২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্থগিত পেকুয়ার সেই ইউএনওর বদলির আদেশ

২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্থগিত পেকুয়ার সেই ইউএনওর বদলির আদেশ

কক্সবাজার প্রতিনিধি ।।

পেকুয়ায় ত্রাণের ১৫ টন চাল গায়েব নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলে ডিওতে স্বাক্ষর করা টৈটং ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করার পরও বিতর্ক অব্যাহত থাকে। ফলে পেকুয়া উপজেলার আলোচিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈকা সাহাদাতের বদলি করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ৩ মে’র মধ্যে যোগদান করতে প্রজ্ঞাপন জারি করেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা। অপর একটি আদেশে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া ইউএনও নাজমা সিদ্দিকা বেগমকে ৩ মে’র মধ্যে পেকুয়ায় যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) পৃথক প্রজ্ঞাপনে দুই ইউএনওকে বদলীর আদেশ দেয়ার মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে একই প্রজ্ঞাপনে দুই ইউএনওর বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়।

আজ শুক্রবার (১ মে) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার জানিয়েছেন, ত্রাণ নিয়ে নয়-ছয়ের ঘটনা তদন্তের স্বার্থে আপাতত ইউএনওর বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারি চাকুরিতে বদলি রুটিন ব্যাপার। তাই যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। আপাতত ওই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পেকুয়ায়ই থাকছেন।’

ইউএনওর ত্রাণ নিয়ে নয়-ছয়ের ঘটনায় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘আসলে ওই ঘটনা তদন্তে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ অবস্থায় বিভাগীয় অভিযুক্ত ইউএনওর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ আছে। তাই তিনি আরো কিছুদিন পেকুয়ায় দায়িত্ব পালন করবেন। এরপরই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২৭ এপ্রিল ত্রাণের চাল গায়েবের ঘটনা প্রকাশের পর এবং পেকুয়ার বারবাকিয়া হোসনে আরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৩শ’ বস্তা (১৫ মেট্রিক টন) চাল জব্দের ঘটনার পর সংবাদ প্রকাশ হলে তদন্তে নামে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা। গত বছর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ শাখা থেকে ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই মানবিক সহায়তা হিসেবে পেকুয়ার জন্য ৪০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই সময় ২৫ টন চাল বিতরণ করা হয়। বাকি ১৫ টন চকরিয়ার খাদ্য গুদামে মজুত ছিল।

সম্প্রতি করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দিনমজুর, রিকশাচালক ও অসহায় দুস্থ পরিবারের জন্য সরকারের নতুন বরাদ্দ আসছে জেনে গুদাম খালি করতে ২০১৯ সালের বরাদ্দের সেই ১৫ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করতে গত ৩১ মার্চ টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর অনুকূলে পরিপত্র স্বাক্ষর করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈকা সাহাদাত। সেই সব চালের ৩ টন ৬ এপ্রিল, বাকি চাল ৯ এপ্রিল পৃথক স্বাক্ষরে তোলেন উল্লেখিত ইউপি চেয়ারম্যান। তবে উত্তোলন করা চাল কী করা হয়েছে এ হিসাব ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা ইউএনও কারও কাছে নেই। দীর্ঘ প্রচেষ্টা চালিয়েও বরাদ্দকৃত ওই চালের কোনো হদিস মেলেনি। ফলে সরকারি ত্রাণের এসব চালের হিসাব দিতে ব্যর্থ হওয়ায় চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়। চেয়ারম্যান ও দলীয় পদ থেকেও তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

একই সঙ্গে ইউএনও সাঈকা সাহাদাতের বিরুদ্ধে ১৫ টন চাল কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় বৃহস্পতিবার তাকে বদলি করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে যোগদানের আদেশ জারি ২৪ ঘন্টার মধ্যে ফের স্থগিতাদেশের প্রজ্ঞাপন জারি হয়। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।