আমি খেলব ফাইনাল - প্রশাসনকে জেল থেকে ইয়াসিনের চ্যালেঞ্জ

আমি খেলব ফাইনাল - প্রশাসনকে জেল থেকে ইয়াসিনের চ্যালেঞ্জ
আমি খেলব ফাইনাল - প্রশাসনকে জেল থেকে ইয়াসিনের চ্যালেঞ্জ

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি ।।

প্রশাসনকে জেলে বসে চ্যালেঞ্জ করে ফাইনাল খেলার ঘোষণা দিলেন জঙ্গল সলিমপুরের আলিনগরের স্বঘোসিত রাজা  ইয়াসিন। গ্রেপ্তারের পর জেলহাজতে সহযোগিরা তার সাথে দেখা করতে আসলে তাদের অভয় দিয়ে নানা কথা বলেন তিনি।

সরকারি মালিকানাধীন পাহাড় দখল করে আলীনগর নামের সাম্রাজ্য গড়ে তোলা ইয়াসিন এসময় প্রশাসনকে ‍উদ্দেশ্য করে সহযোগিদের বলেন, তারা খেলেছে সেমি ফাইনাল আর আমি খেলব ফাইনাল। জেল থেকে বের হলে কি করি দেখ তোমরা। এসময় চট্রগ্রামের জেলা প্রশাসক, সীতাকুণ্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) যেকোনভাবে ম্যানেজের আদেশ দেন ইয়াসিন। অন্যথায় জেল থেকে বেরিয়ে তাদের দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

এছাড়া প্রশাসনকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার ‘অপরাধে’ বাদশা নামের এক ব্যক্তির মাথার দাম ২০ লাখ টাকা ঘোষণা করেন ইয়াসিন। তার কাটা মাথা যিনি এনে দিতে পারবে তাকে ২০ লাখ টাকা পুরষ্কৃত করা হবে।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো. আরিফ বলেন, ইয়াসিনের সহযোগিরা জেলহাজতে ইয়াসিনকে দেখতে গেলে ইয়াসিন তাদের ‘প্রশাসন খেলেছে সেমিফাইনাল আমি খেলব ফাইনাল, বের হলে সবাইকে দেখে নেব;— এমন কথা বলেন।

কেন বাদশার প্রতি এত ক্ষোভ জানতে চাইলে বাদশা জানান, তিনিও আগে আলীনগর থাকতেন। ইয়াসিনের কাছ থেকে দুই দফায় ১০ শতক জায়গা কিনেন তিনি। প্রথম দফার ২ শতক জায়গা তাকে বুঝিয়ে দিলেও ২য় দফার ৮শতক জায়গা বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন না ইয়াসিন। এই কারণে ইয়াসিনের সাথে তার বাড়াবাড়ি হলে বিগত ৬ মাস আগে তাকে আলীনগর থেকে বের করে দেন ইয়াসিন। এরপর স্থানীয় মেম্বারকে মারধর করার ঘটনায় মামলা দায়ের হলে প্রশাসনকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন বাদশা।

উল্লেখ্য, বিগত দুই দশক আগে নোয়াখালী থেকে এসে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে আস্তানা গাড়েন ইয়াসিন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দাগি আসামি ও সন্ত্রাসীদের এনে গহীন পাহাড়ে গড়ে তোলে তার নিজস্ব বাহিনী। একরের পর একর পাহাড় কেটে প্লট করে বিক্রি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যায় দুই ভাই ইয়াসিন ও ফারুক। সম্প্রতি সরকার জঙ্গল সলিমপুরের খাস জমিতে কয়েকটা বৃহৎ কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করে। সেই অনুযায়ী তথ্যমন্ত্রীসহ কয়েকজন এমপি, সিটি মেয়র ও বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা একাধিকবার এই এলাকা পরিদর্শন করেন। তাতে ক্ষেপে গিয়ে গত ১৫ জুলাই স্থানীয় সরকার চট্রগ্রাম বিভাগের উপ পরিচালক বদিউল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) মং মারমা ও সীতাকুণ্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম ও সলিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালা উদ্দিন আজিজের গাড়ি বহর থেকে নামিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে বুকে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে মারধর করে ইয়াসিন বাহিনী। সরকারী কর্মকর্তাদের সামনে ইউপি মেম্বারকে মারধরের ঘটনা হতবাক করে দেশবাসীকে। এই ঘটনায় ইউপি মেম্বারের ছোট ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করলে ১৮ জুলাই পুলিশ গ্রেপ্তার করে ইয়াসিনকে। পরদিন তাকে একদিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতিও দেন আদালত। পরবর্তীতে আলীনগরে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। অভিযানে তিনটি মাটি কাটার স্ক্যাভেটর, ৬টি ড্রাম ট্রাক ও ১টি বড় ট্রাক জব্দ করে প্রশাসন।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;