স্বাধীনতার পর চট্টগ্রাম থেকে যারা কেন্দ্রীয় আ. লীগে স্থান পেয়েছেন

স্বাধীনতার পর চট্টগ্রাম থেকে যারা কেন্দ্রীয় আ. লীগে স্থান পেয়েছেন
স্বাধীনতার পর চট্টগ্রাম থেকে যারা কেন্দ্রীয় আ. লীগে স্থান পেয়েছেন

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

চট্টগ্রাম থেকে প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতার সংখ্যা খুব বেশি নয়। গত ৫২ বছরে চট্টগ্রামের ১৯ সন্তান বিভিন্ন পদে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে স্থান পেয়ে বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কমিটিতে চট্টগ্রামের একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জহুর আহমদ চৌধুরী। ১৯৭৪ সালের ১ জুলাই ঢাকায় মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

এরপর মাস্টারদা সূর্যসেনের সহযোগী, অগ্নিযুগের বিপ্লবী খ্যাত অধ্যাপক পুলিন দে প্রেসিডিয়ামের সদস্য হন। পরপর দুবার তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য হন এবং ২০০০ সালের ১১ অক্টোবর মৃত্যুর দিন পর্যন্ত এ দায়িত্বে আসীন ছিলেন অধ্যাপক পুলিন দে।

স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নিযুক্ত হন মিরসরাইয়ের সন্তান, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ফজলুল হক বিএসসি।

’৯০ দশকের গোড়ার দিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে শিক্ষা, গবেষণা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে চট্টগ্রাম থেকে স্থান পান একসময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা, মুক্তিযুদ্ধের বিএলএফ কমান্ডার এসএম ইউসুফ।

এরপর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে চট্টগ্রাম থেকে স্থান পান আতাউর রহমান খান কায়সার। তিনি ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০২ ও ২০০৯ সালে গঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। এর মধ্যে দুবার সদস্য, একবার অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ও সর্বশেষ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের সদস্য ছিলেন। ২০১০ সালের ৭ অক্টোবর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন।

সমসাময়িককালে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কমিটিতে শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আতাউর রহমান খান কায়সারের মৃত্যুর পরই মূলত সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন তিনি।

’৯৭ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রথমবারের মতো সদস্য পদ পান চট্টগ্রামের দুই বর্ষীয়ান নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে দুইজনই বাদ পড়েন। দীর্ঘদিন পর ২০১২ সালে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মৃত্যুর পর প্রেসিডিয়াম সদস্য হন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

এরপর ২০০২ সালে আওয়ামী লীগের ১৭তম অধিবেশনে বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পান চট্টগ্রামের একমাত্র সন্তান, বিরোধীদলীয় নেত্রীর তৎকালীন বিশেষ সহকারী ড. হাছান মাহমুদ। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ১৮তম অধিবেশনে একই পদে ফের দায়িত্ব পান হাছান মাহমুদ। তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি আমিনুল ইসলাম আমিনের প্রত্যাবর্তন হয় সদস্য পদে।

২০১২ সালের অধিবেশনে পদোন্নতি পেয়ে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হন ড. হাছান মাহমুদ। আগের পদেই বহাল থাকেন আমিনুল ইসলাম। একই কমিটিতে সদস্যপদ পান বাবুপুত্র সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদও। যদিও পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়েন জাবেদ।

২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর ১৮তম সম্মেলনে প্রেসিডিয়াম মেম্বার পদে বহাল থাকেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। আবারো প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পান চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান ড. হাছান মাহমুদ। পদোন্নতি পেয়ে উপ প্রচার সম্পাদক হন আমিনুল ইসলাম আমিন।

আর বাবার বদৌলতে রাজনীতিতে সদ্য যুক্ত হয়েই চমক দেখান মহিউদ্দিন-পুত্র ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। একলাফেই তিনি হয়ে যান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। একই কমিটিতে প্রথমে সদস্য ও সপ্তাহান্তে উপ দপ্তর সম্পাদক হন চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার সন্তান ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। সেবারই চট্টগ্রাম থেকে সর্বাধিক ৫ জন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পান।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ২১ তম অধিবেশনে বড় চমকটি ছিলো ড. হাছান মাহমুদের। চট্টগ্রামের জামালখান ওয়ার্ড ছাত্রলীগ থেকে দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পেরিয়ে তিনি উপমহাদেশের প্রাচীনতম সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন। যেটি, স্বাধীনতার পর প্রথমবার চট্টগ্রাম থেকে কোনো সন্তানের যুগ্ম সম্পাদক হওয়ার ঘটনা।

একই কমিটিতে তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছেন প্রবীণ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। আর পদোন্নতি পেয়ে দপ্তর সম্পাদক হয়েছেন ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। বাদ পড়েন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আর আমিনুল ইসলাম বহাল থাকেন উপ প্রচার সম্পাদক পদে।

এছাড়া কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদে চট্টগ্রাম থেকে দায়িত্ব পালন করেন সাবেক এমপি প্রয়াত ইসহাক মিয়া, সাবেক শ্রম ও জনশক্তিমন্ত্রী এম এ মান্নান, শিক্ষাবিদ ড. অনুপম সেন ও ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া। শেষোক্ত দুজন ২২তম অধিবেশনেও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।

২২ তম অধিবেশনে বড় চমকটা ছিল ড. হাছান মাহমুদের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পদে পদোন্নতি। ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক পদে কো-অপ্ট হওয়া আতাউর রহমান খান কায়সারের কন্যা ওয়াসিকা আয়েশা খান একই পদে বহাল থাকেন শনিবারের অধিবেশনে। আর পদোন্নতি পান আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ প্রচার থেকে তিনি হন ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক। ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বহাল থাকেন দপ্তরে। আর চতুর্থবার প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছেন বর্ষীয়ান নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;