গর্তে পড়ে গাড়ি বিকল, কাদাপানিতে নেমে পোর্ট কানেকটিং রোডে যাত্রী-চালক গাড়ি ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন

গর্তে পড়ে গাড়ি বিকল, কাদাপানিতে নেমে পোর্ট কানেকটিং রোডে যাত্রী-চালক গাড়ি ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।। 

সড়কে রয়েছে বড় বড় গর্ত আর কাদাপানি মাড়িয়ে চলতে হচ্ছে ছোট-বড় যানবাহনকে।হঠাৎ গাড়ি বিকল হয়ে গেছে গর্তে পড়ে। কি আর করা ? গাড়ী থেকে কাদাপানিতে নেমে যাত্রী-চালক গাড়ি ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন সেটা। এছাড়া আর কোন উপায় নেই । 
গণপরিবহনগুলো চলে হেলেদুলে। ঝাঁকুনিতে সড়কে নয় সমুদ্রে রয়েছেন মনে করে ভুল হতে পারে যাত্রীদের। কারো কারো কাছে ব্যথায় অসহ্যও লাগে।এম্বুল্যান্সে থাকা রোগীদের কষ্টের কথা সে হয়তো বুঝতে পারেনা ।
শুধু যে চালক, যাত্রীদের কষ্ট, দুর্ভোগ সইতে হচ্ছে তা নয়। এ রুটের যাত্রীবাহী, পণ্যবাহী সব ধরনের গাড়িরই যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। সড়কটি এড়িয়ে চলার প্রবণতা বাড়ায় যাত্রী কমছে গণপরিবহনেও। বাংলানিউজ
জনদুর্ভোগের এ চিত্রটি বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ পোর্ট কানেকটিং সড়কের। বর্ষা থাক বা না থাক জনদুর্ভোগ কমে না এ সড়ক ব্যবহারকারীদের। আগ্রাবাদ, হালিশহর, রামপুর এলাকার মানুষের কাছে এটি এখন ‘চট্টগ্রামের বড় দুঃখ’।
এ সড়কের নিয়মিত যাত্রী আবদুল কাদের বলেন, “বছরের পর বছর দেখছি সড়কটিতে কাজ চলছে। সেই কাজ আর শেষ হয় না। তাই জনদুর্ভোগও আর কমে না। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এখানকার মানুষ ওই সড়কে যেতে চায় না।”
তিনি বলেন, “শুষ্ক মৌসুমে এ সড়কে মাত্রাতিরিক্ত ধুলোবালি, বর্ষা মৌসুমে খানা-খন্দ কাদাপানিতে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ।”
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, “পোর্ট কানেকটিং রোডের উন্নয়নকাজ শেষ না হওয়ায় খানা-খন্দে পড়ে আমাদের বাস ও হিউম্যান হলারের যন্ত্রাংশ প্রতিদিনই নষ্ট হচ্ছে। অনেক গাড়ি অকেজো হয়ে গেছে। দুর্ভোগের কারণে এ রুটে যাত্রীসংখ্যাও কমে গেছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নতুন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ সড়কটির উন্নয়নকাজ দ্রুত শেষ করতে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।”
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ বলেন, “জাইকার প্রকল্পের অধীনে সড়কটিতে আমূল উন্নয়নকাজ চলছে। পুরনো সড়কটি খুঁড়ে নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে। বটম, খোয়া, টাইপ-১, মেকাডাম এভাবে বিভিন্ন লেয়ারে কাজ হচ্ছে। কার্পেটিং হবে ৯ ইঞ্চি। তা-ও তিন ধাপে- ৪ ইঞ্চি, ৩ ইঞ্চি ও ২ ইঞ্চি করে যাতে ভারী যানবাহন চলাচলকারী সড়কটি টেকসই হয়। পুরো সড়কটি চার ভাগ (লট) করে উন্নয়নকাজ হচ্ছে। এর মধ্যে একটি লটে ১৫শ’ মিটারের মতো অংশ খারাপ।”
তিনি বলেন, “জাইকার প্রকল্প হওয়ায় প্রতিটি কাজেই কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এতে যেমন সময় বেশি লাগছে তেমনি করোনারও প্রভাব পড়েছে। এখন পূর্ণগতিতে কাজ চলছে। চসিক প্রশাসক নিজে বিষয়টি মনিটরিং করছেন। ইতিমধ্যে কয়েক দফা ঐ সড়ক পরিদর্শনে গিয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা আশাবাদী আগামী নভেম্বরের মধ্যে এ সড়কের কাজ সম্পন্ন হবে।”
সড়কটির পাশে অবস্থিত হজরত মনির উল্লাহ শাহ ও হজরত মুনছুর আলী শাহ (র.) মাজার শরিফের পরিচালনা কমিটি চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনদুর্ভোগ লাঘবে নিজ দায়িত্বে মাজার দু’টির অতিরিক্ত অংশ সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে।
আজ রবিবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন মাজারগুলো সরেজমিনে পরিদর্শনকালে বলেন, “যারা সড়কের দু’পাশের নালা এবং ফুটপাত দখল করে মালামাল রেখেছেন তারা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজ দায়িত্বে সরিয়ে না নিলে জরিমানাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি মাজার পরিচালনা কমিটিকে জনস্বার্থে সদিচ্ছার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
গত ১১ আগস্ট সাগরিকা মোড় থেকে নয়া বাজার পর্যন্ত সব অবৈধ স্থাপনা, ফুটপাতের উপর বসানো দোকানপাট ও স্তূপ করা মালামাল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন চসিক প্রশাসক। এরপর সেখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে চসিক।”
এর আগে ৬ আগস্ট চসিক প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেই খোরশেদ আলম সুজন পোর্ট কানেকটিং সড়কের সাগরিকা থেকে নয়াবাজার মোড় পর্যন্ত পরিদর্শনকালে পাঁচ দিনের মধ্যে পোর্ট কানেকটিং রোডে যত গর্ত রয়েছে তা ভরাট করে যান চলাচলের উপযোগী ও আগামী নভেম্বরের মধ্যে কাজ সম্পাদনের কড়া নির্দেশনা দিয়েছিলেন।