করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব সবচেয়ে বড় মন্দার মুখোমুখি

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব সবচেয়ে বড় মন্দার মুখোমুখি

 

বিবিসি বাংলা।।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, বিশ্বের অর্থনীতি এই বছরে অন্তত তিন শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যেহেতু কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বিশ্বের দেশগুলোর অর্থনীতির অবনতি হচ্ছে।

আইএমএফ বলছে, ১৯৩০-এর দশকের মহামন্দার পরে বিশ্ব সবচেয়ে বড় মন্দার মুখোমুখি হয়েছে।

সংস্থাটি বলছে, করোনা মহামারি যেভাবে বিশ্বকে সংকটে ফেলেছে, তা অভাবনীয়।

আইএমএফ বলছে, এই দীর্ঘমেয়াদি প্রাদুর্ভাব বিশ্বের সরকারগুলো এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সংকট নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতাও পরীক্ষার মুখে ফেলেছে।

আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ বলছেন, এই সংকটের ফলে সামনের দুই বছর ধরে বিশ্বের প্রবৃদ্ধি ৯ ট্রিলিয়ন ডলার কমে যেতে পারে।

সবচেয়ে বড় লকডাউন

আইএমএফ-এর সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর দ্রুত পদক্ষেপের যদিও প্রশংসা করা হয়েছে, কিন্তু সেখানে এটিও বলা হয়েছে যে, কোন দেশই অর্থনীতির অবনতি এড়াতে পারবে না।

সংস্থাটি আশা প্রকাশ করে বলেছে যে, মহামারির প্রকোপ যদি ২০২০ সালের দ্বিতীয় অর্ধেকে হ্রাস পায় তাহলে আগামী বছর বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি ৫.৮ শতাংশ হতে পারে।

মিজ গোপীনাথ বলছেন, বর্তমানের ‘গ্রেট লকডাউন’ নীতিনির্ধারকদের জন্য ‘কঠোর বাস্তবতা’ তুলে ধরেছে, যারা এই ভাইরাসের আঘাতের তীব্রতা ও স্থায়িত্ব সম্পর্কে কোন ধারণা করতে পারেন নি।

”২০২১ সাল নাগাদ এসব ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতে পারে,” বলছেন মিজ গোপীনাথ।

”কিন্তু ভাইরাস-পূর্ব সময়ে প্রবৃদ্ধির হার যেরকম ছিল, এই সময়ে হার তার চেয়ে কমই থেকে যাবে। সেই সঙ্গে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনাও অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে যাবে।”

বিশ্বজুড়ে পীড়া

মিজ গোপীনাথ বলছেন, মহামন্দার পরে এই প্রথমবারের মতো, উন্নত ও উন্নয়নশীল, উভয় ধরণের দেশই মন্দার কবলে পড়েছে।

আইএমএফ সতর্ক করে দিয়ে বলছে, উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর প্রবৃদ্ধিও অন্তত ২০২২ সালের আগে আর ভাইরাস-পূর্ব অর্থনৈতিক অবস্থায় ফিরে যাবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এ বছর ৫.৯ শতাংশ সংকুচিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা ১৯৪৬ সালের পরে সবচেয়ে বেশি পতন।

এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হারও বেড়ে ১০.৪ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২১ সাল নাগাদ সেটি আংশিক পুনরুদ্ধার হতে পারে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪.৭ শতাংশ।

চীনের অর্থনীতি এ বছর ১.২ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা ১৯৭৬ সালের পর সবচেয়ে শ্লথগতির।

১৯৯১ সালের পর প্রথমবারের মতো আবার মন্দার মুখে পড়তে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া।

আইএমএফ সতর্ক করে দিয়ে বলছে, এসব ঘটনার ক্ষেত্রে আরও খারাপ অবস্থার মুখোমুখি হতে পারে।

সংস্থাটি বলছে, মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে যদি আরও সময় লাগে এবং ২০২১ সাল নাগাদ যদি আরেক দফা প্রকোপ দেখা দেয়, তাহলে হয়তো বিশ্ব প্রবৃদ্ধি থেকে আরও আট শতাংশ হারিয়ে যেতে পারে।

বিশেষ করে ঋণগ্রস্ত অর্থনীতির দেশগুলোর অবস্থা আরও খারাপ দিকে যাবে। বিনিয়োগকারীরা হয়তো এরকম বেশ কিছু দেশকে আর ঋণ দিতে চাইবে না, ফলে তাদের ঋণ গ্রহণের ব্যয়ভার আরও বাড়িয়ে তুলবে।

আইএমএফ বলছে, ”ঋণগ্রহণের ব্যয়ভার বেড়ে যাওয়া অথবা সেরকম আশঙ্কার ফলেও অনেক দেশ তাদের আয় সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে পারে।”

অর্থনৈতিক ওষুধ

যদিও লকডাউন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করবে, তবে আইএমএফ বলছে যে কোয়ারেন্টিন এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার ব্যবস্থাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সংস্থাটি বলছে, ” ভাইরাসটির বিস্তার শ্লথ করতে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সময় দিতে, বর্তমানের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাগুলো বাস্তবায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে যতটা সম্ভব আগে এবং আরও ভালোভাবে পুনরায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করা যায়।”

মহামারি সামলাতে চারটি অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেছে আইএমএফ।

সেগুলো হল: স্বাস্থ্যখাতের জন্য আরও অর্থ বরাদ্দ, কর্মী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য আর্থিক সহায়তা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অব্যাহত সহযোগিতা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য একটি পরিষ্কার বিকল্প পরিকল্পনা।

সংস্থাটি বিশ্বকে আহবান জানিয়েছে যেন ওষুধ ও প্রতিষেধক আবিষ্কার ও সরবরাহ করতে বিশ্বের সবাই একত্রে কাজ করেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বলছে, সামনের মাস ও বছরগুলোয় অনেক উন্নয়নশীল দেশের হয়তো ঋণ মওকুফ সুবিধার দরকার হবে।