বি এম ডিপোর বিস্ফোরণ, বুক ফাঁটা আর্তনাদ - কামরুন নাহার পারভীন

বি এম ডিপোর বিস্ফোরণ, বুক ফাঁটা আর্তনাদ  - কামরুন নাহার পারভীন
বি এম ডিপোর বিস্ফোরণ, বুক ফাঁটা আর্তনাদ - কামরুন নাহার পারভীন

আজ সকালে সীতাকুন্ড থেকে আসছিলাম। বিএম কেনটেইনার ডিপোর কাছাকাছি আসার পর মনটা কেমন জানি করছিল। এলাকা যখন পার হচ্ছিলাম তখন নিজের অজান্তে চোখ দিয়ে পানি গড়ালো।

এই রাস্তা দিয়ে সপ্তাহখানেক আগে শত শত মানুষ বাঁচার আকুতি নিয়ে ছটফট করছিল, আগুনের লেলিহান শিখা, এ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন, ফায়ার বিগ্রেডের গাড়ীর সাইরেন, মানুষের চিৎকার সব মিলিয়ে কি বিভীষিকাময় অবস্থা ছিল তা ভাবতেই বুকটা কেঁপে উঠছিল।

যে বাবাটা সন্তানকে কথা দিয়েছিল নাইট ডিউটি সেরে সকালে সন্তানের জন্য আম, জাম, লিচু নিয়ে ঘরে ফিরবে, অন্তসত্বা স্ত্রীকে কথা দিয়েছিল সকালে এসেই তাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে, মাকে কেউ কথা দিয়েছিল সকালে ফিরে মায়ের সাথে নাস্তা করবে, কোন ভাই বোনকে কথা দিয়েছিল স্কুলে যাওয়ার আগেই তারজন্য খাতা পেন্সিল নিয়ে হাজির হবে তারা আর ফিরে যেতে পারেনি প্রিয় পরিবারের কাছে। প্রিয় মানুষদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েই তো তারা পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে নতুন সকালে দেখা হবে ভেবে বুক ভরা আশা নিয়ে গিয়েছিল। সোনালী সকালটা তাদের জীবনে আসেনি। সকালের আগেই মধ্যরাতে হাত পা ভাঙ্গা, নাড়ি ভুড়ি বের করা, সারা গায়ে ঝলসে যাওয়া রক্তাক্ত শরীর নিয়ে হাহাকার করছিল। অনেক না বুঝার আগেই জলন্ত অগ্নিপিন্ড হয়ে একটা ছোট পুতুল বা একটুকরো কয়লা হয়ে গিয়েছিল।

চোখ দিয়ে ভাসছিল গাউসিয়া কমিটির স্বেচ্ছাসেবীদের হাতে দুই টুকরা হওয়া মানুষের দেহের ছবি, সারা গা ঝলসে যাওয়া কিশোরটার ছবি, নাড়ি ভুড়ি পেটের সাথে চেপে ধরে বাঁচার আশায় অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা যুবকটার ছবি।

ডিপোতে ঢুকার মুখটা শোকাহত লিখা ব্যানারে সয়লাব। এই শোক কি ফিরিয়ে দিতে পারবে সে সব মানবসন্তানদের?

হায়রে মানুষ, হায়রে জীবন, হায়রে টাকা, হায়রে লালসা। এইভাবে লালসার কাছে আর কত বলি হবে খেটে খাওয়া জনগন?

সুরক্ষা নিশ্চিত করা সংস্থা গুলো কার উপর দায় চাপাবে, মালিকপক্ষ কৌশলে কিছু অর্ধ পোড়া, শরীর ঝলসানো, হতবাক কর্মকর্তাদের মাথায় কাঁঠাল তুলে দিয়েছে।

এইরকম দায়সারা অবস্থা চলতে থাকুক। হয়ত অচিরেই বাড়বাকুন্ডে বিস্তীর্ন এলাকায় গড়ে উঠা গ্যাস প্লান্ট গুলো লেলিহান শিখায় জানান দিবে আমাদের চরিত্র বদলাবে না, আমাদের শিক্ষা হবে না। আমরা এমন ভাবেই থাকবো। এমনভাবেই উন্নয়নে অংশীদার হবো।

আল্লাহ সবাইকে সুবুদ্ধি দিক, লোভ লালসা নিবারণ করে মানুষ ও মানবতাকে মূ্ল্যায়ন করার তৌফিক দিক।

সকল নিহতদের বেহেশত নসীব করুক। সকল হতাহতদের সুস্আথ করে দিক। শোকার্ত পরিবারগুলোকে এই শোক সইবার শক্তি দিক। আমিন

লেখক- প্রাবন্ধিক, সমাজ ও  উন্নয়ন কর্মী ।