এখন আর জনগণ পাত্তা পাচ্ছেনা , বিদেশিদের মন পাওয়া নিয়ে ব্যস্ত!

এখন আর জনগণ পাত্তা পাচ্ছেনা , বিদেশিদের মন পাওয়া নিয়ে ব্যস্ত!
এখন আর জনগণ পাত্তা পাচ্ছেনা , বিদেশিদের মন পাওয়া নিয়ে ব্যস্ত!

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

সরকারের ওপর আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি চাপ দেখা যাচ্ছে বিদেশিদের। ঘন ঘন আসছে বিদেশি প্রতিনিধিদল। বিশেষ করে এ তৎপরতার সামনের সারিতে আছে যুক্তরাষ্ট্র।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচন বিষয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত সময় পার করছে। ফলে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত জনগণের কাছে যাওয়ার রাজনৈতিক তৎপরতা নেই। রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনী এলাকার প্রার্থীকে ঘিরে মানুষের মধ্যেও যে উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকার কথা, সেটা একেবারেই অনুপস্থিত।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের প্রত্যাশা ও চাপ, নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সমমনা জোট এবং বিরোধীপক্ষের বিদেশিদের কাছে ধরনা দেওয়ায় দেশের নির্বাচনী

সংস্কৃতির পরিবর্তন হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব এমন পর্যায়ে গেছে যে, মনে হচ্ছে বিদেশিরাই নির্বাচনের মূল অংশীজন। ফলে দেশের জনগণের মধ্যেও নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ নেই। সবাই তাকিয়ে আছে বিদেশিদের দিকে।

বিশ্লেষকদের অভিমত, এবার সবচেয়ে বড় চাপ হলো যুক্তরাষ্ট্রের। সংসদের বাইরে দেশের বড় বিরোধী দলও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নির্বাচন নিয়ে সবসময় তাদের দাবিদাওয়া তুলে ধরছে। বড় কর্মসূচি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রতিনিধিদলের সফরের সময়। তারা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অর্থাৎ এক দফা দাবিতে মাঠে নামছে আজ। যখন যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর শুরু করছে। এ ছাড়া গত শনিবার থেকে সফরে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব পক্ষ ব্যস্ত বিদেশি তথা যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো চাওয়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে। আবার বিদেশিদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নিয়ে ব্যস্ত রাজনৈতিক পক্ষগুলো।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রায় অভিন্ন মত দিয়ে বলেন, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ প্রতিনিধিদলের সফর এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা এবং বৈঠক নিয়েই ব্যস্ত দলগুলো। ফলে দেশে মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী উৎসবের কোনো আমেজ নেই।

ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ১৫ জুলাই রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে নির্বাচন ও নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বক্তব্য ও প্রস্তাব জানা যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুর সঙ্গে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও অন্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা হবে। এরপর নির্বাচন পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা করা যাবে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম বলেন, ‘দেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজ করছে তা মোটেও ভালো নয়। এখন সমঝোতা দরকার। না হলে পরিস্থিতি সহিংস হয়ে উঠবে। আর এর জন্য জনগণকে দুর্ভোগে পড়তে হবে।’ তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন নিয়ে নিজেরা সমঝোতা করতে পারেনি। এটা দেউলিয়াত্ব ছাড়া কিছু নয়। এখানে জনগণের যেন কোনো মূল্য নেই। সবাই বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে আছে। দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝেতা দরকার। দেশের সাধারণ জনগণও যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও বড় দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। এটা তো আমাদের জন্য মোটেই ভালো খবর নয়।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘বিএনপি কথায় কথায় বিদেশিদের কাছে নালিশ করে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। মাঠপর্যায়ে তাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মতো অবস্থান নেই। তাই তারা ষড়যন্ত্র করছে। বিদেশিদের যুক্ত করছে।’ তিনি বলেন, ‘ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করব। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করা আওয়ামী লীগের সব সময়ের প্রতিশ্রুতি।’

তবে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সংসদ সদস্য ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছেন। জনসংযোগ করছেন। কিন্তু নির্বাচনী যে আমেজ, তা একেবারেই নেই। আবার প্রার্থীরাও তাকিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র বা ইইউর দিকে, তারা কী বলে, কী করে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘গত কয়েকটি নির্বাচন থেকেই বিদেশিদের নাক গলানোর বিষয়টি দেখা যাচ্ছে। তবে এবার অনেক বেশি। এর জন্য আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই দায়ী। তাদের কারণেই বিদেশিরা নাক গলানোর সুযোগ পায়। নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করতে না পারলে এ পরিস্থিতি আরও বাড়বে।’ তিনি বলেন, ‘তাছাড়া এখন ভূরাজনৈতিক মেরূকরণেও বাংলাদেশের গুরুত্ব একটু অন্যরকম। প্রভাবশালী দেশগুলো এ অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও কূটনীতি বিশেষজ্ঞ ওয়ালি উর রহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবার বেশি আগ্রহী। আর বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল তাদের কাছে যাচ্ছে। এটাও বড় সুযোগ। কারণ বাইডেন প্রশাসন আফ্রিকা ও অন্যান্য অঞ্চলের মতো এশিয়াতেও তাদের গণতন্ত্রের চর্চা করতে চায়। তাছাড়া ভূরাজনৈতিকভাবেও তাদের অনেক আগ্রহ আছে। বিদেশিদের কাছে নালিশ করলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ তো হবেই। ফলে জনগণও বিদেশি প্রতিনিধিদের দিকেই তাকিয়ে আছে।’

গত ২৪ মে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। তারও আগে দেশটি র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বলছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কোনো সেনা ও পুলিশকে শান্তিরক্ষা মিশনে স্থান দেওয়া না হয়। এসব নিষেধাজ্ঞা ও হুঁশিয়ারির পর থেকে নতুন মাত্রায় রাজনীতির মাঠ সরগরম হতে শুরু করে।

বিএনপি বলছে, ক্ষমতাসীনদের লক্ষ্য করে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর আওয়ামী লীগ বলছে, সরকার নয়, বিএনপিকে টার্গেট করেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভিসানীতি ঘোষণা করেছে।

এদিকে বাংলাদেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্রসহ নানা ইস্যুতে প্রশ্ন তুলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিবৃতি দিয়েছে। কড়া ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে চিঠি দিয়েছেন দেশটির ১২ জন কংগ্রেসম্যান। এসবের প্রতিক্রিয়াও এসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে। তারা দফায় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেছে। -দেশ রূপান্তর

খালেদ / পোস্টকার্ড ;