আজ শহীদ শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী ,দিনভর নানা কর্মসূচি

আজ শহীদ শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী ,দিনভর নানা কর্মসূচি
আজ শহীদ শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী ,দিনভর নানা কর্মসূচি

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শহীদ শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী আজ বুধবার। ১৯৪৯ সালের এই দিনে তিনি তদানীন্তন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে মাত্র ২৬ বছর বয়সে শাহাদাতবরণ করেন শেখ কামাল।

দিনটি পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন ক্রীড়া ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠন সকাল ৯টায় ধানমÐিস্থ আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে শহীদ শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও সকাল ১০টায় বনানী কবরস্থানে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। পরে অনুষ্ঠিত হবে কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ সহযোগী সংগঠনগুলো এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবে।

অন্যদিকে শহীদ শেখ কামলের ৭১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আবাহনী লিমিটেড ক্লাব প্রাঙ্গণে সারা দিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তবে সব অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত হবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে শহীদ শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে শদ্ধা নিবেদন, দিনব্যাপী কোরআন তেলাওয়াত, বিকাল ৫টায় শহীদের বর্ণাঢ্য কর্মবহুল জীবনের ওপর ভার্চুয়াল আলোচনা, স্মৃতিচারণ ও বাদ আসর ক্লাব ভবনে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

এ ছাড়া শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে ‘তারুণ্যের জেগে ওঠার নাম শেখ কামাল’ শীর্ষক বিশেষ ওয়েবিনারের আয়োজন করেছে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন-সিআরআই।

এবারই প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে নানা আয়োজনে তার জন্মদিন উদযাপন করতে যাচ্ছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৯টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ। সাড়ে ৯টায় ধানমন্ডিস্থ আবাহনী ক্লাব মাঠে শহীদ শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে এবং ১০টায় বনানী কবরস্থানে শহীদ শেখ কামালের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ। বেলা ১১টায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অডিটোরিয়ামে শহীদের বর্ণাঢ্য কর্মবহুল জীবনের ওপর ভার্চুয়াল আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আলোচনা অনুষ্ঠানে শহীদ শেখ কামালকে নিয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে এবং ‘শহীদ শেখ কামাল আলোমুখী এক প্রাণ’ শীর্ষক স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হবে। এ ছাড়া একই ভেন্যুতে দুপুর ১২টায় শহীদ শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে অসহায় ও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠকদের আর্থিক অনুদান প্রদান করা হবে।

বিকাল ৩টায় শহীদ শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যুব উন্নয়ন অধিদফতর কর্তৃক সারা দেশে একযোগে ১ লাখ চারা গাছ বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম রূপকার শহীদ শেখ কামাল ছিলেন পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় প্রথম শহীদ। বজলুল হুদা স্টেনগান দিয়ে শেখ কামালকে হত্যা করে।

আদালতে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বাড়ির অন্যতম পাহারাদার হাবিলদার কুদ্দুস সিকদারের সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, বাড়িতে প্রথম ঢুকে মেজর বজলুল হুদা ও ক্যাপ্টেন নূর চৌধুরী। সঙ্গে আরও কয়েকজন। বাড়িতে ঢুকেই তারা শেখ কামালকে দেখতে পায়। সঙ্গে সঙ্গে বজলুল হুদা স্টেনগান দিয়ে তাকে গুলি করে। শেখ কামাল বারান্দা থেকে ছিটকে গিয়ে অভ্যর্থনা কক্ষের মধ্যে পড়ে যান। সেখানে তাকে আবার গুলি করে হত্যা করা হয়।

বঙ্গবন্ধু ভবনের আবাসিক ব্যক্তিগত সহকারী এবং হত্যা মামলার বাদী মুহিতুল ইসলামের প্রত্যক্ষ সাক্ষ্যের মধ্যেও এ বর্ণনার কথা রয়েছে।

তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল শফিউল্লাহকে বাড়ি আক্রমণের পর বঙ্গবন্ধু টেলিফোনে যা বলেছিলেন তাতেও এর সত্যতা পাওয়া যায়। ১৯৮৭ ও ১৯৯৩ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে দুটি সাক্ষাৎকারে শফিউল্লাহ বলেছেন, বাড়ি আক্রমণের পর বঙ্গবন্ধু জলদি ফোর্স পাঠানোর জন্য তাগিদ দিয়ে তাকে ফোন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘শফিউল্লাহ তোমার ফোর্স আমার বাড়ি অ্যাটাক করেছে। কামালকে বোধহয় মাইরা ফেলছে। তুমি জলদি ফোর্স পাঠাও।’

বহুমাত্রিক অনন্য সৃষ্টিশীল প্রতিভার অধিকারী তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক শহীদ শেখ কামাল শাহীন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ অনার্স পাস করেন। বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের শিক্ষার অন্যতম উৎসমুখ ‘ছায়ানট’-এর সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন, বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতাই শুধু ছিলেন না, তিনি ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি ও বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় প্রচন্ড উৎসাহ ছিল তার। শেখ কামাল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন্ড লাভ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
স্বাধীনতার পর শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন এবং শাহাদাতবরণের সময় বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।