থ্যালাসেমিয়া রোগী সরকারি ওষুধ পাবে

থ্যালাসেমিয়া রোগী সরকারি ওষুধ পাবে
থ্যালাসেমিয়া রোগী সরকারি ওষুধ পাবে

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

রবিউল হোসেন দুই সন্তানের জনক, দিনমজুর। সীতাকুণ্ডে তার আবাসস্থল। দীর্ঘদিন থেকেই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত তার দু’সন্তান। প্রতি মাসে দু’বার দুইজনের শরীরে রক্ত দিতে হয়। সাথে বিভিন্ন ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষাতো আছেই। দিনে কাজ করে রবিউল যা পান, তা দিয়ে সংসার চালাতেই কষ্ট তার। তারমধ্যে সন্তানদের ওষুধের খরচ যোগাড় করতেই কাহিল তিনি।

অন্যান্য রোগীর ক্ষেত্রে সরকারিভাবে ব্যবস্থা থাকলেও নেই থ্যালাসেমিয়া রোগীদের ওষুধ। তবে সুখের খবর, নতুন করে সরকার এসব থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের ওষুধ ক্রয়ে বরাদ্দ পেয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির ‘হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক অপারেশনাল প্ল্যান থেকে এ বরাদ্দ দেয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এক হাজারেরও বেশি থ্যালাসেমিয়া রোগী নিয়মিতই চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। কিন্তু তাদের চিকিৎসার খরচ শিথিল করা হলেও ছিল না ওষুধের ব্যবস্থা। তবে নতুন করে সরকারের এ বরাদ্দে অস্বচ্ছল থ্যালাসেমিয়া রোগীদের ওষুধ দিতে পারবে চমেক হাসপাতাল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, দিনদিন চমেক হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের এক হাজারেরও

বেশি রোগী এখানে সেবা নিয়ে থাকেন। যার বিষয়ে গত বছরে মে মাসে চমেক হাসপাতাল একটি পত্র দেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। এর প্রেক্ষিতে গত ২ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট বিভাগের লাইন ডাইরেক্টর ডা. মো. খুরশীদ আলম স্বাক্ষরিত এক পত্রে ২০ লাখ টাকার বরাদ্দ দেয়। তাতে বলা হয় এসব অর্থবিধি অনুযায়ী বিতরণ করতে হবে। একই সাথে হাসপাতালের প্রশাসনের অনুমোদনেই তা ব্যয় করতে পারবে। তবে বরাদ্দ পেলেও এ বিষয়ে যাবতীয় দাপ্তরিক কাজ শেষ করে টেন্ডার আহবানসহ আরও সময়ের প্রয়োজন হবে বলে জানায় হাসপাতাল প্রশাসন।

এদিকে, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত অস্বচ্ছল পরিবারের জন্য বিনা পয়সায় ওষুধের ব্যবস্থা করায় অনেকটাই কষ্ট লাঘব হবে বলে মনে করছেন থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সেবায় কাজ করা সিটিজি ব্লাড ব্যাংকের এডমিন সূর্য দাশ। তিনি বলেন, চমেক হাসপাতালে প্রতিদিন দুই থেকে তিনজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর রক্তের ব্যবস্থা করছে সিটিজি ব্লাড ব্যাংক। একই সাথে অস্বচ্ছল পরিবারের ওষুধ ক্রয়ের ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করে আসছে। তবে সরকারিভাবে এমন উদ্যোগ নেওয়ায় দরিদ্র ও অস্বচ্ছল পরিবারের জন্য অনেকটাই সুফল আনবে। আশাকরি এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে’। তিনি বলেন, ‘একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর প্রতি মাসে কমপক্ষে দু’বার রক্তের প্রয়োজন হয়। একই সাথে প্রয়োজন ওষুধ ও ইনজেকশন। রক্তের ব্যবস্থা করা গেলেও ওষুধের দাম অন্যান্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। যা অস্বচ্ছল পরিবারের ক্ষেত্রে ক্রয় করা কষ্টসাধ্য। শুধু ওষুধের বাজেট নয়, সব বিষয়ে দায়িত্ব নিলে রোগীদের জন্য ভাল হবে’।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাজেট পাওয়া গেছে। তবে এখনো দাপ্তরিক কাজ বাকি রয়েছে। সেই কাজ শেষ হলে টেন্ডারের মাধ্যমে এসব ওষুধ ক্রয় করা হবে। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য এসব ওষুধ অনেকাংশেই তাদের ব্যয় কমিয়ে আনবে’।