সহজ মানুষ তিনি, তাঁর সান্নিধ্যে এলেই যে কোন মানুষ ভালোবেসে ফেলেন তাঁকে :  এম এ মালেক সম্মাননা স্মারক ‘অগ্রপথিক’ এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা

সহজ মানুষ তিনি, তাঁর সান্নিধ্যে এলেই যে কোন মানুষ ভালোবেসে ফেলেন তাঁকে :  এম এ মালেক সম্মাননা স্মারক ‘অগ্রপথিক’ এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা
সহজ মানুষ তিনি, তাঁর সান্নিধ্যে এলেই যে কোন মানুষ ভালোবেসে ফেলেন তাঁকে :  এম এ মালেক সম্মাননা স্মারক ‘অগ্রপথিক’ এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

‘ওহে গুণী, তুমি এমনই মানুষ/ তোমার আলোয় ভরা মুখ/ তোমার ছোঁয়ায় প্রাণে প্রাণে জাগে সুখ/ তুমি বাজালে কালের বীণা/ তোমাকে জানা কখনই ফুরোবে না/ তোমাকে পেয়ে এই বাংলার গর্বে ভরে বুক’।

যাকে নিয়ে এ গান পরিবেশিত হয়, তিনি একুশে পদকপ্রাপ্ত সংবাদব্যক্তিত্ব এম এ মালেক; স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীর সম্পাদক। তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত সম্মাননা স্মারক ‘অগ্রপথিক’ এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সৃজামী সাংস্কৃতিক অঙ্গন গণসঙ্গীত শিল্পী সুজিত চক্রবর্ত্তীর নেতৃত্বে এ গানের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয় এম এ মালেককে।

মঞ্চে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ থেকে তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ, শুভানুধ্যায়ীসহ গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে উপস্থিত সুধীজন মুহুর্মুহু করতালিতে স্বীকার করে নেন, মানবমুক্তি এবং সমাজমুক্তির লক্ষ্যে কাজ করাই সাংবাদিকদের প্রকৃষ্ট পথ। তার ধারাবাহিকতায় আজাদীকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছেন এম এ মালেক। তাই আজ চট্টগ্রাম এবং দৈনিক আজাদী অঙ্গাঙ্গী জড়িত। চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের মুখপত্র হিসেবে আজাদী আজ অনন্য। আর এম এ মালেক আজ শুধু দৈনিক আজাদীর সম্পাদক নন, নিজের কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে আজ চট্টগ্রাম তথা এ দেশের একজন অভিভাবকে পরিণত হয়েছেন।

‘অগ্রপথিক’ এর সম্পাদক সম্পাদক জাহেদুল আলমের সভাপতিত্বে এবং কৃতী বাচিকশিল্পী আয়েশা হক শিমুর সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী নাট্যব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা, ভাষাবিজ্ঞানী গবেষক ড. মাহবুবুল হক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. শামীম রেজা এবং প্রাক্তন লায়ন্স গভর্নর কামরুন মালেক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বনামধন্য চারুশিল্পী দীপক দত্ত। এম এ মালেকের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন কন্যা ফাহমিদা মালেক ও পুত্রবধূ পারিহা মালেক।

ড. অনুপম সেন বলেন, ষাটের দশকে টগবগে যৌবনকালে আজাদীর নাম শুনি। পরবর্তীতে জানতে পারি, আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক একজন গুণী মানুষ। এ অঞ্চলের প্রথম মুসলিম ইঞ্জিনিয়ার হয়েও তিনি প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন, বইয়ের দোকান চালু করেন এবং সব শেষে করলেন আজাদী প্রকাশ। দৈনিক আজাদী ইতিহাসের অংশ। আর কোনো পত্রিকার এ অর্জন নেই। বাঙালির একুশ, স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের সাথে জড়িয়ে আছে আজাদীর নাম। একই সাথে এ অর্জনে এম এ মালেকের ভূমিকাও ছিল অনন্য। ২৬ মার্চের স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণা আজাদী পড়ে জেনেছি। দেশ স্বাধীনের সংবাদ বিশ্বাস করতে পারিনি। কোহিনূর প্রেসে গিয়ে যখন দেখছি এম এ মালেকের তত্ত্বাবধানে ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ শিরোনামে পত্রিকা বেরুচ্ছে, তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি।

তিনি বলেন, এম এ মালেক কেবল সম্পাদকই নন, একজন অসাধারণ জীবনমুখী মানুষ। তিনি এমন একজন বক্তা, যিনি কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে পূর্ববর্তী বক্তাদের একঘেয়ে বক্তৃতার ক্লান্তি ভুলিয়ে দেন। আশা করব এম এ মালেক এমনই চির তরুণ থাকুন। সবসময় আমরা তো বাঁচা-মরার সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ সময়ে চাইব আরো বহুদিন এভাবেই যেন এম এ মালেক আমাদের আনন্দ দিয়ে যেতে পারেন। 

