চট্টগ্রামের ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ 

চট্টগ্রামের ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ 
চট্টগ্রামের ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ 

নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ।।

জাহাজ নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের বিরুদ্ধে ঠিকাদার, ভূমিদাতা, শ্রমিক কর্মচারী ঠিকাদারের সাথে শত শত কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতারণার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থরা ইতোমধ্যে অনেকে মামলাও করেছে। 

জানা গেছ, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড ২০০০ সালে চট্টগ্রামের পটিয়ায় কালারপোল এলাকার ছাবের আহমদসহ স্থানীয়দের জমি ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। গত ২০১০ সালে ছাবের হাজী ১৩ কানি জায়গা মাসিক ভাড়া ১ লক্ষ ২০ হাজার করে ১০ বছরের জন্য ভাড়া নেয়। কিছুদিন ভাড়া দেয়ার পর গত ২০১৭ সাল পর্যন্ত কোন ভাড়া না দেয়ায় বর্তমান প্রায় ভাড়া বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা পাওনা রয়েছে। পাওনা টাকা চাইলে বিভিন্নভাবে হুমকি, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোসহ ভয় দেখান। এ ঘটনায় গত ২৩ ডিসেম্বর পটিয়া থানায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সোহেল হাসান(৩০), ফজলে রাব্বী(৫৪), আব্দুল কাদেরসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে পটিয়া থানায় তৌহিদুল হাসান অভিযোগ করেন। এর আগেও উক্ত টাকা চেয়ে জমির মালিক প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক  ক্যাপ্টেন সোহেল হাসান, পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন, আব্দুল মোবিন, ফজলে রশীদ, মঞ্জুর মোরশেদ চৌধুরী, আরিফুর রহমান খান, শাহ আলম, ফজলে রাব্বীকে গত ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টম্বর আইগত নোটিশ পাঠানো হয়। এছাড়া উপজেলার লাখেরা এলাকার হাজী ছাবের আহমদ এর প্রতিষ্টান বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ ৬৯ লক্ষ ২৬ হাজার ৩৭৭ টাকা পাওনা রয়েছে। উক্ত টাকা পরিশোধ করার জন্যও কোম্পানির পরিচালনা পরিষদকে আইনী নোটিশ প্রদান করা হয়। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আদালতে তৌহিদুল হাসান বাদী হয়ে মামলা করেন। এছাড়া আবুল বশর আবু নামের এক ব্যক্তিও মামলা করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি থেকে পাওনা রয়েছে ইলিয়াছ কন্ট্রাকটার, আব্দুল হক হাজী, কাদের হাজী, হাশেম সওদাগর, আসাদ কন্ট্রাকর এবং বখতিয়ার পাড়া জামে মসজিদ, ফোরকান নামের এক ব্যক্তির ১০ কানি জায়গার ভাড়া বাবদ প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা পাওনা রয়েছে। জায়গাও ভাড়ায় চুক্তি করে অবৈধভাবে জোরপূর্বক দখলে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বহু মানুষের শত শত টাকা প্রতারণার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াত হোসেনকে দায়িত্ব থেকে জোর পূর্বক সরিয়ে দিয়ে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল হাসান দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে শুরু হয়েছে পরিচালকদের লুটপাট অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ফান্ডের কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে বিদেশে পাচার অভিযোগ রয়েছে অনেক এমডিসহ অনেক পরিচালকের বিরুদ্ধে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৯শজন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রায় এক বছর ধরে বেতন ভাতা বকেয়া থাকায় শ্রমিক কর্মচারীর লাগার কর্মসূচি বিক্ষোভও করে ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির কাজ থেকে টাকা পাওয়ার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও পটিয়ার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীকেও বিষয়টি স্থানীয়রা জানিয়েছেন। হুইপ সামশুল হক চৌধুরী শ্রমিকদের বেতন ভাতা প্রদান করার জন্য নির্দেশ দেয়ার প্রেক্ষিতে কয়েকবার দিলেও বর্তমান বহু মাসের বেতন ভাতাও আটকে রয়েছে।

এ বিষয়ে ওয়েস্টার্ন মেরিণ শিপইয়ার্ডের শ্রমিক নেতা রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমরা চাকুরী করলেও মাসের পর মাস বেতন ভাতা আটকে রেখেছে, বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করলে বিভিন্নভাবে হুমিক, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখান বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে তৌহিদুল হাসান নামের এক ব্যক্তি জানান, প্রতিষ্ঠানটি আমাদের জমি ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে, নিয়ম মতে কিছুদিন ভাড়া পরিশোধ করার পর প্রতারণা করে আমাদের ১৩ কানি জমির ভাড়া দিচ্ছে না তিন বছর ধরে এছাড়া মালামলা সরবরাহ করার বাবদ আমরা প্রায় কয়েক কোটি টাকা পাওনা রয়েছি, এলাকার মানুষের সাথেও ও বিভিন্ন জনের সাথে শত শত কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় আরেক জমির মালিক মোহাম্মদ ফোরকান বলেন, প্রতিষ্ঠানটি শুরু করার সময় আমাদের হাতে পায়ে ধরে জমিগুলো ভাড়া নেয়ার জন্য চুক্তি করেন, চুক্তিমত সব ঠিক থাকলেও নতুন এমডি আসার পর থেকে গত জ্জ বছর যাবত শ্রমিক, কর্মচারী,জমির মালিক, ঠিকাদারসহ শত শত মানুষের শত শত কোটি টাকা আটকে রেখেছে, বর্তমান এমডি মানুষের টাকা না দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্ঠা করছেন বলে অফিসের লোকজন আমাদেরকে জানিয়েছে। 

এ বিষয়ে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের পরিচালক ফজলে রশীদ ও আরিফুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোম্পানির কাজ থেকে কে টাকা পাবে সে বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ভাল বলতে পারবেন, আমাদের বোর্ড মিটিং এ বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা হয় না, কি কারণে এত বড় সমস্যার কথা গোপন রাখা হয়েছে পরের মিটিং এ খতিয়ে দেখবেন বলে জানান। এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সোহেল হাসানোর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করেনি।