লকডাউন করা হলো সাতকানিয়ায় ৪শ পরিবার আর লোহাগাড়ার হাসপাতাল ও মার্কেট

লকডাউন করা হলো সাতকানিয়ায় ৪শ পরিবার আর লোহাগাড়ার হাসপাতাল ও মার্কেট

সাতকানিয়া প্রতিনিধি।। 

সাতকানিয়ার আরো ৫৮টি পরিবার এবং লোহাগাড়ায় ১টি বেসরকারি হাসপাতাল ও মার্কেট লকডাউন করা হয়েছে।

এর আগে সাতকানিয়ায় ৩৪২টি পরিবার লকডাউন করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় ৪০০টি পরিবার, ১টি বেসরকারি হাসপাতাল ও মার্কেট লকডাউন করা হয়।

সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা প্রশাসন এসব পরিবার ও প্রতিষ্ঠান লকডাউন ঘোষণা দিয়ে মাইকে প্রচার করেন এবং লাল পতাকা টাঙিয়ে দেন।

সাতকানিয়ার পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের ইছামতি আলীনগরের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার রাতে মারা যাওয়ার পর চমেক হাসপাতালে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হতে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট গত শনিবার রাতে হাতে পাওয়ার পর ওই ব্যক্তির শরীরে করোনা সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হন।

এরপর ওইদিন রাতে পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডটি পুরো লকডাউন ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও আশপাশের লোকজনের মধ্যে পরস্পরের সংস্পর্শের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়ার পর অন্যান্য পরিবার, হাসপাতাল ও মার্কেট লকডাউন ঘোষণা করা হয়।

সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রমতে, পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডে ৩৪৩ পরিবার, মাদার্শা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মক্কাবাড়ি এলাকায় ১০ পরিবার, ২নং ওয়ার্ডের রূপনগরে ১২ পরিবার, সাতকানিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের সামিয়ার পাড়ায় ২ পরিবার, ৫ নং ওয়ার্ডের ছিটুয়া পাড়ায় ১৫ পরিবার, ৭নং ওয়ার্ডের ভোয়ালিয়া পাড়ায় ৩৩ পরিবারসহ মোট ৪০০ পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে।

অন্যদিকে, লোহাগাড়ায় সিটি হাসপাতাল এবং হাসপাতাল সংলগ্ন মোস্তফা সিটি ভবনটি লকডাউন করা হয়েছে।

সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ ওসমানী জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া সিরাজুল ইসলামের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও আশপাশের লোকজনের মধ্যে পরস্পরের সংস্পর্শের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেয়ার পর মোট ৪০০ পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে। এসব পরিবারে ৩৭৬৫ জন সদস্য রয়েছে। আর ওই রোগীকে সাতকানিয়ার কেরানীহাট আশশেফা হাসপাতালে নেয়ার পর যে ডাক্তার চিকিৎসা দিয়েছেন এবং যেসব স্টাফ ওই সময়ে দায়িত্বে ছিল তাদেরকে এবং এসব স্টাফের পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে যে ব্যক্তি মারা গেছেন তার পরিবারের সদস্য, হাসপাতালে আনা নেয়ার সময় থাকা লোকজন এবং দাফন-কাফনের সময় থাকা লোকদের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

তাদের নমুনা সংগ্রহের জন্য ইতিমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে একটি টিম পাঠানো হয়েছে।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর এ আলম জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে পুরো চট্টগ্রামের মধ্যে সাতকানিয়ার এটি প্রথম মৃত্যু। তার শরীরে করোনার সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর শুরুতে পশ্চিম ঢেমশার ৩নং ওয়ার্ডটি লকডাউন করা হয়।

পরবর্তীতে খোঁজখবর নিয়ে সিরাজুল ইসলামের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী লোকদের সাথে সংস্পর্শে আসা মানুষদের চিহ্নিত করে মোট ৪০০টি পরিবারকে লকডাউন করা হয়।

লকডাউন করা এসব ঘরে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। লকডাউনকৃত পরিবারের সদস্যদেরকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। বাইরের লোকজনকেও লকডাউন করা পরিবার গুলোতে যাওয়া আসা থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হয়েছে।

লকডাউন করা পরিবারগুলো ছাড়াও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া সিরাজুল ইসলামের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে অন্য কারো সংস্পর্শের তথ্য পেলে তাদেরকেও লকডাউন করা হবে।

লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ হানিফ জানান, সাতকানিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে যে ব্যক্তি মারা গেছেন তাকে ঘরে গিয়ে নুর মোহাম্মদ নামের এক পল্লী চিকিৎসক চিকিৎসা দিয়েছিল। আর ওই পল্লী চিকিৎসক লোহাগাড়া সিটি হাসপাতালের সুপারভাইজার। ওই ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেয়ার পর পল্লী চিকিৎসক নুর মোহাম্মদ আরো ২ দিন সিটি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সুপারভাইজার হওয়ার কারনে তাকে হাসপাতালের ডাক্তার ও স্টাফদের সাথে কথা বলতে হয়েছে এবং হাসপাতালের সব জায়গায় গিয়েছে। এছাড়া দায়িত্বপালন কালে হাসপাতাল সংলগ্ন মোস্তফা সিটি মার্কেটেও আসা যাওয়া করেছে। হাসপাতালের অন্যান্য স্টাফরাও ওই মার্কেটে গেছে। এজন্য হাসপাতাল এবং মার্কেটটি লকডাউন করা হয়েছে।