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, দরিয়া নগর কক্সবাজার আমার জন্মস্থান। সেই হিসেবে এম এ মালেকের সাথে যতখানি ঘনিষ্ঠতা হওয়ার প্রয়োজন ছিল তা হয়ে উঠেনি। এম এ মালেক একজন অগ্রপথিক, যিনি নিজেকে গুটিয়ে রেখে আশেপাশে সম্ভাবনা ছড়িয়েছেন। তিনি মিতভাষী। নিজেকে যতখানি প্রকাশ করা প্রয়োজন তা না করে আশেপাশের মানুষকে বিকশিত করেছেন। নির্লিপ্ত, নিরপেক্ষ, নির্মেদ এমন মানুষ বর্তমান সময়ে কমে আসছে। আজাদীর মতো পত্রিকাকে এতদিন যে মানুষটি সফলভাবে টিকিয়ে রেখেছেন, লোকবাংলাকে লালন করেছেন, ধারণ করেছেন, এর মাধ্যমে তিনি বৃহত্তর চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশকে বিকশিত করেছেন।

নাট্যব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেন, এম এ মালেক একজন প্রাণবন্ত মানুষ। কোনোকিছুতেই তাঁর কোনো উদ্বেগ নেই। অন্তত বাইরে থেকে তেমনই মনে হয়। সবসময় চির প্রশান্তি। জীবনের কোনো জটিলতা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। তাঁর মধ্যে একধরনের সহজাত সৌজন্যবোধ আছে, যা বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের অনেকের মধ্যে নেই। তাঁর গুণাবলী নানাবিধ। তবে আমি মনে করি, তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন এটাই, যেকোনো শ্রেণী-পেশার মানুষ তাঁর সান্নিধ্যে এসে তাঁকে ভালোবেসে ফেলেছেন। চট্টগ্রামবাসী তো তাঁকে জানেন, আমরা যারা ঢাকায় থাকি, তাদের কাছেও এম এ মালেক একজন সহজ মানুষ। ঢাকায় সাংবাদিক মহলেও তিনি একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। তাঁর গুণাবলী যদি নিজে ধারণ করতে পারতাম, তাহলে উদ্বেগহীন একটি জীবন কাটাতে পারতাম।

তিনি বলেন, একজন রাজনীতিবিদ যদি নিজের সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে, তবে তিনি রাজনীতিবিদ হতে পারেন না। দেশে সাম্প্রদায়িক নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা, খুন, ধর্ষণ আমাকে বিব্রত করে। একটি মেয়ে স্টেশনে পছন্দসই কাপড় পরেছে বলে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে! শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করছে! এই সমাজে নিশ্চিন্তে থাকার সুযোগ নেই। এম এ মালেক আজাদীর মাধ্যমে সামাজিক এই অস্থিরতার বিরুদ্ধে যুদ্ধটা অব্যাহত রেখেছেন।

ভাষাবিজ্ঞানী ড. মাহবুবুল হক বলেন, অগ্রপথিক তিনিই, যিনি সবার আগে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেন, এগিয়ে চলার প্রেরণা যোগান, সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে শেখান। এম এ মালেক তেমনই একজন মানুষ। নিভৃতচারী প্রচারবিমুখ মানুষ তিনি। তিনি একজন কৃতী সম্পাদক এবং সাংবাদিক। তিনিই আবার সফল ব্যবসায়ী। তিনি সফল একজন উত্তরাধিকারী, যিনি তাঁর পিতার প্রকাশিত পত্রিকাটিকে এতদূর নিয়ে এসেছেন। তিনি জীবন রসিক, ভ্রমণ বিলাসী, লোক হিতৈষী, একজন সফল মানুষের প্রতিচিত্র। আমাদের তরুণদের জন্য অনুকরণীয় একজন ব্যক্তিত্ব। আমাদের জীবনের ধ্রুবতারা এম এ মালেক।

