সাহিত্য একাডেমি নিউইয়র্ক'র নবম বর্ষপূর্তি ও ১০৮ তম মাসিক সাহিত্য আসর সম্পন্ন

সাহিত্য একাডেমি  নিউইয়র্ক'র নবম বর্ষপূর্তি ও ১০৮ তম মাসিক সাহিত্য আসর সম্পন্ন

পলি শাহীনা , নিউইয়র্ক ।।

গত ২৯ নভেম্বর জ্যাকসন হাইটসের একটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে 'সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক'র নবম বর্ষপূর্তি ও ১০৮ তম মাসিক সাহিত্য আসর। বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এবারের আসরটি ছিল গতানুগতিক আসরগুলো থেকে কিছুটা ভিন্নধর্মী। গোটা অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন।

সবাইকে আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে পরিচালক গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে সাহিত্য একাডেমির একমাত্র উপদেষ্টা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শহীদ কাদরীকে স্মরণ করেন। তিনি বলেন সাহিত্য একাডেমির পঞ্চম ও ষষ্ঠ বর্ষপূর্তিতে কবি শহীদ কাদরী শুভেচ্ছা জানিয়ে চমৎকার লেখা লিখেছিলেন। তিনি এখন বেঁচে নেই। কিন্তু তাঁর লেখা, দিকনির্দেশনা আমাদেরকে পথ চলতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে, সামনের দিনগুলোতেও তা অব্যাহত থাকবে।

নবম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ইউএস-বাংলা বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করায়, তিনি সম্পাদক আবু সাঈদ রতন এবং যাঁরা উক্ত সংখ্যায় লেখা দিয়েছেন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। সংগঠনের গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, কবি কাজী আতীকের মত এমন অনেকেই আছেন যাঁরা আগে লিখতেন, প্রবাসে আসার পর লেখা ছেড়ে দিয়েছেন, সাহিত্য একাডেমিতে এসে উৎসাহিত হয়ে পুনরায় লিখতে শুরু করেছেন। তাঁরা এখন পুরো উদ্যামে লিখছেন এবং নিউইয়র্কের পত্রিকায় তাঁদের সরব উপস্থিতি চোখে পড়ে। আমাদের পেছনে অনেকেই সমালোচনা করেন। আমরা যদি আমাদের কাজটুকু সঠিক ভাবে করি তাহলে এসব সমালোচনা ধুয়ে মুছে যাবে। যাঁরা কাজ করতে জানেন তাঁরা ভালো জিনিস উপহার দেয়ার স্ব ক্ষমতা রাখেন এবং একদিন সাহিত্য একাডেমি সেটি পারবে। প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে যাঁরা ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করছে , তারা সাহিত্য একাডেমিতে আসে। একদিন তারাই বাংলা সাহিত্য কে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিবে। এটি সাহিত্য একাডেমির স্বপ্ন। আগামী বছর সাহিত্য একাডেমির দু'দিন ব্যাপি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া 'শিল্প ও সাহিত্য' সম্মেলনের আহবায়ক হিসেবে তিনি লেখক ফেরদৌস সাজেদীন এর নাম ঘোষণা করেন। ছোট গল্পকার মনসুর আলী কে স্মরণ করে তিনি বলেন তাঁর অনুপ্রেরণাতেই সাহিত্য একাডেমি সৃষ্টি হয়েছিল।

প্রখ্যাত সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদউল্লাহ বলেন, বাংগালী এখন বিশ্বব্যাপী নানান প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এটি একটি অসাধারণ বাস্তবতা। তাঁদের জীবন কাহিনীগুলো যদি আমাদের সাহিত্যে উঠে আসে, সেটি হবে একটি বিরাট সাফল্যের কাজ। সাহিত্য একাডেমি গত নয় বছর ধরে বিদেশের বুকে স্ব দেশীয় সাহিত্য রক্ষায় যে কাজ করছে সেটি প্রশংসনীয়। যারা কবিতা লিখতে আগ্রহী তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কবিতার ব্যাকরণ জানা জরুরি। যাঁরা ভালো জানেন তাঁদের থেকে জেনেশুনে, শিখে নতুনদের কবিতা লেখা উচিৎ হবে। গল্প, উপন্যাস লেখারও একটি শৈলি রয়েছে। যাঁরা গল্প এবং উপন্যাস লিখতে চান তাঁদের লেখাগুলো যেন বিবরণী, রিপোর্ট হয়ে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে অনুরোধ করেন।

