মহররম মাসের ১০ তারিখ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন, আশুরার তাৎপর্য ও করণীয়

মহররম মাসের ১০ তারিখ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন, আশুরার তাৎপর্য ও করণীয়
মহররম মাসের ১০ তারিখ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন, আশুরার তাৎপর্য ও করণীয়

ইসলাম ডেস্ক ।। 

মহররম মাসের ১০ তারিখ মুসলমানদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এক দিন। ইসলামের আবির্ভাবের বহু আগে থেকেই এ দিনটি ছিল পবিত্র ও সম্মানিত। প্রাচীন আরবের রীতিতে যে মাসগুলোতে যুদ্ধ করা হারাম ছিল, তন্মধ্যে মহররম অন্যতম। আল্লাহ নিজেই এ মাসকে ‘মর্যাদাপূর্ণ’ বলে ঘোষণা করেছেন। ‘মহররম’ শব্দের অর্থও সম্মানিত।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে গণনা হিসাবের মাস হলো ১২টি। যেদিন থেকে তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এর মধ্যে চারটি মাস বিশেষ সম্মানিত’ (সুরা তাওবা : ৩৬)। এই আয়াতের তাফসিরে বলা হয়েছে, ‘১২ মাস হলো-মহররম, সফর, রবিউল আউয়াল, রবিউস সানি, জমাদিউল আউয়াল, জমাদিউস সানি, রজব, শাবান, রমজান, শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ। আর সম্মানিত চারটি মাস হলো মহররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ। এ মাসেরই ১০ তারিখকে বলা হয় আশুরা। আশুরা মানে দশম দিবস। তবে এই আশুরাকে কেন্দ্র করে মুসলমানরা নানা দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। শিয়ারা আশুরার আবহমান কালের সব তাৎপর্য-মহিমা বাদ দিয়ে কেবল কারবারার মর্মান্তিক ঘটনায় শোক প্রকাশকেই প্রধান ইবাদত হিসেবে ধরে নিয়েছে। তারা ধারণা করে, নবীজি (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.)-এর প্রেমে রক্ত ঝরানোই প্রকৃত ইসলাম। 

শুধু কারবালাকেন্দ্রিক নয় আশুরা

কারবালায় ইমাম হোসাইন (রা.)-এর মর্মান্তিক ট্র্যাজেডির বহু পূর্ব থেকেই আশুরার গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত। এ দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়, হজরত নুহ (আ.) মহাপ্লাবনের শেষে জুদি পাহাড়ে অবতরণ করেন, হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তি দেওয়া, হজরত মুসা (আ.) তুর পর্বতে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেন, তার শত্রু ফেরাউনের নীল নদে ভরাডুবি হয়। এই দিনে হজরত আইয়ুব (আ.) রোগ থেকে মুক্তি পান। হজরত ইয়াকুব (আ.) তার প্রিয় পুত্রকে ফিরে পান। হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে দজলা নদীতে বের হয়েছিলেন এই দিনে। 

হজরত সোলায়মান (আ.) এই দিনে পুনরায় রাজত্ব ফিরে পান। হজরত ঈসা (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং তাকে আকাশে তুলে নেওয়া হয় এই দিনেই। হজরত জিবরাঈল (আ.) সর্বপ্রথম আল্লাহর রহমত নিয়ে রাসুল (সা.)-এর কাছে আগমন করেছিলেন। মহররমের কোনো এক শুক্রবার ইস্রাফিল (আ.)-এর শিঙায় ফুৎকারের মাধ্যমে পৃথিবী ধ্বংস হবে। নবীজি (সা.)-এর ইন্তেকালের কয়েক দশক পর ৬০ হিজরি সালে এ দিনেই প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হোসাইন (রা.) ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে সপরিবারে শাহাদাতবরণ করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে ঘৃণ্যতম বর্বর হত্যাকা মেতে ওঠে ইয়াজিদের পিশাচ বাহিনী। কারবালার ঘটনা নিঃসন্দেহে জঘন্যতম এক ঘটনা। এ ঘটনা আমাদের শেখায় হকের পক্ষে অবিচল থাকার, ত্যাগ ও আত্মত্যাগের এবং জালিমের সামনে মাথা নত না করার শিক্ষা। তবে ইসলামে আশুরার মাহাত্ম্য কেবল এ কারণে নয়।

আশুরার দিনের আমল

কারবালার ঘটনার বহু পূর্বেই বিশ্ব নবী (সা.) হাদিস বর্ণনা করেছেন। রমজানের পর মহররম মাসের রোজা সবচেয়ে উত্তম বলে বর্ণনা করেছেন নবীজি (সা.)। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হচ্ছে, আল্লাহর মাস ‘মহররম’-এর রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হচ্ছে রাত্রিকালীন নামাজ (মুসলিম : ১১৬৩)। আর মহররমের রোজার মধ্যে আশুরার রোজার ফজিলত আরও বেশি। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি’ (বুখারি : ১/২১৮)। আলী (রা.)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিলেন, রমজানের পর আর কোনো মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জনৈক সাহাবি করেছিলেন, তখন আমি তার খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, ‘রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রাখো। কারণ এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তায়ালা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’ (তিরমিজি : ১/১৫৭)

দুটি রোজা রাখা 

এ ধরনের আরও অনেক হাদিস রয়েছে, যেগুলোর দ্বারা বোঝা যায় যে, আশুরার দিনের রোজা সুন্নাহ এবং বরকতময়। তবে রোজা রাখার ক্ষেত্রে বিশ্ব নবী (সা.)-এর নির্দেশনা হলো-‘তোমরা এই রোজার ক্ষেত্রে ইহুদিদের বিরোধিতা করো।’ অর্থাৎ তারা শুধু ১০ তারিখ রোজা রাখে। আর তোমরা ১০/১১ অথবা ৯/১০ তারিখ রোজা রাখবে। এর বাইরে আর যত কিছু আছে মাতম, মর্সিয়া, মিলাদসহ সবকিছুই বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য। মিছিল, আতশবাজি ফোটানো, বিশেষ খাবার রান্না করা এসবের কোনো নিয়ম নেই। এ ছাড়া এদিনের বিশেষ নামাজ, বিশেষ দোয়া-দরুদ বা আমল নেই। 

তবে স্বাভাবিকভাবে অন্যদিনের মতোই এদিন নফল আমল করতে পারবে। তবে নফল রোজার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক নিয়ম মেনে আশুরা পালন করার তওফিক দান করুন।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;