অধ্যাপক কবি আবুল মোমেন বলেন, এম এ মালেক ইতিবাচক একজন মানুষ। সবসময় হাসিখুশি থাকেন।বর্তমান সময়টি আমি মনে করি তাঁর জীবনের মধ্যকাল। তাঁর পিতা ইলেকট্রিক প্রেস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। পত্রিকা প্রকাশনা যে একটা শিল্প হতে পারে, তা সেই সময় তিনি ভেবেছিলেন কিনা জানি না। আশির দশকে পত্রিকা শিল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আজাদীকে কুটির শিল্প থেকে বড় শিল্পে তুলে এনেছেন এম এ মালেক।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ক্রমে ক্রমে ওয়ান সিটি কান্ট্রিতে পরিণত হচ্ছে। পাকিস্তান আমলেও ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে এতটা ব্যবধান ছিল না। এখন সবকিছুই ঢাকা কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম হয়তো কিছুটা দাঁড়াতে পারছে। কিন্তু বাকি জেলাগুলো হয়ে পড়েছে ডায়িং সিটি। সে জায়গায় আজাদী বড় ভূমিকা পালন করে চলেছে ৬৩ বছর ধরে। তাঁর সাথে কথা প্রসঙ্গে বেশ কয়েকবার বলেছি আজাদীকে আরো চাকচিক্যময় করতে। তিনি বলেছেন, এটা সাধারণের পত্রিকা হিসেবে ছিল, আগামীতেও থাকবে। চট্টগ্রামবাসী আজাদীকে গ্রহণ করেছে, কারণ আজাদী সকলকে গ্রহণ করেছে সাদরে। আজাদীর কোনো জাত্যাভিমান নেই। তাই আজাদী টিকে থাকবেই।

তিনি বলেন, যেকোনো শহরে কিছু প্রতীকী মানুষ থাকবে। এম এ মালেক তেমন একজন মানুষ, যিনি চট্টগ্রামকে প্রতিনিধিত্ব করেন। আজাদীকে নিয়ে তিনি অনেকদিন আমাদের মধ্যে থাকুন।

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ড. শামীম রেজা বলেন, যেখানে কথা বললে তাকে বাচাল বলা হয়, সংগঠন বেশিদিন টিকে না, সে জায়গায় আজাদী ছয় দশকের বেশি টিকে আছে। সবকিছুই এখন ঢাকা কেন্দ্রিক। ঢাকা কী বলল, ঢাকায় কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো সেটা এখন মুখ্য বিষয়। ঢাকা থেকে কিছু হলে সেটা জাতীয় হবে আর ঢাকার বাইরে থেকে হলে আঞ্চলিক হবে-এটা তো এককেন্দ্রিকতা। আঞ্চলিক পত্রিকা বলতে আমার আপত্তি আছে। পাশের দেশ ভারতে কোনো জাতীয় পত্রিকা নেই। সবই আঞ্চলিক। আজাদীতে বন্দরের সমস্যা তুলে ধরা হয়, জলাবদ্ধতা নিয়ে সংবাদ হয়, সংস্কৃতি সংকট নিয়ে রিপোর্ট হয়। এগুলো কি জাতীয় সমস্যা না? তা-ই যদি হবে, তবে আজাদীকে কেন জাতীয় পত্রিকা বলা হবে না?

তিনি বলেন, আমি এ উপমহাদেশে খুব কম সংখ্যক পত্রিকা দেখি, যেটা টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন। নেপালে মুষ্টি চাল দিয়ে রেডিও চালানো হয়। আমাদের উচিত হবে এম এ মালেককে চট্টগ্রামে সীমাবদ্ধ না রাখা। তাঁকে দক্ষিণ এশীয় অগ্রগণ্য সম্পাদক হিসেবে কেন দেখতে পারি না?

তিনি আরো বলেন, আজকে আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা, কূপমণ্ডূকতা বাসা বেঁধেছে। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, যা কিছু ভালো তার পক্ষে, সংস্কৃতির বিকাশে, গভীর মূল্যবোধ রক্ষার জন্য একজন মানুষ এম এ মালেক, একজন সম্পাদক এম এ মালেকের প্রয়োজন।

প্রাক্তন লায়ন গভর্নর ও এম এ মালেকের সহধর্মিনী কামরুন মালেক বলেন, এম এ মালেক সম্পর্কে আমার বলা যেমন সহজ, তেমনি আবার খুব কঠিন। আমি বিশ্বাস করি, আমার শ্বশুর ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক তাঁর হাতে আজাদী দিয়ে গিয়েছিলেন বলেই এম এ মালেকের এত এত প্রাপ্তি। ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে আমি দেখিনি। আমার স্বামীর মুখে শুনেছি। উনার একমাত্র ছেলের বউ হিসেবে আমি গর্ব অনুভব করি। এম এ মালেক আমার চেয়ে, আমার সন্তানদের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন আজাদীকে। এতে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। তাঁর প্রতিটি কাজে আমি সায় দিয়ে এসেছি। আমি গর্বিত তাঁকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে। আমি চাই, মালেক সাহেবের হাতে হাত রেখে কম সৌভাগ্যবানদের যেন সেবা করে যেতে পারি। আমার সন্তানরা যেন আজাদীকে আরো বহুদূর নিয়ে যেতে পারে।