ঠিকানা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, আজ সাহিত্য একাডেমি নয় বছর অতিক্রম করেছে। আমরা যারা প্রবাস জীবন যাপন করি তাদের জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। গত নয় বছর ধরে এই ঘরটিতে আমরা একে অন্যের আন্তরিকতায় ঋদ্ধ হয়েছি। আমরা সবাই সবার কাছে ঋণী। এই ঋণ কোনদিন শোধ হবে না, বাড়তেই থাকবে অসীমের পথে। তিনি কবি শহীদ কাদরী কে নিয়ে তাঁর লেখা 'তোমাকে প্রণতি হে কবি ' পাঠ করে শুনান।

কবি কাজী আতীক বলেন, নবম বর্ষপূর্তিতে আমার কথা বা কবিতা নয়, আজ শুধু শুভেচ্ছা জানাবো। আজ আমরা সবাই মিলে এই আনন্দঘন মুহূর্তে গল্প করবো, গান শুনবো।

লেখক সোনিয়া কাদের বলেন, আগামীকাল থেকে সাহিত্য একাডেমি দশ বছরে হাঁটা শুরু করবে। গত নয় বছরে আমার জীবনে অনেক পরিবর্তন এলেও, সাহিত্য একাডেমি সেই একই আলো ছড়িয়ে শৈশব থেকে যৌবনে পা রাখছে। তিনি বলেন, একটা পিঁপড়া কে যে কেউ পায়ের নিচে পিষে ফেলতে পারে, কিন্তু একদল পিঁপড়া কে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব নয়। আমরা সাহিত্য একাডেমি সেই সুশৃঙ্খল পিঁপড়া দল।

ইউএস-বাংলা নিউজের সম্পাদক আবু সায়ীদ রতন বলেন, নয় বছরে উপস্থিত থাকতে পেরে গর্বিত বোধ করছি। সাহিত্য একাডেমির কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তিনি জানান, সাহিত্য একাডেমির একটি বুলেটিন বের করবো প্রতি তিন মাসে, যেখানে সাহিত্য একাডেমির সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। সাহিত্য একাডেমির নিজস্ব ওয়েবসাইট বানানোর কথাও তিনি জানান। তিনি বলেন, সবাই মিলে একসাথে পথ চললে সে পথ টি অনেক শক্তিশালী হবে।

এই আসরে মুমু আনসারী স্ব রচিত রম্য রচনা পাঠ করেন। জেবুন্নেসা জ্যোৎস্না, তামান্না আহমেদ শান্তি ও সাফওয়ান নাহিয়ান স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। ফেরদৌসী আবেদীন লীনা আবৃত্তি করেন কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা।

এবারের আসরে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা হলেন, উম্মে কুলসুম পপি, রাহাত কাজী শিউলি, হোসনে আরা, তাহমিনা খান, সালেহীন সাজু, বেনজির শিকদার, শামস আল মমীন, আখতার আহমেদ রাশা, শাম্মি আক্তার হ্যাপি, শামস চৌধুরী রুশো, আদনান সৈয়দ, আরিফ মাহমুদ শৈবাল, নিলুফার রেজা, মাসুম আহমেদ, সৈয়দ হাসমত আলী, লিয়াকত আলী, আহমেদ ছহুল, হাসান আলী, নাসির শিকদার, মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন, নাসিরুল্লাহ মোহাম্মদ, পারভীন সুলতানা, তাহরীনা পারভীন প্রীতি, নাসিমা আক্তার, মোঃ এনামুল করিম, মো সাদী মিন্টু, সেলিনা তুহিন, মনিরা মমতাজ, মাহবুবুল হক, বাবুল রোজারিও, মজিব হক, প্রতীপ দাশগুপ্ত, আবুল বাশার, রাজিয়া নাজমী, রেজাউল হক, আনোয়ার সেলিম, পারভীন হোসেন, আল মাসুদ জীবন, মিয়া জাকির, শাফী মাহমুদ, তানভীর রাব্বানী, হাবীবুর রহমান, আশরাফ জামান, এজাজ আলম, শামীম আহমেদ, কবিতা হোসাইন, মিশুক সেলিম, কামাল হোসেন মিঠু, পলি শাহীনা প্রমুখ।

দেশাত্মবোধক গান, রবীন্দ্র সংগীত ও নজরুল সংগীত পরিবেশন করেন ম্যারিষ্টলা আহমেদ শ্যামলী। তাঁর সঙ্গে লালনগীতি সহ সংগীত পরিবেশনে অংশ নেয় তাহরীনা পারভীন প্রীতি, শাম্মি আক্তার হ্যাপি, নাসিমা আক্তার ও তাহমিনা খান।

সবাইকে ধন্যবাদ শেষে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন পরিচালক মোশাররফ হোসেন।

উল্লেখ্য, আসর শুরু হবার আগে আগত অংশ গ্রহণকারীদের পিঠাপুলি ও চা এর মাধ্যমে আপ্যায়িত করা হয়। একটি পর্যায়ে কেক কেটে নবম বর্ষপূর্তি কে অভিনন্দিত করা হয়।