৩০০ টাকায় বিদেশগামীদের করোনা টেস্ট , সামাজিক অনুষ্ঠান নিয়ন্ত্রণের তাগিদ ​​​​​​​

৩০০ টাকায় বিদেশগামীদের করোনা টেস্ট , সামাজিক অনুষ্ঠান নিয়ন্ত্রণের তাগিদ ​​​​​​​

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।। 

‘করোনার ভ্যাকসিন আমরা ফেব্রুয়ারিতে পাচ্ছি। প্রথম দফায় অক্সফোর্ডের ৫০ লাখ ভ্যাকসিন আসবে। যা ২৫ লাখ মানুষকে দেয়া যাবে। ভ্যাকসিন দিতে স্বাস্থ্য কর্মী-ইপিআই কর্মীসহ সকলকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে ভ্যাকসিন আসা পর্যন্ত মাস্কেই ভ্যাকসিন হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।’

বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নান এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার শংকর রঞ্জন সাহার সভাপতিত্বে রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ সালাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, চমেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক, চমেক উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দীন মাহমুদ, সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, সিএমপির উপ কমিশনার এসএম মেহেদী হাসান, বিএমএ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ডা. সেখ সফিউল আজম, বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিদেশগামীদের করোনা টেস্ট ফি ৩০০ টাকা : সভায় স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান জানান- এখন বিদেশগামীদের করোনা টেস্ট ফি দেড় হাজার টাকা। আমরা সেটি ফ্রি করে দিতে প্রস্তাব করেছিলাম। তবে একদম ফ্রি না করে নাম মাত্র ৩০০ টাকা করে নিতে সম্মতি দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এর প্রেক্ষিতে বিদেশগামীদের করোনা টেস্ট ফি ৩০০ টাকা করে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিদেশগামীরা বাসায় থেকে টেস্ট করতে চাইলেও তাদের জন্য সুযোগ রাখা হয়েছে।

অমানবিক আচরণ করলে বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা : সভায় অংশ নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অতিরিক্ত বিল আদায় প্রসঙ্গ টেনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল। তিনি বলেন- কয়েকদিনে ৪ লাখ টাকা বিল আসছে। এগুলো কিভাবে আসছে, তা আমাদের জানা নেই। এই সংকটকালীন সময়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো ফি আদায় করছে। যার কারণে সচিব মহোদয়ের প্রতি অনুরোধ আপনারা কিছু একটা করেন। সাধারণ মানুষকে বাঁচান। কাউকে যেন বউয়ের সোনা-গয়না বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না হয়।

একই প্রসঙ্গে বক্তব্যে রাউজানের সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন- আমি ঢাকার নাম করা একটি বেসরকারি হাসপাতালে চার দিন ভর্তি ছিলাম। আমি মনে করেছিলাম- অন্তত ৪/৫ লাখ টাকা বিল আসবে। তবে দেখলাম- বিল আসছে আড়াই লাখ টাকা। সে হিসেবে চট্টগ্রামে যে হারে বিল দিতে হচ্ছে, তা তুলনামূলক বেশি বলে আমারও মনে হচ্ছে। বিষয়টি দেখা দরকার।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব বলেন- বেসরকারি হাসপাতালের ফি নির্ধারণে একদিন আগেই কমিটি করে দেয়া হয়েছে। এ কমিটি সারা দেশের বেসরকারি হাসপাতালের ফি নির্ধারণের কাজ করবে। বেসরকারি হাসপাতাল যদি অমানবিক আচরণ করে তবে তাদের শাস্তি পেতে হবে জানিয়ে স্বাস্থ্য সচিব বলেন- যারা বেপরোয়া ব্যবসা করবে, তাদের ছাড় দেয়া হবে না। এই অতিমারির মধ্যে একটু মানবিক হওয়ার জন্য তাদের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই। বেসরকারি হাসপাতালের ফি’র বিষয়ে সারাদেশেই সংক্ষুদ্ধতা আছে জানিয়ে চট্টগ্রামের বিষয়টি দেখার জন্য বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালককে নির্দেশনা দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম।

সামাজিক অনুষ্ঠান নিয়ন্ত্রণের তাগিদ : সভায় বক্তব্যে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন- আমরা দেখতে পাচ্ছি, চট্টগ্রামে সংক্রমণ আবার বাড়ছে। অনেকের পুরো পরিবার অসুস্থ। কিন্তু যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তারা করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন। বাকিরা পরীক্ষাও করাচ্ছেন না। বিয়ে-শাদী, গায়ে হলুদসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে মন্তব্য করে সুজন বলেন- এসব অনুষ্ঠান বন্ধ করা না গেলেও অন্তত নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। সুজনের এই বক্তব্যে একমত পোষণ করেন রাউজানের সাংসদ এবিএম ফজলে করিমও। তিনি বলেন- বিয়ে শাদী বা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে খাওয়ার সময় মাস্ক খুলে খেতে হচ্ছে। ওই সময় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। সন্ধ্যা বেলা স্টেডিয়ামের কোনায় যে হারে ভিড় দেখলাম, তাতে সংক্রমণ তো বাড়বেই। ইলেকশন, মিছিল থেকেও সংক্রমণ বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন- এসব সামাজিক অনুষ্ঠান বা যে কোন প্রোগ্রামে জন সমাগম এড়িয়ে চলার জন্য জনপ্রতিনিধিরা বললেই জনসাধারণ বেশি শুনবে। তাই জনপ্রতিনিধিদেরই এ বিষয়ে সচেতন করার আহ্বান জানান তিনি।