আমি একটিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাক্ষাৎ চাই : সাংবাদিক খোকনের স্ত্রী 

আমি একটিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাক্ষাৎ চাই : সাংবাদিক খোকনের স্ত্রী 
বাবা হুমায়ুন কবীর খোকনের ছবি হাতে মেয়ে। পাশে মা ও ভাই - সংগ্রহ

উবায়দুল্লাহ বাদল ।।  

করোনাভাইরাসের বিষয়ে যে মানুষটি প্রতিনিয়ত মানুষকে সাবধান করেছেন, তিনি সে ভাইরাসেই মারা গেলেন। বেঁচে থাকতে কত মানুষ খোঁজখবর নিতেন। ৭ মাস হল খোকন নেই; এখন আর কেউ খোঁজ নেন না। এমনকি প্রয়োজনে কাউকে ফোন বা মেসেজ পাঠালেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলে না। খোকনের মৃত্যুর সময় আমি হাসপাতালে ছিলাম। তখন অনেকে আমাকে আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, তথ্যমন্ত্রী মহোদয় জানিয়েছেন খোকনের পরিবারের পাশে দাঁড়াবেন। এতিম সন্তানদের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ চালাতে আমার একটা চাকরির ব্যবস্থা করবেন। বিএফইউজের মহাসচিব শাবান ভাই আমার সিভিও নিয়েছেন। কিন্তু এর কোনো অগ্রগতি জানি না। বড় মেয়েটি মাস্টার্সে পড়ালেখার পাশাপাশি একটি বেসরকারি ফার্মে চাকরি করছে। তার স্বল্প আয় আর খোকনের মৃত্যুর পর পাওয়া অনুদানের টাকায় কোনো মতে চলছে সংসার। এভাবে কদিন চলবে জানি না। এলাকার (গোপালগঞ্জ) মেয়ে হিসেবে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দুঃখের কথা জানাতে চাই। তিনটি এতিম বাচ্চা নিয়ে কীভাবে চলছি তা নিজের মুখেই বলতে চাই।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বললেন করোনাভাইরাসে প্রয়াত সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর খোকনের স্ত্রী শারমিন সুলতানা রীনা। শনিবার রাজধানীর মহাখালীর বাসায় বসে যুগান্তরকে তিনি এ কথা বলেন।

২৮ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার নগর সম্পাদক হুমায়ুন কবীর খোকন মারা যান। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর।

তিনি ঢাকাস্থ কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ছিলেন। তিনি দৈনিক আমাদের সময় ও আমাদের অর্থনীতির প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তার স্ত্রী শারমিন সুলতানা রীনা একজন কবি। বড় মেয়ে মেহজাবিন বাঁধন নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ইকোনমিক্সে মাস্টার্স করছেন। একই ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্সে অনার্স করছেন ছেলে আশরাফুল হক আবীর।

আর সাউথ পয়েন্ট স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে ছোট মেয়ে মেহরিন নাফিসা। তাদের নিয়েই মহাখালীর ছোট্ট একটি বাসায় এখন ভাড়া থাকছেন রীনা।

খোকনের অনুপস্থিতিতে কীভাবে সংসার ও সন্তানদের লেখাপড়া চলছে-জানতে চাইলে শারমিন সুলতানা বলেন, খোকন এভাবে হঠাৎ চলে যাবেন, তা আমরা কেউ ভাবিনি।

মৃত্যুর আগের দিনও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে করোনাভাইস সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেছে। মৃত্যুর দু’দিন আগেও সে অফিস করেছে। মাথার ওপর থেকে এভাবে ছাতা সরে যাবে-আমরা কেউ ভাবিনি।

খোকনের মৃত্যুর পর পরিবারের প্রায় সবাই হাসপাতালে আইসোলেশনে ছিলাম। তখন আমাদের অনেকেই খোঁজখবর নিয়েছেন। সময়ের আলো পাওনা বুঝিয়ে দিয়েছে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), পিআইবি, বসুন্ধরা গ্রুপ, পুলিশ ও র‌্যাব আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংবাদিক সামিয়া রহমান ও নোয়াখালীর একজন এমপি ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

আমার পরিবার তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। ওই সময় সাংবাদিক নেতারা সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, তথ্যমন্ত্রী মহোদয় আমাদের পাশে থাকবেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) একটা চাকরির ব্যবস্থা করবেন।

সাংবাদিক নেতা শাবান মাহমুদ ভাই সার্বক্ষণিক আমাদের খোঁজখবর নিয়েছেন এবং আমার সিভিও নিয়েছেন। খোকনের কর্মস্থল সময়ের আলো কর্তৃপক্ষ আমাকে চাকরি দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিল পরে তারা অপারগতা জানিয়েছে।

তিন সন্তানের লেখাপড়া ও বাসাভাড়াসহ সংসারের খরচ চালানোর মতো সাধ্য আমাদের নেই। বড় মেয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি একটি সুপার শপে চাকরি করছে।

সেই চাকরির টাকা ও সহায়তার টাকা ভেঙে চলছে সন্তানদের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ। জানি না কতদিন এভাবে চলবে। আমার একটা চাকরির ব্যবস্থা হলে এতিম এই সন্তানগুলোর লেখাপড়া অব্যাহত রেখে সংসারটা চালিয়ে নিতে পারতাম।

না হলে বাসা ছেড়ে দিয়ে হয়তো গ্রামের বাড়ি চলে যেতে হবে। সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সরকারের কাছে আমার চাওয়া হল-তিনটি এতিম সন্তানের লেখাপড়া এবং তাদের নিয়ে একটু থাকার জায়গা।

এই এতিম বাচ্চাদের একটা আবাসনের ব্যবস্থা করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি অনুরোধ করব।

গোপালগঞ্জের আড়পাড়ার জমিদার হাজী ইসমাইল মুন্সীর নাতি জহুরুল হকের কনিষ্ঠ কন্যা রীনা আরও জানান, দৈনিক আমাদের সময়ে দীর্ঘ ১৪ বছর কাজ করেছেন খোকন। সর্বশেষ তিনি এক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সেখান থেকে চাকরিচ্যুত হন।

ওই পত্রিকা থেকে তার কোনো পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। খোকনের মৃত্যুর পর ওই পত্রিকা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা পাওনা পরিশোধের আশ্বাস দেয়। কিন্তু এরপর আর কোনো খবর নেই।

গোপালগঞ্জের মেয়ে হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি; কিন্তু মিলেছে শুধু আশ্বাস।

তাই আমার অনুরোধ আমি একটিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাক্ষাৎ চাই। আমার এতিম বাচ্চাদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখার স্বার্থে তার সহায়তা, সুদৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ চাই।