে, তারা খুব চমৎকার পেইটিং করতে পারেন সেটা জানানোর জন্য। বিশ্বের কারও যদি পেইন্টিং প্রয়োজন হয়, আমাদের কাছে চাইতে পারবেন। আর পেইটিংয়ের বিষয়বস্তুটা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে প্রিয় জায়গাটা পদ্মা সেতু। এটাই, আর কিছু না সেখানে।’

গত ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর ত্রিদেশীয় (জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য) সফর শুরু হয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে ওইদিন সফরের প্রথম ধাপে টোকিও যান তিনি। চার দিনের টোকিও সফর শেষে তিনি দ্বিতীয় ধাপে ২৮ এপ্রিল ওয়াশিংটন ডিসিতে যান। দেশটিতে প্রায় এক সপ্তাহের সফর শেষে তৃতীয় ধাপে ৪ মে লন্ডনে পৌঁছান সরকারপ্রধান। যুক্তরাজ্য সফরকালে রাজা তৃতীয় চার্লস এবং তার স্ত্রী রানী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেন শেখ হাসিনা। লন্ডন থেকে দেশে ফেরেন তিনি ৯ মে । 

খালেদ / পোস্টকার্ড ;