নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে দিল্লি অগ্নিগর্ভ, সাম্প্রদায়িক হামলায় নিহত ৩৪

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে দিল্লি অগ্নিগর্ভ, সাম্প্রদায়িক হামলায় নিহত ৩৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে চলছে সংঘাত। সিএএ ঘিরে অগ্নিগর্ভ দিল্লি। মুসলিমদের ওপর উগ্র  হিন্দুত্ববাদীদের হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েক শ মুসলিম।

বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ এতে উদ্বেগ জানিয়েছে। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। নিহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

দিল্লি এখন থমথমে এক মৃত্যুপুরী। রাস্তাঘাট ফাঁকা। গাড়ি চলাচল সীমিত। মানুষজন অত্যন্ত আতঙ্কে সময় পার করছেন।

ভারতের অন্যতম শীর্ষ দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, ‘আহতের সংখ্যা ২০০ ছুঁইছুঁই। অনেকেরই মাথায় গুরুতর চোট। আহতদের অন্তত ৪৬ জনের শরীরে বুলেটের ক্ষত মিলেছে। আর একটি উদ্বেগজনক বিষয়, মুস্তাফাবাদ থেকে  আজ বেশ কিছু আহত এসেছেন হাসপাতালে। তাঁদের অনেকের চোখে অ্যাসিড ঢালা হয়েছে। দৃষ্টি হারিয়েছেন চার জন। খুরশিদ নামে এক জনের দু’চোখই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তেগ বাহাদুর হাসপাতাল থেকে লোকনায়ক জয়প্রকাশ হাসপাতালে আসার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সও পাননি তিনি। গিয়েছেন রিকশায়। দুই চোখ-সহ পুরো মুখ ঝলসে গিয়েছে ওয়কিলের।’

আনন্দবাজার আরও লিখেছে, ‘জাফরাবাদ-মৌজপুরে এখন শ্মশানের শান্তি। ফাঁকা রাস্তা জুড়ে পাথর, ইট, ভাঙা কাচ, ভাঙা লোহার রড। ভিতরের গলি থেকে পাকিয়ে পাকিয়ে উঠছে কালো ধোঁয়া। মৌজপুরের গলির একটি দোকানে আগুন নেভেনি। দোকানের মালিক কোন ধর্মের, তা দেখেই আগুন লাগানো হয়েছে। এ পাড়ায় ধর্মের জোরে যাদের দোকান বেঁচে গিয়েছে, অন্য গলিতে সেই ধর্মের জেরেই দোকান পুড়েছে। জাফরাবাদের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘ভিতরের মহল্লায় অশান্তি চলছে। কোথায় কত জনের দেহ পড়ে রয়েছে, কেউ জানে না। পুলিশ এখনও ঢুকতে পারেনি ভিতরে।’

পরিস্থিতি কতোটা ভয়াবহ সে বর্ণনাও পাওয়া গেল আনন্দবাজারের খবরে। তারা লিখেছে, ‘কিন্তু ‘শান্ত’ মানে শান্তি নয়। নিরপত্তাও নয়। কাল দুপুরেই দেখা গেল, মুস্তাফাবাদে একমাত্র মেয়ের হাত ধরে প্রাণভয়ে মহল্লা ছাড়ছেন এক মহিলা। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই তাঁর মুখে। পিছনে ফেজ টুপি, কুর্তা-পাজামায় স্বামী। মাথায়-পিঠে ব্যাগ, লেপ-কম্বল। বাড়ি-দোকান পুড়েছে। পথে নেমেছেন নিরাপদ কোনও আশ্রয়ের খোঁজে।’

দিল্লিতে নতুন করে আরও ১০ জায়গাসহ বিভিন্ন স্থানে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। কারফিউ জারি করা হয়েছে মৌজপুর, জাফরাবাদ, কারওয়ালনগরে ও চাঁদবাগসহ বেশ কয়েকটি এলাকায়। এসব এলাকায় দাঙ্গাকারীদের ‘শুট অ্যাট সাইট তথা দেখা মাত্র গুলির’ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।