জামায়াতের সঙ্গে জঙ্গিদের সম্পৃক্ততা খুঁজছে কাউন্টার টেরোরিজম

জামায়াতের সঙ্গে জঙ্গিদের সম্পৃক্ততা খুঁজছে কাউন্টার টেরোরিজম
জামায়াতের সঙ্গে জঙ্গিদের সম্পৃক্ততা খুঁজছে কাউন্টার টেরোরিজম

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সাথে জামায়াতের কোনো সংযোগ - যোগাযোগ রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের ছেলে ডা. রাফাতকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেছেন, এ সংগঠনের সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক ডা. রাফাত জামায়াত আমীরের ছেলে বলে আমরা জানতে পেরেছি। বাবার সংগঠনের (জামায়াত) কোনো নির্দেশনা ছিল কি না বা তাদের দ্বারা নির্দেশিত হয়ে নতুন এ জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হয়েছেন কি না তা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে দেখা হবে।

সিটিটিসির দাবি, গ্রেপ্তার ডা. রাফাত চৌধুরী নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গত ১ নভেম্বর রাজধানীর সায়দাবাদ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সেজাদুল ইসলাম সাহাব তানিম ওরফে ইসা ওরফে আরাফাত ওরফে আনোয়ার ওরফে আনবির (২৪), মো. জাহিদ হাসান ভূঁইয়া (২১) ও সৈয়দ রিয়াজ আহমদ (২২) নামে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা সিলেট থেকে হিজরত করেছিলেন। বাংলাদেশে সম্প্রতি যত যুবক হিজরত করেছেন এর মধ্যে সিলেটে বেশি। সর্বপ্রথম সিলেট থেকেই হিজরত শুরু করেন তারা। সেই হিজরতকালীন মাস্টার মাইন্ড ডাক্তার রাফাত।

তিনি আরও বলেন, ডাক্তার রাফাত একটি মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাস করে ইন্টার্ন করছিলেন। পূর্বে গ্রেপ্তার তানিম, আনবির ও জাহিদের দেওয়া জবানবন্দিতে উঠে এসেছে, তিন যুবকসহ যারাই সিলেট থেকে হিজরত করেছে, নতুন করে দীক্ষা ও রেডিকালাইডজ হয়েছে এর নেপথ্যে মূল ব্যক্তি ছিলেন ডাক্তার রাফাত।

ডাক্তার রাফাতের নেতৃত্বেই ২০২১ সালের জুন মাসে ১১ যুবক সিলেট থেকে হিজরত করে। তখন তা বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। তারা বান্দরবানে যায় কিন্তু কোনো কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তারা সাত দিন পর সিলেটে ফিরে আসে। তবে তৎপরতা বন্ধ রাখেনি। ডাক্তার রাফাতের মতো বড় সহযোগী ও সংগঠক তাহহিয়াত। সে আবার গত বছরের আগস্টে পুনরায় হিজরত করে। নাইক্ষ্যংছড়ি পাহাড়ে প্রশিক্ষণ ফেরত এক যুবককে আমরা শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তাহহিয়াতের ছবি দেখালে তিনি তা শনাক্ত করেন। তাহহিয়াতসহ বেশ কয়েকজন তখন ২০২১ সালের আগস্টে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যোগদান করেন।

সিলেট অঞ্চল থেকে যেসব যুবক হিজরত করেছে তাদের দীক্ষা, প্রভাবিত করা, দাওয়াত দেওয়া, হিজরতে উদ্বুদ্ধ ও প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন ডা. রাফাত।

কুমিল্লার ঘটনার পর নতুন জঙ্গি সংগঠনের নাম উঠে আসে। এরপর সিটিটিসিসহ অন্যান্য বাহিনী ব্যাপক অভিযান শুরু করে। তারা গা ঢাকা দেয়। তারা আবার সিলেট থেকে হিজরতের প্রস্তুতি নেয়। গত ১ নভেম্বরে গ্রেপ্তার তানিম, আনবির ও জাহিদের আরও অনেককে নিয়ে পুনরায় বড় রকমের হিজরতের কথা ছিল। তবে তাদের দেওয়া তথ্যে ডা. রাফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আসাদুজ্জামান বলেন, ডা. রাফাত দীর্ঘদিন ধরে সিলেট অঞ্চলের ধর্মভীরু যুবকদের জিহাদ ও জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ, প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছিল। কোরআন প্রশিক্ষণের আড়ালে জঙ্গিবাদের দীক্ষা দেওয়া হচ্ছিল। তারা বেশ কয়েকজন জিহাদে উদ্বুদ্ধ যুবককে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রশিক্ষণের সক্ষমতাও তারা যাচাই করেছে। আমরা সেই বোমা বানানোর কারিগরকে শনাক্ত করেছি। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

হিজরত করতে প্রস্তুত সিলেট অঞ্চলের আরও বেশ কয়েকজন যুবককে আমরা শনাক্ত করেছি। হিজরতের আগেই আমরা মাস্টার মাইন্ড ডা. রাফাতকে গ্রেপ্তার করেছি। তাকে বিজ্ঞ আদালতে রিমান্ড চেয়ে পাঠিয়েছি। রিমান্ড পেলে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব, সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সিলেট কেন্দ্রিক তাদের পরিকল্পনা জানতে পারব।

ডা. রাফাতের সঙ্গে জামায়াত বা শিবিরে কোনো যোগাযোগ রয়েছে কী-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক সময় শিবির করেছেন ডা. রাফাত। তবে তার কি ধরনের নেতা ছিলেন সেটা জানায়নি। বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে তার যে সিক্রেট যোগাযোগ তা খতিয়ে দেখছি।

অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের ন্যায় হামলা-নাশকতার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য রয়েছে কী-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সংগঠনের মাস্টার মাইন্ড শামীম মাহফুজ। তার সহযোগী তমাল। তাদের গ্রেপ্তার করা গেলে এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানা যাবে। জঙ্গি সংগঠন মাত্রই হামলা, শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা থাকে। সেই লক্ষ্যে হামলা করে। তবে এই নতুন জঙ্গি সংগঠন এখন পর্যন্ত যেতেই পারেনি। প্রস্তুতি পর্বেই আমরা তাদের থামিয়ে দিতে পেরেছি।

খালেদ / পোস্টকার্ড;