রাজপথে আওয়ামী লীগ - বিএনপি'র শক্তি পরীক্ষা আজ!

রাজপথে আওয়ামী লীগ - বিএনপি'র শক্তি পরীক্ষা আজ!
রাজপথে আওয়ামী লীগ - বিএনপি'র শক্তি পরীক্ষা আজ!

বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকা ।।

রাজপথ দখলের ‘চূড়ান্ত শক্তি পরীক্ষায়’ লিপ্ত হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সাবেক প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছয় মাস বাকি থাকতেই রাজপথে মুখোমুখি অবস্থান গ্রহণ করেছে দল দুটি। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে বিএনপি।

আজ বুধবার রাজধানীতে বড় সমাবেশের মাধ্যমে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা দেবে তারা। একই দিন রাজধানীতে বিশাল শান্তি সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথ নিজেদের দখলে রাখার শক্তি দেখাবে আওয়ামী লীগ। লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটিয়ে বড় শোডাউনের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। কোনো অবস্থায় সরকারবিরোধীদের রাজপথ দখল এবং সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টির সুযোগ দিতে চায় না তারা।

একই সঙ্গে রাজধানীর ১২টি স্থান থেকে পৃথক সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যুগপৎ এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেবে বিএনপির সমমনা দল ও জোট। বিদেশিদের সামনে নিজেদের দাবির পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন দেখাতে আজকের সময়টি বেছে নিয়েছে বিরোধী দল। আবার সমাবেশ সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকাও সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলকে দেখাতে চায় দলটি। অবশ্য বিএনপির এই কৌশলে সতর্কতা অবলম্বন করছে সরকারপক্ষ।

বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, বিরোধী দলের সম্ভাব্য কর্মসূচির মধ্যে দিনব্যাপী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে পদযাত্রা, রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত মানবপ্রাচীর ইত্যাদি আলোচনায় রয়েছে। এসব কর্মসূচি দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্তও রয়েছে দলটির। সেসব কর্মসূচির মধ্যে ঢাকামুখী রোডমার্চ ও লংমার্চ, নির্বাচন কমিশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং ঢাকা ঘেরাও– সর্বশেষ দাবি না মানা পর্যন্ত ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা করা হতে পারে।

অবশ্য একই সময়ে মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা করছেন অনেকে। জনমনেও ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। যদিও এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আজ থেকে দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উভয় দলকে ২৩ শর্তে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। বিএনপিকে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগকে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করার শর্ত দেওয়া হয়েছে।

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির সমাবেশ আজ বুধবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হবে। এ সমাবেশ থেকে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই দিন বিকেল ৪টায় বিএনপির মিত্র জোট ও দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবে, ১২ দলীয় জোট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কের সামনে, এলডিপি এফডিসিসংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ে, গণফোরাম দলীয় কার্যালয়ের সামনে, গণঅধিকার পরিষদ (নুর) পুরানা পল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে এবং গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ (রেজা), সমমনা গণতান্ত্রিক পেশাজীবী জোট ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ প্রেস ক্লাবের সামনে, বাংলাদেশ লেবার পার্টি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এক দফার যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেবে।

পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে বিকেল ৩টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ব্যানারে অনুষ্ঠিত হবে সমাবেশ। সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। শান্তি সমাবেশের পাশাপাশি বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে সম্ভাব্য নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস ঠেকাতে রাজপথে সর্বোচ্চ সতর্ক পাহারায়ও থাকবেন সরকার সমর্থক নেতাকর্মীরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট সংকটের মুখে এত দিন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহলের তৎপরতার মূল লক্ষ্য ছিল সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের পরিবেশ তৈরি করা। এ নিয়ে সরকারি ও বিরোধী দলগুলোকে আলোচনার টেবিলে বসানোর প্রত্যাশাও ছিল কারও কারও মধ্যে। কিন্তু আজ থেকে বিএনপির এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলন এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সর্বাত্মক প্রতিরোধের ঘোষণায় দু’পক্ষের অনড় অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এখন দেখার বিষয় আগামী দিনের রাজনীতি কোন পথে এগুচ্ছে । 

খালেদ / পোস্টকার্ড ;