নিরুদ্দেশ হওয়া আরো ৫ জন গ্রেফতার, ৩৮ জঙ্গি অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলে

নিরুদ্দেশ হওয়া আরো ৫ জন গ্রেফতার,  ৩৮  জঙ্গি অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলে
নিরুদ্দেশ হওয়া আরো ৫ জন গ্রেফতার, ৩৮ জঙ্গি অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলে

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অস্ত্র চালানো ও বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ নিচ্ছে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে নিরুদ্দেশ হওয়া আরো ৩৮ জন তরুণ । পার্বত্য অঞ্চলের একাধিক আঞ্চলিক সংগঠনের ছত্রছায়ায় দুর্গম অঞ্চলে আত্মগোপনে থেকে তারা এ প্রশিক্ষণ গ্রহণসহ সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এদের বাইরেও গত রোববার (৯ অক্টোবর) দিবাগত রাতে রাজধানী ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে নিরুদ্দেশ থাকা ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত এসব তথ্য দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন বাহিনীকেও জানানো হয়েছে।

সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে এ তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন। এ সময় নিরুদ্দেশ থাকা ৩৮ জনের নাম পরিচয় এবং পরিবারের ফোন নাম্বারও প্রকাশ করা হয়।

তিনি জানান, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সম্মিলিত অভিযান চলমান রয়েছে। তিনি জানান, এর আগে গত ৬ অক্টোবর নিরুদ্দেশ হয় ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের দেওয়া তথ্যমতে ও তদন্তের ধারাবাহিকতায় রোববার রাতে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ এর যৌথ অভিযানে আরো ৫ জনকে ইফতার করা হয়। এই ৫ জন হলো-শাহ মো. হাবিবুল্লাহ ওরফে হাবিব (৩২), নেয়ামত উল্লাহ (৪৩), মো. হোসাইন (২২), রাকিব হাসনাত ওরফে নিলয় (২৮) এবং মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে রনি ওরফে জায়দ চৌধুরী (১৯)।

কমান্ডার আল মঈন বলেন, কুমিল্লা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ পর্যন্ত ৫৫ জন নিরুদ্দেশ হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। যারা নতুন কথিত জঙ্গি সংগঠন 'জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া'র ব্যানারে কাজ করছে বলে জানা গেছে। যাদের মধ্যে দুই অভিযানে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হলেও এর বাইরে ৩৮ জন বর্তমানে পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণরত রয়েছে বলে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত হাবিবুল্লাহ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন। পাহাড়ের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছাত্র সংগ্রহ করে তার মাদ্রাসায় রাখেন। এই মাদ্রাসার আড়ালে জঙ্গিবাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। এসব ক্ষেত্রে কারা অর্থায়ন করছে তাদেরও কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, তদন্তকালে প্রাথমিকভাবে জানা যায়, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা গৃহ ত্যাগ করেছে। ইতোমধ্যে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৬ সেপ্টেম্বর ঘর ছাড়ার প্রস্তুতিকালে ৪ তরুণকে হেফাজতে নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয় র‌্যাব। পরবর্তীতে গত ১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ৮ তরুণের মধ্যে শারতাজ ইসলাম নিলয় (২২) নামক ব্যক্তি রাজধানীর কল্যাণপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। নিলয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ৬ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতী, তত্ত্বাবধানকারী, আশ্রয় প্রদান কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ৩ জন ও নিরুদ্দেশ ৪ তরুণসহ মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতরা উগ্রবাদী সংগঠনটির সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করে।

তিনি জানান, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কোমলমতি তরুণদেরকে সংগঠনের সদস্যরা টার্গেট করত। পরবর্তীতে তাদেরকে বিভিন্ন সময় মুসলমানদের উপর নির্যাতন নিপীড়নের বিভিন্ন ভিডিও দেখানো এবং বিভিন্ন অপব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করত। উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করার পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করার মাধ্যমে তরুণদেরকে সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে উৎসাহী করে তুলত। উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে গ্রেফতারকৃত হোসাইন এক বছর পূর্বে, গ্রেফতারকৃত সাইফুল দেড় মাস পূর্বে এবং গ্রেফতারকৃত রাকিব দুই মাস পূর্বে নিখোঁজ হয়।

জানা যায়, নিখোঁজ হওয়া তরুণদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পটুয়াখালী ও ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রেরণ করা হয়। নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদেরকে বিভিন্ন সেইফ হাউজে রেখে পটুয়াখালী এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে রেখে পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চর এলাকায় শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হত। এছাড়াও, আত্মগোপনে থাকার কৌশল হিসেবে তাদেরকে রাজমিস্ত্রী, রং মিস্ত্রী, ইলেক্ট্রিশিয়ানসহ বিভিন্ন পেশার কারিগরী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হত।

মঈন আরো বলেন, বিভিন্ন সময় গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণের সংখ্যা ৫০ এর অধিক। যারা প্রায় দেড় মাস থেকে দুই বছরের অধিক সময় ধরে নিরুদ্দেশ বা নিখোঁজ ছিল। এদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবার জানেন যে, তারা চাকরির জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন এবং নিয়মিত পরিবারকে অর্থ প্রদান করত। প্রাথমিকভাবে সংগঠনের সদস্যদের নিকট হতে তাদের নাম ও ঠিকানা পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্র বিশেষে নাম ও ঠিকানায় কিছুটা তারতম্য থাকতে পারে।

গ্রেফতারকৃত হাবিবুল্লাহ কুমিল্লায় কুবা মসজিদের নামাজ পড়াতেন। তিনি ২০২০ সালে নেয়ামত উল্লাহর মাধ্যমে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) সংগঠনটিতে যুক্ত হন। তিনি সংগঠনটির অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী ছিলেন। তার নেতৃত্বে কুমিল্লা অঞ্চলে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালিত হত। তিনি সংগঠনের জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ করতেন ও উগ্রবাদী কার্যক্রমে অর্থ সরবরাহ করতেন। এছাড়া গ্রেফতারকৃত নেয়ামত উল্লাহ কুমিল্লার একটি মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০১৯ সালে স্থানীয় একটি ব্যক্তির মাধ্যমে সংগঠনে যুক্ত হন। তিনি সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রমে যুক্ত থাকার পাশাপাশি নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বেও জড়িত ছিলেন। বাড়ি ছেড়ে যাওয়া সদস্যদের তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে আশ্রয় প্রদান করতেন বলে জানান।

এদিকে গ্রেফতারকৃত হোসাইন পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান এবং রং মিস্ত্রী। স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। দীর্ঘ এক বছর যাবত সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে জানান। অন্যদিকে গ্রেফতারকৃত রাকিব কুরিয়ার সার্ভিসে ডেলিভারি বয়ের কাজ করত। গ্রেফতারকৃত হোসাইনের মাধ্যমে সংগঠনে জড়িত হন। উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রায় দুই মাস পূর্বে নিরুদ্দেশ হয় রাকিব। গ্রেফতারকৃত সাইফুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। সে গত আগস্ট মাসে নোয়াখালী হতে জঙ্গিবাদে উদ্বুব্ধ হয়ে নিরুদ্দেশ হয়। নোয়াখালীর এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদী এই সংগঠনে জড়িত হয় বলে জানায়। সময়ের আলো

খালেদ / পোস্টকার্ড ;