ক্রসফায়ারে ইকরাম হত্যা বিষয়ে বিদায়ী আইজিপি

ক্রসফায়ারে ইকরাম হত্যা বিষয়ে বিদায়ী আইজিপি
ক্রসফায়ারে ইকরাম হত্যা বিষয়ে বিদায়ী আইজিপি

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

ড. বেনজীর আহমেদ অবসরে যাচ্ছেন । ২০২০ সালে পুলিশ মহাপরিদর্শকের দায়িত্ব নেওয়ার আগে এলিট ফোর্স র‌্যাবের মহাপরিচালকসহ দীর্ঘসময় ডিএমপি কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সঙ্গে চাকরিজীবনের সব স্তরেই মানুষের ভালোবাসাসহ অনেক সুনামও কুড়িয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বিদায়ী সংবাদ সম্মেলন করেন বেনজির আহমেদ। এ সময় নিজ দায়িত্ব পালনকালে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা নিয়েও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

ড. বেনজীর আহমেদ র‌্যাবের ডিজি থাকাকালীন কক্সবাজারে ইকরাম হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। সংবাদ সম্মেলনে আলোচিত এই ঘটনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সাংবাদিকদের কৌশলী জবাব দেন আইজিপি।

তিনি বলেন, আপনি যে ঘটনার কথা উল্লেখ করলেন তা একটি লিগ্যাল বিষয়। আর লিগ্যাল বিষয়ে অন্যায্য ও অনৈতিক না হওয়া পর্যন্ত আমার ব্যক্তিগত কোনো অভিমত নেই।

ওই সময় সাংবাদিকরা আইজিপিকে প্রশ্ন করেন- আপনার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে কক্সবাজারে ক্রসফায়ারে ইকরাম হত্যার ঘটনাটি আপনাকে অনুতপ্ত করে কি-না ও পুলিশের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, পুলিশের মাঝে মানবাধিকার লঙ্ঘন না করার চেতনা জাগ্রত করতে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন কি-না?

এই প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, এটা করেছে তারা তাদের ফিল্ড লেভেলে, সরকারি দায়িত্ব পালন করার সময়ে। তাদের হাতে যে ভদ্রলোক নিহত হয়েছেন তার সঙ্গে কিন্তু আমার কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। এটাকে আমরা অনেকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করি ব্যক্তিগত ইস্যু। যাদের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটেছে, তাদের সঙ্গে ওই ব্যক্তির পরিচয় ছিল না। ফলে বিষয়টাকে ব্যক্তিগতভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, যারা দায়িত্ব পালন করেন, সরকারি দায়িত্ব পালন করেন। এখানে দেখতে হবে সহকর্মী কোনো ম্যান্ডেটের বাইরে কাজ করেছে কি-না। যদি এর বাইরে কিছু করে থাকে, তবে তার বিরুদ্ধে আইনের লোক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে একাধিক তদন্ত হয়েছে। এখানে ম্যাজিস্ট্রেসি তদন্ত হয়েছে, বিভাগীয় তদন্ত হয়েছে। আমি যখন চলে আসি, সেখানে তদন্তের আদেশ দিয়েছি। তদন্ত হয়নি এটা বলা ঠিক হবে না।

IGP পুলিশ ও র‍্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানবাধিকার নিয়ে বলব- সরকারের একটি সংস্থা আছে। ১৯৮০ সাল থেকে বাংলাদেশ পুলিশকে জাতিসংঘ ইউনেস্কো থেকে, ইউনেস্কো আমাদের এক লাখ পকেট বুক দিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ে। পুলিশকে মানবাধিকার নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য এনজিওগুলোও শত শত কোটি টাকা এনেছে। তারা শত শত কোটি টাকা এনেছে শুধু পুলিশকে মানবাধিকার বিষয়ে ট্রেনিং দেবে বলে।

আইজিপি বলেন, এই হিসেব এখন বের করলে কয়েক হাজার কোটি টাকা হবে। আমরা কিন্তু এই টাকা আনিনি। এই টাকা আনছে এনজিওরা, কেন এনেছে শুধু পুলিশকে মানবাধিকার প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। এনজিও কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান না। এনজিওগুলো যখন পুলিশকে ডেকেছে, পুলিশ গেছে, প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। মানবাধিকারের বিষয়ে পুলিশ সবসময় ছিল ওপেন। গত ২৫-৩০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ও লোকাল এনজিও পুলিশকে মানবাধিকার প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য যুক্ত আছে।

বিদায়ী এই পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, আমাদের সংবিধান মানবাধিকার বিষয়ে ডেডিকেটেড। মানবাধিকার নিয়ে আমাদের সংবিধান রচিত হয়েছে। সমস্ত ভালো ভালো সংবিধান রচিত হওয়ার কাজ শেষ। যারা আমাদের সংবিধান তৈরির খসড়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের অধিকাংশই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আসা এবং দক্ষ। তারা তাদের দরদ দিয়ে পৃথিবীর সেরা সংবিধানগুলো থেকে মানবাধিকার বিষয়গুলো যুক্ত করেছেন। এত বিশদভাবে অন্য কোনো সংবিধানে মানবাধিকারের বিষয়গুলো আছে কি-না তা পড়ে দেখবেন। তাহলে বিচার করতে পারবেন আপনার সংবিধান কেমন, অন্যের সংবিধান কেমন।

বেনজীর আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে ‌সকল আইনের উৎস হচ্ছে সংবিধান। যদি কোনো আইন প্রণীত হয়, আর সেটা যদি সাংঘর্ষিক হয়, আমাদের দেশের সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট সেটা বাতিল করে। আপনারা জানেন এমন একাধিক আইন বাতিল করা হয়েছে। আমাদের সংবিধানেই দেশের মানুষকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়গুলো সংযুক্ত করা আছে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;