পশ্চিমবঙ্গ জ্বলছে : ভারতের ছয় মুখ্যমন্ত্রীর আইনটি না মানার ঘোষণা

পশ্চিমবঙ্গ জ্বলছে : ভারতের ছয় মুখ্যমন্ত্রীর আইনটি না মানার ঘোষণা
পশ্চিমবঙ্গ জ্বলছে : মমতার পাশে ৬ মুখ্যমন্ত্রী, আইন না মানার হুমকি

পোস্টকার্ড ( আন্তর্জাতিক) ডেস্ক ।।

বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (এনআরসি) লোকসভার পর এবার রাজ্যসভাতেও পাস হয়ে গেছে। ভারতে সদ্যপ্রণীত অমুসলিমদের নাগরিকত্ব প্রদান সংক্রান্ত বিতর্কিত আইন না মানার ঘোষণা দিয়ে গতকাল গণআন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীসহ এবার ভারতের ছয় মুখ্যমন্ত্রী আইনটি না মানার ঘোষণা দিয়েছেন।

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এই গণআন্দোলনের ডাক দেন। এরপর একে একে এই আইন না মানার হুমকি দেন আরও ৫ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।

পশ্চিমবঙ্গের পর দিল্লি, পাঞ্জাব, ছত্তিশগড়, কেরালা ও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা বিজেপি সরকারের বিতর্কিত এই নাগরিকত্ব প্রদান সংক্রান্ত আইন কোনোভাবে তাদের রাজ্যে প্রয়োগ করতে দেবেন না বলে হুমকি দিয়েছেন।

এমনকি মহারাষ্ট্রে শিবসেনা সরকারের শরিক কংগ্রেসের এক মন্ত্রীও আইনটি রাজ্যে প্রয়োগ করতে না দেওয়ার ঘোষণা দেন। তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া এবং কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলো থেকে একযোগে প্রতিবাদের ডাক ওঠায় আজ শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটি একটি কেন্দ্রীয় আইন। তাই ওই আইন সব রাজ্যেই প্রযোজ্য হবে। কোনও রাজ্য সরকারের তা আটকানোর অধিকার নেই।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ইতোমধ্যেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএবি) পশ্চিমবঙ্গে হতে দেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি এর বিরুদ্ধে নিজে মাঠে নামার ঘোষণা ছাড়াও বিজেপি বাদে অন্য সব রাজনৈতিক দলকে এর প্রতিবাদে গণআন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান।

মমতার মতো বাকি রাজ্যগুলোরও অন্য রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরাও একই সূরে কথা বলেছেন। দিল্লিতে ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও পাঞ্জাবে রাজ্যে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংও একই নাগরকিত্ব আইন তাদের রাজ্যে প্রয়োগ হতে দেবেন না বলে জানিয়েছেন।

বিক্ষোভ সবচেয়ে জোড়ালো আসামে। নিহত পাঁচজনের সবাই ওই রাজ্যটির। এদিকে গতকাল থেকে উত্তরপূর্ব ভারতের আরেক রাজ্য মেঘালয়ও উত্তাল। শিলংয়ে কারফিউ জারিসহ ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এদিকে শুক্রবার বিক্ষোভ উত্তাল হয়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আশ্বাস-অনুরোধ সত্ত্বেও আসামে আগুন জ্বলছে। বিক্ষোভ সামাল দিতে নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। জারি করা হয়েছে কারফিউ। সবকিছু অগ্রাহ্য করে রাজ্যটির শহরে শহরে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। আগুন জ্বেলে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে আইনের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা।

প্রসঙ্গত, ভারতের ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে এই সংশোধনে গত সোমবার ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় একটি বিল (সিএবি) উত্থাপন করনে অমিত শাহ। ব্যাপক বিতর্কের পর সেদিন মধ্যরাতে বিলটি পাস হয়। এরপর গত বুধবার রাজ্যসভাতেও বিলটি পাসের পর রাষ্ট্রপতি গত বৃহস্পতিবার স্বাক্ষর করায় সেটি এখন আইন।

নতুন এই আইন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ ২০১৫ সালের আগে প্রতিবেশী পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে ‘ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার’ হয়ে যেসব অমুসলিম (হিন্দু, শিখ, খ্রিষ্টান, জৈন, পারসি ও বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা) ভারতে গেছেন তাদেরকে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে।

বিরোধী দলের এমপিরা পার্লামেন্টে মোদি সরকারের প্রস্তাবিত এই বিলটিতে আপত্তি জানালেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিলটি পাসে কোনো বেগ পেতে হয়নি সরকারকে। বিরোধীরা বলছেন, নতুন আইনের মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের নাগরিক সুরক্ষাকে উপেক্ষা করা হবে, যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্য আসামসহ উত্তরপূর্ব ভারতে বিক্ষোভকারীদের দাবি, আইনটির মাধ্যমে অন্য দেশ থেকে আসা অভিবাসীরা সহজেই এ দেশের (ভারতের) নাগরিকত্ব পাবেন। তাতে সংকটে পড়বেন আদি বাসিন্দারা। তবে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেছেন, আইনটিতে উত্তরপূর্বের অনেকটা অংশই বাদ দেয়া হয়েছে।