সীতকূণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের মতো পাহাড় খেকোর নজর এখন বায়েজিদ মাঝের ঘোনায় 

সীতকূণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের মতো পাহাড় খেকোর নজর এখন বায়েজিদ মাঝের ঘোনায় 
সীতকূণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের মতো পাহাড় খেকোর নজর এখন বায়েজিদ মাঝের ঘোনায় 

নাজিম মুহাম্মদ ।।

জঙ্গল সলিমপুরের ছিন্নমূল আর আলি নগরের মতো একই কায়দায় দেদারসে পাহাড় কাটা হচ্ছে বায়েজিদ মাঝের ঘোনায়। প্রায় তিন হাজার একর পাহাড়ি এলাকা নিয়ে গঠিত মাঝের ঘোনায় নজর পড়েছে ১২ পাহাড় খেকোর। ছিন্নমূল ও আলি নগরের নিয়ন্ত্রণ ছিল মশিউর রহমান ও ইয়াছিনের। দুজনেই গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। মশিউর কিংবা ইয়াছিন গ্রেপ্তার হলেও মাঝের ঘোনায় পাহাড় কাটায় জড়িতরা রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝে মাঝে অভিযানে গিয়ে পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দায় সারছে। তবে থেমে নেই পাহাড় কাটা।

বায়েজিদ আরেফিন নগর বাজারের বাম পাশ ঘেঁষে সরু পথ বেয়ে যেতেই চোখে পড়বে একের পর এক পাহাড়। প্রকৃতিগতভাবে বেড়ে উঠা সবুজ গাছে ভরা পাহাড়গুলো ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কোন পাহাড়ের পাদদেশে টিনের ঘেরা দিয়ে দখলের জানান দেয়া হচ্ছে। আবার কোন পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে প্লট। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থার তৈরি করা তালিকায় মাঝের ঘোনায় পাহাড় কাটায় জড়িত রয়েছে এমন ১২ জনের নাম উঠে এসেছে। তারা হলেন, মাঝের ঘোনার শাহজাহান বাদশা ওরফে লাল বাদশা, মো. জামাল, আরিফ, আরেফিন নগর আর্মি কলোনির আজিজুল হক, বাদশার ভাই কামাল, মাঝের ঘোনার জাহাঙ্গীর, আতিক, মানিক প্রকাশ রড মানিক, অংশি মার্মা, মো. সাকিব, খালেক প্রকাশ মানিক ও নাছির। পাহাড় কাটার পাশাপাশি বাদশা, কামাল, এয়ার মোহাম্মদ ও মানিকের রয়েছে গভীর নলকূপ স্থাপন করে অবৈধভাবে পানি সরবরাহের ব্যবসাও। পানির ব্যবসার পাশাপাশি বাদশার রয়েছে অবৈধ বিদ্যুতের ব্যবসা।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহেদ ইকবাল বাবু জানান, আমার পৈতৃক জায়গায় একটি বৈধভাবে বিদ্যুতের মিটার সংযোগ নিতে গিয়ে পদে পদে জবাবদিহিতা করছি বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের কাছে। একদিন এসে একেকটা কাগজ খুঁজে। অথচ পাহাড় কেটে অবৈধভাবে যারা বসবাস করছে সেখানে শত শত ঘরে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে কোন কাগজপত্র দিতে হয়নি কাউকে। বরং কর্মকর্তারা সেখানে সংযোগ দিতে আগ্রহী বেশি।

নাম প্রকাশে না করার শর্তে মাঝের ঘোনা এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি জানান, পাহাড় কেটে ১৬০ বর্গফুট আয়তনের একেকটি প্লট তৈরি করা হয়। সমতল হলে একটি প্লটের মূল্য তিন থেকে ছয় লাখ ও পাহাড়ের চূড়া কিংবা মাঝামাঝিস্থানে হলে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় প্রতিটি প্লট বিক্রি করা হয়।

মাঝের ঘোনায় পাহাড় কাটার অপরাধে লাল বাদাশাসহ ৮ জনকে আসামি করে বায়েজিদ থানায় সম্প্রতি মামলা দায়ের করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক (মেট্রো) আবদুল্লাহ আল মতিন।

মামলার আসামিরা হলেন, শাহজাহান বাদশা প্রকাশ লাল বাদশা, মো. আরিফ, আরেফিন নগরের আজিজুল হক, খাগড়ছড়ির জ্ঞান জ্যোতি ভিক্ষু, বাঁশখালীর গন্ডামারার বেলাল উদ্দিন মিজান, পুইছঁড়ির সারোয়ার আলম, কালুরঘাট সিএন্ডবি এলাকার নুরুল আমিন ও খাগড়াছড়ির গুইমারার অংশি মার্মা। তাদের সবার বিরুদ্ধে পাহাড় কেটে বাড়ি তৈরি, প্লট আকারে বিক্রি ও মন্দির তৈরি করে পাহাড় দখলের অভিযোগ আনা হয়েছে মামলার এজাহারে।

বায়েজিদ থানার পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, যাদের নাম বলা হচ্ছে তারা পাহাড় কেটে প্লট বিক্রির সাথে জড়িত। এদের মধ্যে লাল বাদশা ও আরিফের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে। দুজনেই পলাতক রয়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, পাহাড়ের বুক চিরে মাটি কেটে প্লট তৈরি করা হয়েছে। ঘরের আশে পাশে রোপণ করা হয়েছে কলাগাছ। উচ্ছেদ ঠেকাতে পাহাড়ের চূড়ায় তৈরি করা হয়েছে একাধিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। আরেফিন নগর বাজার থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুবিধা থাকার কারণে মাঝেরঘোনা পাহাড়ি এলাকাটি দখল করেছে পাহাড়খেকোরা।

দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে কেটে তৈরি করা হয়েছে সরু রাস্তা। সামনে যেতেই দেখা গেলো পাশাপশি কয়েকটি পাহাড়ের পাদদেশ কেটে তৈরি করা হয়েছে প্লট। চারপাশে লাগানো হয়েছে কলাগাছ। দেখেই বোঝা যায় সেখানে কয়দিন পর তৈরি করা হবে বসতঘর। এলাকার পাহাড়গুলো বাদশার নিয়ন্ত্রণে। তিনিই পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করে বিক্রি করেন। মন্দিরের জন্যও জমি দিয়েছেন বাদশা। এব্যাপারে আলাপ করলে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, বাদশার বিরুদ্ধে বায়েজিদ ও সীতাকুণ্ড থানায় ১১টি মামলা রয়েছে। নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী, ডবলমুরিং ও ভূজপুর থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে আরিফের বিরুদ্ধে । দৈনিক পূর্বকোণ  

খালেদ / পোস্টকার্ড ;