সীতাকুণ্ডে সলিমপুরের ইউপি সদস্যকে পেটনো সেই ইয়াসিন গ্রেপ্তার

সীতাকুণ্ডে সলিমপুরের ইউপি সদস্যকে পেটনো সেই ইয়াসিন গ্রেপ্তার
সীতাকুণ্ডে সলিমপুরের ইউপি সদস্যকে পেটনো সেই ইয়াসিন গ্রেপ্তার

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে সরকারি অফিসারদের সামনে গাড়ি বহর থেকে নামিয়ে ইউপি সদস্যকে মারধরের ঘটনায় গ্রেপ্তার হলেন জঙ্গল সলিমপুরের সেই সন্ত্রাসী ইয়াসিন। 

গ্রেপ্তারকৃত ইয়াছিন নোয়াখালী জেলার সেনবাগ থানা কেশার পাড় গ্রামের শামশুল হকের ছেলে। তিনি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় বসবাস করছেন। এই এলাকার আলীনগরের অঘোষিত রাজা ও পাহাড় খেকো হিসেবে তিনি পরিচিত বলে জানান স্থানীয়রা। 

সোমবার (১৮ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থেকে ডিবি পুলিশের সহায়তায় সীতাকুণ্ড থানার ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে। ইন্সপেক্টর তদন্ত সুমন বণিক সাংবাদিকদের ইয়াসিনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সীতাকুন্ড মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সুমন বনিক জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি চট্টগ্রামের আদালত চত্ত্বরের আইনজীবি ভবনের ৩১৫ নম্বর কক্ষে ইয়াসীন উকিলের পরামর্শ নিচ্ছেন। এই সংবাদ পাওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তারের জন্য তাৎক্ষানিক ব্যবস্হা নেই। সাদা পোশাকে পুলিশ তাকে অনুসরণ করে,আইনজীবী ভবন হতে বের হলে তাকে কোতোয়ালি থানা এলাকা বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করি।

পরিদর্শক (তদন্ত) এর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেপ্তারে নেতৃত্ব দেন বলে তিনি জানান।

সুমন বনিক আরো জানায়, গত ১৫ জুলাই, ২২ শুক্রবার বিকেলে সীতাকুণ্ডের সলিমপুর এলাকায় জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ পরিদর্শনে গেলে আলীনগর প্রান্তে ইয়াসিন বাহিনীর নেতৃত্বে পরিদর্শন টিমের গাড়ী বহর হতে স্থানীয় মেম্বার আরিফ কে গাড়ী থেকে নামিয়ে মারধর করে। এর প্রেক্ষিতে মেম্বারের ভাই বাদী হয়ে সীতাকুণ্ডে মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সামনেই সে দুর্সাহস দেখালে এর প্রেক্ষিতে ইয়াসিন কে গ্রেপ্তার করা জরুরী হয়ে পড়ে ও আজ গ্রেফতার হয়।

পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক আরও বলেন, সন্ত্রাসী ইয়াছিন গত কয়েক বছর আগে জীবিকার সন্ধানে ছোট ভাই ফারুককে নিয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর এলাকার ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। তিনি প্রথমদিকে বেশ কয়েক মাস অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এর কিছুদিন পর নোয়াখালী থেকে বেশ কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের এনে জঙ্গল সীলমপুরে আশ্রয় দেন এবং তাঁদেরকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন পাহাড় দখল, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও গুমসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। ইয়াছিন সন্ত্রাসী বাহিনীর সহায়তায় জঙ্গল সলিমপুরের দুর্গম পাহাড়ের একটি অংশ কেটে সেখানে প্লট বানিয়ে বিক্রি শুরু করেন। তাঁর দখল করা পাহাড়ের নাম দেন আলীনগর। আর সেখানে করা প্লট বিক্রির মাধ্যমে কোটিপতি বনে যাওয়ার পাশাপাশি ইয়াছিন হয়ে ওঠেন আলীনগরের স্বঘোষিত রাজা। আলীনগরকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সেখানে বহিরাগতের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। এ ছাড়াও সেখানে বসবাস করা লোকজনকে বাইরে যেতে নিতে হতো ইয়াছিন ও তাঁর ভাই ফারুকের অনুমতি। 

সুমন বণিক আরও জানান, শীর্ষ সন্ত্রাসী ইয়াছিন তাঁদের হাতে গ্রেপ্তার হলেও ইউপি সদস্যকে মারধরের মামলায় অভিযুক্ত আসামি ফারুক, সজীব, নুরুল ইসলাম, শাহজাহান ও আল আমিন সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারিক হাকিম বেগম নাজমুন নাহারের আদালতে স্বেচ্ছায় জামিন নিতে যান। পরে আদালত তাঁদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠান।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন জানান, জঙ্গল সলিমপুরের পাহাড়ের বেশ কিছু পাহাড় দখল করে নিজের অপরাধের স্বর্গরাজ্য তৈরি করেছিল সন্ত্রাসী ইয়াছিন। আর তাঁর রাজ্যে বহিরাগতের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে গড়ে তুলেছেন বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। গত শুক্রবার জঙ্গল সলিমপুর এলাকা পরিদর্শন শেষে তাঁরা ফেরার পথে তাঁদের গাড়িবহরের পেছনে থাকা ইউপি চেয়ারম্যানের গাড়ির গতিরোধ করে ইউপি সদস্য আরিফকে নামিয়ে নেন। এ সময় আরিফকে মারধরের পাশাপাশি তাঁর নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশ না করতে হুঁশিয়ারি দেন। যার প্রেক্ষিতে আজ বিকেলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

 

খালেদ / পোস্টকার্ড;