রোহিঙ্গারা টেকনাফ কক্সবাজারে আসার পর থেকেই ভয়াবহ প্রভাব স্থানীয়দের জীবনে

আলমগীর হোসেন , সময়ের আলো ।।

রোহিঙ্গারা টেকনাফ কক্সবাজারে আসার পর থেকেই ভয়াবহ প্রভাব স্থানীয়দের জীবনে
রোহিঙ্গারা টেকনাফ কক্সবাজারে ঠাঁই নেওয়ার পর থেকেই ভয়াবহ প্রভাব স্থানীয়দের জীবনে
দুই বছর আগেও যে মাছ কক্সবাজারে বিক্রি হতো ১৫০ টাকা কেজি সেটি এখন কমপক্ষে ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। যে সবজি বা তরকারি পাওয়া যেত ২০ টাকা কেজিতে তা এখন ৮০-১০০ টাকা। যে বাসার ভাড়া ছিল পাঁচ হাজার, এখন সেটি ১৫ হাজার। ১৫০-২০০ টাকায় যেখানে ভালো মানের হোটেলে একবেলা খাওয়া যেত সেখানে একই খাবার খেতে লাগে ৪০০-৫০০ টাকা।
 
মূলত, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা কক্সাবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় ঠাঁই নেওয়ার পর থেকেই এখানকার স্বাভাবিক জীবনযাপন প্রক্রিয়া এভাবেই পাল্টে গেছে বলে জানা গেছে। নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে কয়েকগুণ ব্যয় বেড়েছে কক্সবাজারে।
 
গত এক সপ্তাহ জুড়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
 
সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে রোহিঙ্গা এবং তাদের নিয়ে কাজ করা দেশি-বিদেশি এনজিওর লাখো কর্মীর কারণে কক্সবাজারের স্থানীয় সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। এর সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে স্থানীয়দের জীবনে। পাশাপাশি ধীরে ধীরে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দেশেই। নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে প্রায় সব ক্ষেত্রেই জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। কক্সবাজারের অল্পসংখ্যক স্থানীয় মানুষ বাসা ভাড়া দিয়ে বা নানা ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে লাভবান হলেও অধিকাংশ স্থানীয়রা পড়েছে আর্থিক সংকটে।
 
রোহিঙ্গারা শ্রমবাজারেও বেশ অবস্থান করে নিয়েছে। স্থানীয় একজন শ্রমিক যেখানে দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরিতে কাজ করত সেখানে রোহিঙ্গা শ্রমিক সেই কাজ করছে ২০০ টাকায়। ফলে স্থানীয় শ্রমজীবীরাও পড়েছে ভয়ানক সংকটে। এ ছাড়াও নানা পরিচয়ে ও কৌশলে রোহিঙ্গা নাগরিকরা ছড়িয়ে গেছে প্রায় সারা দেশেই।
 
কক্সবাজারের স্থানীয়রা বলেছে, এক শ্রেণির রোহিঙ্গা নাগরিকের হাতে এখন লাখ লাখ টাকা রয়েছে। কেউ কেউ কোটি টাকারও মালিক। বাংলাদেশে এসে বসে থেকে জীবন জীবিকার জন্য যা যা দরকার তা সবই ফ্রি পাচ্ছে রোহিঙ্গারা। এর সঙ্গে তারা বাড়তি কিছু টাকা ব্যয় করে অপ্রকাশ্যে অভিজাত জীবন নির্বাহ করছে। অন্যদিকে এসব রোহিঙ্গার মানবাধিকার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ নানা বিষয় নিয়ে কাজ করা বিপুলসংখ্যক এনজিও কর্মীর বিলাসী জীবনযাপনেরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে স্থানীয়দের জীবনে।
 

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের কলাতলীর স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ডিএম রুস্তম সময়ের আলোকে বলেন, মূলত রোহিঙ্গা নিয়ে কাজ করা এনজিও কর্মীদের কারণে কক্সবাজারের সাধারণ মানুষদের জীবনযাপন পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে কাজ করার ফলে এনজিও থেকে মোটা অঙ্কের বেতন ভাতা পাচ্ছেন এনজিও কর্মীরা। এ কারণে বাজারে গিয়ে কোনো কিছু কিনতে গেলে বিক্রেতারা যা মূল্য চাচ্ছে তা দিয়েই কিনে নিচ্ছে এনজিও কর্মীরা। দামাদামির প্রয়োজনও মনে করে না তারা। এনজিও কর্মীদের এই বিলাসী জীবনের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে কক্সবাজারের স্থানীয় সাধারণ মানুষের জীবনে।

১৪ সেপ্টেম্বর টেকনাফের নয়াপাড়া-শালবন এলাকার স্থানীয় মুদি দোকানি মো. রাসেল সময়ের আলোকে বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে আমরা এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়ে গেছি। পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ এখন বলতে গেলে রোহিঙ্গাদের হাতে। এখানকার ব্যবসা, হাটবাজার, লোকাল পরিবহন ব্যবস্থা, শ্রমবাজার সবখানেই এখন রোহিঙ্গাদের প্রভাব বেড়ে গেছে।
 
তিনি জানান, তার দোকানের পাশে অধিকাংশ দোকানের মালিক এখন রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের এসব দোকানে নিত্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে। এর কারণ রোহিঙ্গারা যেসব পণ্য রেশনসহ নানা মাধ্যমে ফ্রি বা কম মূল্যে পাচ্ছে সেগুলো অতিরিক্তগুলো রোহিঙ্গাদের দোকানেই তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করছে। ফলে ওইসব রোহিঙ্গা দোকানিও কম মূল্যে সেগুলো খুচরা বিক্রি করতে পারছে। অন্যদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বেশি মূল্যে মালামাল কেনার কারণে বাজারমূল্যে ছাড়তে গিয়ে ক্রেতা পাচ্ছে না। কেননা একই পণ্য রোহিঙ্গা দোকানে দাম কম হওয়ায় সবাই সেখান থেকেই কিনছে। এভাবেই চলছে এখানকার অধিকাংশ ব্যবসা-বাণিজ্য ও শ্রমবাজার। এই অবস্থার ফলে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়েছে স্থানীয় সাধারণ মানুষ।
 
‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’ (সুজন)-এর কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, রোহিঙ্গা এবং তাদের নিয়ে কাজ করা এনজিও কর্মীদের কারণে পুরো কক্সবাজারই আর্থ-সামাজিক সংকটের মুখে পড়েছে। রোহিঙ্গাদের কারণে সব ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক বা অরাজকতা বিরাজ করছে। এসব বিষয়ে সরকার তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এখনই জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় আরও বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে কক্সবাজারবাসী তথা সারা দেশকে।
 

‘আমরা কক্সবাজারবাসী’র সমন্বয়ক করিম উল্লাহ কলিম সময়ের আলোকে বলেন, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের সরকার আশ্রয় দিলেও এখন তারা আমাদের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও তাদের কারণে অনেক সময় হুমকির মধ্যে পড়ছে। এ ছাড়া মূলত ইয়াবার বীজ রোপণও করেছে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গা শিবিরে বসে তারা আয়েসে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে কামাচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। সেই টাকার ফলে তাদের জীবনযাপনের স্টাইলও পাল্টে যাচ্ছে। এ সবকিছুর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনে। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ জরুরি।