এম এ মালেকের কন্যা ফাহমিদা মালেক বলেন, আমার বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। প্রতিটি সন্তানই এ কথাটি বলবে। সেই ছোট্টবেলায় বাবা ঘুম পাড়াতেন, ‘আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে’ গান গেয়ে। এখন তিনি ভীষণ ব্যস্ত। কিন্তু বাবার মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখিনি। ২০ বছর বয়সের বৃদ্ধকেও দেখি আজকাল, আবার ৮০ বছরের তরুণকেও দেখেছি। বাবাকে তাই এ বয়সেও আমার টগবগে যুবক বলে মনে হয়। আজকে কিছু ভালো না লাগার সময়ে আমার বাবা এখনো দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ান, সিনেমা দেখতে ভালোবাসেন, ছবি তোলেন। এমন প্রাণবন্ত মানুষটিকে তরুণ তো বলতেই হয়। বাবা শিখিয়েছেন কখনো মাথা নত না করতে। হাঁ বলা সহজ, না বলাটাই কঠিন। কিন্তু আমার বাবা খুব সহজেই ‘না’ বলতে শিখিয়েছেন। বয়সের ভারে শরীর নুইয়ে পড়েছে বাবার, কিন্তু মাথা নত করেননি কখনো।

এম এ মালেকের পুত্রবধূ পারিহা মালেক বলেন, যাকে খুব বেশি ভালোবাসা যায়, তার সম্পর্কে মনের ভাব প্রকাশ করা সহজ নয়। আমি তাঁকে শ্বশুর বলে কখনো মনে করিনি। তিনি আমার বাবা। প্রথম দেখায় মুগ্ধ আমি। দিন দিন মুগ্ধতা বাড়ছেই। একটা মানুষ কতটা নরম মনের হতে পারে তা বাবাকে দেখলেই বোঝা যায়। বাবার সাথে তাই আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। বাবাকে বলতে চাই, আপনার কোনো তুলনা হবে না। প্রতিটি সফলতার পেছনে একজন থাকেন। তিনি আমার মা কামরুন মালেক। বাবাকে বলতে চাই, আপনাকে আমরা সবাই ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে রাখব। ভালোবাসায় মাখামাখি হয়ে থাকব।

আর অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক রবীন্দ্রনাথের মতো উচ্চারণ করেন, প্রশংসা আমাকে বিব্রত করে। কিন্তু গোপনে আমি প্রশংসার জন্য অপেক্ষায় থাকি। আজ আমি আবেগাপ্লুত। আমি সবসময় বলি মানুষ পৃথিবীর জন্য অত্যাবশ্যকীয় নয়। আগামীকাল কী হবে তা কেউ জানি না। আজকে আছি, এটাই বড় পাওনা। তাই প্রতিটি মুহূর্ত আমি উপভোগ করতে চাই। প্রাপ্তির আশায় কখনো কোনো কিছু করিনি। সবসময় মনে করি যেটা করছি সেটা ভালোভাবেই করব। চেষ্টা করেছি সবসময় মানুষের পাশে থাকার। বাবা আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন আজাদী ও কোহিনূর প্রেস। শিশু কাগজটিকে দাঁড় করানো ছিল মূল চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, আমার বাবা আমার আইডল। একুশ আমার অহংকার। একুশের প্রথম কবিতা কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীর ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ছাপিয়েছিলেন আমার বাবা। দেশে আজাদীই একমাত্র পত্রিকা যার দুজন সম্পাদক দেশের সর্বোচ্চ দুটি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, কোনো কিছু না পেয়ে কখনো দুঃখ হয়নি। আমার স্ত্রী-সন্তানদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আজাদীর প্রথম হেডলাইন ছিল ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করেছেন। তাঁর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা।

এম এ মালেক বলেন, সাধারণের কাগজ আজাদীকে চট্টগ্রামের মুখপত্র করতে পেরেছি-এটাই সার্থকতা। গ্রন্থটির নাম ‘অগ্রপথিক’ না হয়ে পথিক হলেই বুঝি ভালো হতো। আমাদের জীবনের প্রথম ও শেষ পাতা লেখা হয়ে গেছে। মাঝের পাতাগুলো খালি। জীবনের ভালো-মন্দ দিয়ে এ পাতাগুলো পূর্ণতা পাবে। সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের একটি লাল সবুজ পতাকা দিয়ে গেছেন। আমার মৃত্যুর পর লাল সবুজের পতাকাটি আমার কফিনের ওপর শোভা পাবে-এক জীবনে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে?

অনুষ্ঠান শেষে নৃত্যশিল্পী শুভ্রা সেনগুপ্তার পরিচালনায় স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ডান্সের শিল্পীর নৃত্য পরিবেশন করে।- আজাদী ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;