সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপো প্রস্তুত , মিলছে না কার্যক্রম চালানোর অনুমতি

সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপো প্রস্তুত , মিলছে না কার্যক্রম চালানোর অনুমতি
সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপো প্রস্তুত , মিলছে না কার্যক্রম চালানোর অনুমতি

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

বিএম কনটেইনার ডিপো বিস্পোরনের দুর্ঘটনার প্রায় দেড় মাস পাড় হয়ে গেছে। এর মধ্যে নানান জটিলতা পেরিয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে ডিপোটি। তবে নতুন করে ডিপোর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অনুমতি মেলেনি। এতে অলস সময় পার করছেন ৫ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। আয় না থাকায় সামনের সময়গুলোতে নিজেদের বেতন-ভাতা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। এদিকে ডিপোটিকে একটি আধুনিক ডিপো হিসেবে সাজাতে নানান পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করেছে ডিপো কর্তৃপক্ষ।

বিএম কনটেইনার ডিপোর জেনারেল ম্যানেজার ক্যাপ্টেন (অব.) মাইনুল আহসান খান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর সব ধরনের প্রক্রিয়াগত কাজ শেষ করে এখন নতুন করে পূর্ণাঙ্গ অপারেশন চালুর জন্য ডিপোটি প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি ফায়ারসহ সেফটি সিকিউরিটির দিক থেকে সর্বশেষ প্রযুক্তি সংযুক্ত করা হচ্ছে ডিপোতে।

ডিপোর এই কর্মকর্তা বলেন, পুরো ডিপোকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। অনলাইন কার্যক্রমের সার্ভার ইনস্টল করা হয়েছে। এখন অপারেশনাল কার্যক্রম চালুর জন্য ডিপো পুরোপুরি প্রস্তুত। আমরা কাস্টমসে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো অনুমতি মেলেনি। ডিপোর বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী অলস সময় কাটাচ্ছেন। ডিপোর কোনো আয় নেই। সামনে আমরা বেতন-ভাতা পাবো কি না সে শঙ্কায় আছি।

জানা যায়, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বিএম কনটেইনার ডিপোতে রপ্তানির পোশাক বাদেও ছিল প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, হাইড্রোজেন পার অক্সাইডসহ নানান পণ্য। এর মধ্যে ছিল দেশের খ্যাতনামা ও শীর্ষস্থানীয় খাদ্যপণ্য রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পণ্য। ৪ জুন রাতে অগ্নিকাণ্ডের আগে বিভিন্ন দেশে রপ্তানিতর জন্য প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ৩৫ লাখ ১১ হাজার ৭৩৪ ডলার মূল্যমানের ২ লাখ ১৯ হাজার ২০৪ কার্টন পণ্য বিএম ডিপোতে পাঠানো হয়েছিল। এরই মধ্যে এসব পণ্যের একটি বড় অংশ ডিপো থেকে ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি কনসাইনমেন্ট ডিপো থেকে ডেলিভারি দেওয়ার পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে ডিপো কর্তৃপক্ষ।

এদিকে বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, বিএম কন্টেইনার ডিপোতে দুর্ঘটনার আগে পোশাক রপ্তানিকারী ১৪১ প্রতিষ্ঠানের পণ্য ছিল ডিপোতে। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্যের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা পাঠিয়েছে। ১৪১টি প্রতিষ্ঠানের ৪৭ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৪৩৬ কোটি টাকার বেশি) মূল্যের পণ্য ছিল।

এসব তৈরিপোশাক যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, চীন, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ড ও ডেনমার্কে যাওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে বেশির ভাগ পণ্যের ক্রেতা সুইডেনভিত্তিক এইচঅ্যান্ডএম।

বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) তথ্যমতে, ৪ জুন দুর্ঘটনার দিন বিএম কন্টেইনার ডিপোতে চার হাজার ৩১৮টি কনটেইনার ছিল। এর মধ্যে ২ হাজার ৮৯৭টি ছিল খালি কনটেইনার। ১০২১টি কনটেইনারে আমদানি-রপ্তানির পণ্য ছিল। এর মধ্যে প্রায় ৯শ কনটেইনারে আমদানি-রপ্তানির প্রায় সাড়ে ১৫শ টিইইউ পণ্য অক্ষত ছিল। অক্ষত এসব পণ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে দাবি ডিপো কর্তৃপক্ষের। অক্ষত অন্য কন্টেইনারগুলোও হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে ডিপোর জেনারেল ম্যানেজার ক্যাপ্টেন (অব.) মাইনুল আহসান খান বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এমন প্রায় সাড়ে ১৫শ টিইইউ পণ্যের মধ্যে ৮০ শতাংশ ক্লায়েন্টদের হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ২০ শতাংশও হস্তান্তরের কার্যক্রম চলছে। মূলত কাস্টমস থেকে যারা আগে অনুমতি নিয়ে আসছেন, তাদেরগুলো আগে ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে। তবে অনেকে এখনো কনটেইনার ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আসেননি।

কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ৪ জুন দুর্ঘটনার পর থেকে ডিপোর চার্জ পুরোপুরি মওকুফ করে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে ডিপোতে কনটেইনার থাকলে ক্লায়েন্টদের কোনো চার্জ দিতে হচ্ছে না। এর ফলে নিজেদের কারখানায় ফিরিয়ে নেওয়ার চেয়ে ডিপোতে রাখা বেশি শ্রেয় মনে করছেন অনেকে।

বিএম ডিপোতে দায়িত্বে থাকা কাস্টমসের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের পর অক্ষত কনটেইনার খালাস ও সরবরাহ নিতে গত ৫ জুন থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১২৯টি আবেদন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৮৬টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আরও ৪৩টি আবেদন নিষ্পত্তির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর মাঝে রপ্তানি পণ্যের ২৪টি কনসাইনমেন্টের ইনভেন্ট্রি চলছে। আমদানি পণ্য খালাসের ২০টি আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বর্তমানে আরও ৯টি নিষ্পত্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে ডিপোর পূর্ণাঙ্গ অপারেশন কার্যক্রম চালুর বিষয়টি তার এখতিয়ারে নেই বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মো. ফখরুল আলমকে বেশ কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদেবার্তা দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

৪ জুন রাত ৯টায় অগ্নিকাণ্ড শুরুর পর ডিপোর অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে চিঠি দিয়ে ডিপোর অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ রাখে কাস্টমস কর্তৃপক্ষও। দুর্ঘটনার পর গঠিত হয় বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি। এরই মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রত্যেক দপ্তরের গাফিলতির বিষয় উল্লেখ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।  দুর্ঘটনায় ৫১ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৭ জনের পরিচয় শনাক্তের পর মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখনো আরও ১৪ মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি বলে জানিয়েছেন সীতাকুণ্ড মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক।

খালেদ /পোস্টকার্ড ;