জঙ্গল সলিমপুরের গৃহহীনদের নিজ নিজ উপজেলায় আবাসনের ব্যবস্থাসহ ৫ সিদ্ধান্ত

জঙ্গল সলিমপুরের গৃহহীনদের নিজ নিজ উপজেলায় আবাসনের ব্যবস্থাসহ ৫ সিদ্ধান্ত
জঙ্গল সলিমপুরের গৃহহীনদের নিজ নিজ উপজেলায় আবাসনের ব্যবস্থাসহ ৫ সিদ্ধান্ত

পোস্টকার্ড নিউজ ।।

সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগর থেকে সন্ত্রাসীদের সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে অবৈধ দখলমুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।

আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে এ বৈঠকে। এছাড়া জঙ্গল সলিমপুরের ৩১০০ একর খাস জায়গা উদ্ধার এবং সেখানের জীব-বৈচিত্র‍্য ও পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় ৫ দফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়।

মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধানগণ।

সভায় গৃহীত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত :

১) জঙ্গল সলিমপুরে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য গড়ে তোলা ৩১০০ একর জমি উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা এবং জমি উদ্ধারের পর সেখানে জীব-বৈচিত্র‍্য ও পরিবেশ-প্রতিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখে সরকারের পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে কয়েকটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠিত হয়।

২) গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি সমূহ ১ মাসের মধ্যে উচ্ছেদ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন এবং উদ্ধারকৃত সরকারি খাস জমিতে জীব-বৈচিত্র‍্য রক্ষাপূর্বক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করবে।

৩) জঙ্গল সলিমপুরে যারা প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন রয়েছে তাদেরকে স্থায়ী ঠিকানায় স্ব স্ব উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের মাধ্যমে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

৪) জঙ্গল সলিমপুরে সন্ত্রাস, ভূমিদস্যুতা ও মাদকের রাজত্ব কায়েম করে রাখা সন্ত্রাসী-আসামিদের গ্রেপ্তারে অবিলম্বে সাঁড়াশি চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে। 

৫) আগামী ১ মাসের মধ্যে মাস্টার প্ল্যান করে তা বাস্তবায়ন করার জন্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে । 

উল্লেখ্য, সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য খ্যাত এই জঙ্গল সলিমপুর আলীনগর এলাকার ৩১০০ একর পাহাড় দখল করে বিগত প্রায় তিন দশক ধরে সেখানে প্লট বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছিল একটি দুষ্কৃতিকারী চক্র। ঐ চক্রের সদস্যরা সরকারি পাহাড় কেটে সেখানে এক হাজারেরও বেশি প্লট তৈরি করে বিক্রি করে। এতে পাহাড়ি এলাকাটি ঘনবসতি পূর্ণ হয়ে উঠায় প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র ধংস হচ্ছে। দীর্ঘকাল ধরে ঐ পাহাড়ে দখলের রাজত্ব কায়েম করা ভূমিদস্যুদের উচ্ছেদে সরকার নানান উদ্যোগ গ্রহণ করে। পাশাপাশি এলাকাটিতে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নাইট সাফারি পার্ক, কেন্দ্রীয় কারাগার, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কার্যালয়সহ নানান সরকারি স্থাপনা করারও ঘোষণা দেয়। যা বাস্তবায়নে কাজও শুরু হয়।

সরকারের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে পাহাড় অবৈধ দখলমুক্ত করতে গত ২ আগস্ট চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক নিজে আলীনগরে যৌথবাহিনী নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে প্রায় ২০০ স্থাপনা সরিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া ঐ এলাকার অন্তত ৪০০ পরিবারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। সে সময় জেলা প্রশাসক প্রথম দফায় এলাকাবাসীকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে এই সময়ের মধ্যে এলাকা ত্যাগ করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু এরপর আরো সক্রিয় হয়ে উঠে দখলকারী চক্রের সদস্যরা। এর প্রতিবাদে ভূমিদস্যুরা স্থানীয় অসহায় মানুষদের ব্যবহার করে পরদিন অর্থাৎ ৩ আগস্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। দীর্ঘ ৫ ঘণ্টার যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন হাজার হাজার মানুষ।

এরপর এলাকাটি পরিদর্শন করে স্থানীয়দের পাহাড় ছাড়ার জন্য ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন চট্টগ্রাম-৪ সীতাকুণ্ড আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ দিদারুল আলম। এতেও কাজ না হলে সর্বশেষ গত ৯-১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরো তিন দিন সময় বেঁধে দিয়ে আলীনগর পাহাড় ছাড়তে এলাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ঘোষণা দেয় জেলা প্রশাসন। সে সময়ও পেরিয়ে গেছে। কিন্তু তিন দফা এসব আল্টিমেটামে সব মিলিয়ে ৫০-৬০টির মতো পরিবার বসতঘর নিয়ে গেলেও এখনো সেখানে প্রায় ১১০০ ঘর রয়ে গেছে বলে জানা যায়।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;