সীতাকুণ্ডের জঙ্গি আস্তানা মামলার তারিখ পড়লেও সাক্ষ্য হয় না দীর্ঘদিন

সীতাকুণ্ডের জঙ্গি আস্তানা মামলার তারিখ পড়লেও সাক্ষ্য হয় না দীর্ঘদিন
ক্যাপশন : সীতাকুণ্ড পৌর সদরে চৌধুরীপাড়ার প্রেমতলা এলাকার ছায়ানীড় নামে সেই বাড়ি ঘিরে সোয়াট দল ও পুলিশের অবস্থান

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি বাড়িতে ছয় বছর আগে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গভীর রাতে অভিযান চালালে কয়েক ঘণ্টার নিহত হন পাঁচজন। বাড়িটি থেকে উদ্ধার করা হয় বিস্ফোরক। এ ঘটনায় পৃথক চারটি মামলা করা হয়। একটি মামলারও বিচার এখনো শেষ হয়নি। মামলাগুলোতে ৫৬ জন সাক্ষী রাখা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে শুধু একজনের সাক্ষ্য হয়েছে। অন্যদের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। যদিও আইনজীবীরা বলছেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। অন্যদিকে সে সময়কার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দূরে অবস্থানের কারণে দেরী হচ্ছে জানালেন ট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ।

বিভিন্ন তথ্যে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ সীতাকুণ্ডের আমিরাবাদ এলাকায় ‘সাধন কুটির’ নামে একটি বাড়ির মালিকের সন্দেহের ভিত্তিতে এক নারীসহ দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাড়িটি থেকে গ্রেনেড, সুইসাইড ভেস্ট, পিস্তল ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার জঙ্গিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে প্রেমতলা চৌধুরীপাড়ায় ‘ছায়ানীড়’ নামে আরেকটি বাড়িতে ‘অপারেশন অ্যাসল্ট সিক্সটিন’ নামে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ।

রুদ্ধশ্বাস অভিযানে পুলিশের সোয়াট বাহিনীর (স্পেশাল উইপনস অ্যান্ড ট্যাকটিকস) নেতৃত্বে ১৯ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর ওই অভিযানে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে এক নারীসহ তিনজন ও গুলিতে একজনসহ পাঁচজন নিহত হন। এ ঘটনায় সীতাকুণ্ড থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দুটি, অস্ত্র আইনে একটি এবং একটি হত্যা মামলা হয়। চার মামলায় আসামি এমন পাঁচ জঙ্গি জহিরুল হক ওরফে জসিম ও তাঁর স্ত্রী মোসাম্মাত আরজিনা, হাসান বসরী, ইলিয়াস রহমান ও আবদুস সবুর বর্তমানে কারাগারে।

আদালত সূত্রে জানা যায় , দুই মামলার বিচার চলছে চট্টগ্রামে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। ‘ছায়ানীড়’ নামে বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার মামলায় মোট সাক্ষী ৫৬ জন। এর মধ্যে শুধু মো. মহিউদ্দিন নামের স্থানীয় এক বাসিন্দার সাক্ষ্য নেওয়া হয় ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর। এরপর শুধু তারিখই পড়েছে ৪৮ বার কিন্তু সাক্ষ্য গ্রহণ হয়না ।

সর্বশেষ গত ১৪ মার্চ সাক্ষ্য গ্রহণের দিন থাকলেও সাক্ষী না আসায় শেষ পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। একই অবস্থা ‘সাধন কুটির’ নামে বাড়িটি থেকে জঙ্গি গ্রেপ্তারের ঘটনায় করা মামলায়ও। এ মামলায় সাক্ষী রয়েছেন ৭১ জন। এখন পর্যন্ত একজনেরও সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। ওই মামলারও তারিখ পড়েছে প্রায় ৪২ বার।

চারটি মামলায় স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়াও সেদিনের অভিযানে থাকা সাক্ষীদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রামে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক আফতাব হোসেন, বর্তমানে কুমিল্লা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক রাজেস বড়ুয়া, উপপরিদর্শক (এসআই) রাসিব খানসহ অনেকে। তাঁরা কেউ এখনো সাক্ষ্য দেননি।

মামলার সাক্ষী ও চট্টগ্রামে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক আফতাব হোসেন বলেন, সাক্ষ্য দেওয়ার সমন পেলে অবশ্যই হাজির হবেন।

এ বিষয়ে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি রুবেল পাল বলেন, মাত্র কিছুদিন হলো কৌঁসুলি হিসেবে এখানে দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে করা মামলায় ভবিষ্যতে যেসব দিন ধার্য করা আছে বা হবে, তাতে সাক্ষীদের হাজির করে বিচার দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি ।

চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীকে গত ছয় বছরেও এসব মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ঘটনার সাক্ষী, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা একেকজন এখন একেক জায়গায় আছেন। তাই দেরী । ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে ধার্য দিনে তাঁদের হাজির করে সাক্ষী শেষ করা হবে তিনি জানান।

জঙ্গিদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত বলে মনে করেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, এসব মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে না পারলে জঙ্গিদের এ ধরনের তৎপরতা বাড়তেই থাকবে বলে তিনি মনে করেন ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;