সীতাকুণ্ড থানা এসআই এমরানের ঘুষ দাবি, পুলিশ সুপারের কাছে নারীর অভিযোগ

সীতাকুণ্ড থানা এসআই এমরানের ঘুষ দাবি, পুলিশ সুপারের কাছে নারীর অভিযোগ
সীতাকুণ্ড থানা এসআই এমরানের ঘুষ দাবি, পুলিশ সুপারের কাছে নারীর অভিযোগ

পোস্টকার্ড নিউজ ।।

৬০ হাজার টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগে সীতাকুণ্ডে পুলিশের এসআই এমরান হোসাইনের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার ও রেঞ্জ ডিআইজির কাছে লিখিত নালিশ করেছেন জুলি আক্তার নামে এক নারী। রবিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার ও চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজির দপ্তরে বাদী হয়ে তিনি এ অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগকারী জুলি আক্তার সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের মসজিদ্দা এলাকার আবুল কাশেমের মেয়ে।

অভিযোগে জুলি আক্তার উল্লেখ করেন, তার স্বামীর মালিকানায় একটি সিএনজি অটোরিকশা রয়েছে। যা ভাড়া দিয়ে সংসারের দৈনন্দিন ব্যয় মেটান। গত ২৪ আগষ্ট সীতাকুণ্ড উপজেলার বড় কুমিরা ঘাটঘর এলাকা থেকে সিএনজি অটোরিকশাসহ কয়েকজন যাত্রীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন এসআই এমরান হোসাইন ও তার সঙ্গীয় ফোর্স। পরদিন সিএনজি অটোরিকশাটি ছাড়িয়ে নিতে এসআই এমরান হোসাইন তার নিজস্ব সোর্স মাহবুবকে দিয়ে জুলি আক্তার ও তার দেবরকে কুমিরা বাজারে ডেকে পাঠান। জুলি আক্তার তার অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, সেদিন (২৫ আগষ্ট) এসআই এমরান হোসাইন ও সোর্স মাহবুব জুলি আক্তারের কাছে সিএনজি অটোরিকশাটি ছাড়িয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে ৬০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। জুলি আক্তার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সোর্স মাহবুব তাদেরকে নানারকম ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন এবং তারা দুজন (এসআই এমরান হোসাইন ও সোর্স মাহবুব) সাফ জানিয়ে দেন তাদেরকে ৬০ হাজার টাকা না দিলে সিএনজি অটোরিকশাটি ছাড়িয়ে আনা সম্ভব নয়, সারাজীবন ডাম্পিং স্টেশনে পঁচবে।

জুলি আক্তার অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, পরবর্তীতে সিএনজি অটোরিকশাটিকে জব্দ দেখিয়ে মামলা হয় বলে জানতে পারেন তিনি৷ এরপর সিএনজি অটোরিকশাটি ফিরে পেতে আদালতের আশ্রয় নিলে আদালত মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই এমরান হোসাইনকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। আইনী প্রক্রিয়া চালাতে গিয়ে এসআই এমরান হোসাইন জুলি আক্তারের কাছে পুনরায় ঐ ৬০ হাজার টাকা দাবি করেন। দিতে ব্যর্থ হলে তিনি নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন।

এছাড়াও জুলি আক্তার তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, এসআই এমরান হোসাইন বাংলাদেশ পুলিশের একজন সদস্য হয়ে ঘুষ দাবি, সোর্সের মাধ্যমে কর্মকান্ড পরিচালনা দেশের প্রচলিত আইন ও পুলিশের আইনবহির্ভূত। তার এমন কর্মকান্ড পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট ও সুনাম ক্ষুন্নের জন্যও দায়ী। যা পুলিশ সম্পর্কে জনসাধারণের মাঝে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিচ্ছ। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে জুলি আক্তার গণমাধ্যমে বলেন, পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস সিএনজি অটোরিকশাটি ছাড়িয়ে আনতে আদালতে যাই। আদালত মালিকানা সংক্রান্ত প্রতিবেদন চাইলে এসআই এমরান হোসাইন ও তার সোর্স মাহবুব আমার কাছে ৬০ হাজার টাকা দাবি করেন এবং বলেন ১ মাস সময় দিন সিএনজি অটোরিকশা ছাড়িয়ে আনার দায়িত্ব আমার। টাকা দিতে পারিনি তাই তিনি প্রতিবেদন উল্টো দিয়েছেন। গাড়িটির প্রকৃত মালিক আমার স্বামী। গাড়ি সংক্রান্ত সকল ডকুমেন্টস আমার স্বামীর নামে রয়েছে। আমার স্বামী অসুস্থ হওয়ায় তার সাথে আমি যোগাযোগ করি। আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও এসআই এমরান হোসাইন ও তার সোর্সের চাহিদা পূরণ না করায় হয়রানির শিকার হচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড থানার এসআই এমরান হোসাইন বলেন, জুলি আক্তার নামে কোন নারীর সঙ্গে আমার পরিচয়ও হয়নি। তিনি আমার কাছে আসেননি। আমার কাছে এসেছেন তার এক আত্মীয়। আমি জেনেছি সিএনজি অটোরিকশাটির মালিক একজন পুরুষ। অথচ একজন নারী মালিকানা দাবি করছেন। তাছাড়া সিএনজি অটোরিকশাটি একটি ডাকাতি মামলায় থানায় জব্দকৃত আলামত। যাচাই-বাছাই না করে সেটি আমি দিতে পারিনা। এছাড়া সিএনজি অটোরিকশা দেয়ার কথা আদালত বলেনি। আদালত প্রতিবেদন চেয়েছে, যা আমি পাঠিয়েছি। তার পক্ষে না হওয়ায় তিনি আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন।

জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড থানার অফিসার ইনচার্জ তোফায়েল আহমেদ বলেন, সিএনজি অটোরিকশাটি ডাকাতি মামলায় জব্দকৃত আলামত। ৬০ হাজার টাকা দাবির প্রশ্নই আসেনা। এসআই এমরান হোসাইন অত্যন্ত সৎ অফিসার। তার ব্যাপারে এসব অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য নয়৷ তাছাড়া আমি এখনো অভিযোগ হাতে পাইনি।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;