বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের সাথে জিয়া জড়িত : বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় শেখ হাসিনা

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের সাথে জিয়া জড়িত : বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় শেখ হাসিনা
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের সাথে জিয়া জড়িত : বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের সাথে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিল বলেই মোশতাক তাকে সেনাপ্রধান করেছিলেন। মোশতাক জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করল, কারণ মোশতাকের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ছিল জিয়া, তাহলে ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের সঙ্গে জিয়া যদি জড়িত না থাকবে বা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত না থাকবে বা তার শক্তিতেই তারা যদি এ ঘটনা না ঘটাবে তাহলে মোশতাক কেন জিয়াকে সেনাপ্রধান বানাবে। এটাও তো বড় কথা।
শনিবার বিকালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। একাত্তর ও পঁচাত্তরের ঘটনা প্রবাহের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে পাকিস্তানের একটা প্রদেশ হিসেবে  গড়ে তোলাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। আর যে কারণে আমাদের যারা জ্ঞানী-গুণী, বুদ্ধিজীবী সমাজের, যারা মাথা তাদের হত্যা করে নিশ্চিহ্ন করে এ সমাজটাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। আর ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা আর মিথ্যা একটা ইতিহাস তৈরি করা, মানুষকে বিভ্রান্ত করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। কিন্তু সত্যকে কেউ কখনও একেবারে মুছে ফেলতে পারে না, আজকে সেটা প্রমাণ হয়েছে সারা বিশ্বে। আজকে প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশের জনগণের কাছে। আজকের প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুদ্ধিজীবীদের নাম কেউ মুছে ফেলতে পারেনি, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। ভবিষ্যতে যেকোনো ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে নতুন প্রজন্মকে সতর্ক থাকার আহবান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আজ যেসব বুদ্ধিজীবী জীবন দিয়ে গিয়েছেন এ দেশের জন্য, ‍যাদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাদের নামটাও মুছে ফেলা হয়েছে। যে স্বাধীন দেশ জাতির পিতা দিয়ে গিয়েছেন সেই স্বাধীনতাকে সমুন্নত রেখে, বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে সেভাবেই এগিয়ে যাবে। বিশ্বে বাংলাদেশের সবাই যেন মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে তাহলে লাখো শহীদের আত্মত্যাগ ও তাদের যে মহান অবদান সেটা শিরোধার্য হয়ে থাকবে।  
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলার মাটিতে বারবার মীরজাফরদের জন্ম হয়েছে এবং তারা দেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছে কিন্তু পারেনি। এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে যারা বিশ্বাস করে, তারাই জয়ী হয়েছে। তিনি বলেন, এ দেশে মোশতাক, জিয়ার মতো মীরজাফররা আর যেন কোনো দিন ক্ষমতায় না আসতে পারে এবং দেশের উন্নয়ন যেন বাধাগ্রস্ত না করতে পারে সেদিকে সবার দৃষ্টি দিতে হবে।
জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি, স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, হত্যা, খুন, সন্ত্রাস আর লুটপাট করেছে তাদের রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছেন জিয়া। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা পালিয়েছিল তাদের ধরে এনে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছেন। খালেদা জিয়া আরও এক ধাপ এগিয়ে যুদ্ধাপরাধী ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের মন্ত্রী বানিয়েছেন। তাদের গাড়িতে লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা লাগিয়ে দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর আহŸানে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় জামায়াতসহ ধর্মান্ধ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তারা আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী গঠন করে পাকিস্তান বাহিনীকে সহায়তার পাশাপাশি হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুট করে।
তিনি বলেন, বাঙালি জাতির বিজয়ের প্রাক্কালে তারা দেশের শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী ও প্রকৌশলীসহ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশের একজন মানুষও যেন খাদ্যে কষ্ট না পায় সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ওপর কালো মেঘের ছায়া ছিল, সে মেঘ কেটে গেছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।
সভার শুরুতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ, আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি ও উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান।