বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থততা , রাশিয়া ছাড়ছে ওয়াগনার

বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থততা ,  রাশিয়া ছাড়ছে ওয়াগনার
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থততা , রাশিয়া ছাড়ছে ওয়াগনার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

বিদ্রোহের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়ার ভাড়াটে গোষ্ঠী ওয়াগনারের সৈন্যরা রোস্তোভ-অন-ডন শহর ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থততায় মস্কো অভিমুখে যাত্রা বন্ধ করতে রাজি হন ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিন।

এর আগে ওয়াগনার প্রধান বলেন, রক্তপাত এড়াতে তিনি তার যোদ্ধাদের ইউক্রেনে ফিরে যেতে বলেছেন।

ইয়েভগেনি প্রিগোশিন এখন প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে চলে যাবেন এবং তার ও তার সৈন্যদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। এর মাধ্যমে রাশিয়ায় একটি বিশৃঙ্খল এবং অভাবনীয় দিনের পরিসমাপ্তি হল।

ওয়াগনার গ্রুপ হল ভাড়াটে সৈন্যদের নিয়ে গড়ে তোলা একটি বেসরকারি সেনাবাহিনী যা ইউক্রেনে রাশিয়ান সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নিয়মিত লড়াই করছে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ পরিচালনা নিয়ে রুশ বাহিনীর সাথে ওয়াগনার গ্রুপের উত্তেজনা শুধু বাড়ছিল। প্রিগোশিন সাম্প্রতিক মাসগুলোয় রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার সমালোচনা শুরু করেছিলেন।

শনিবার সকালে ওয়াগনারের ভাড়াটে সৈন্যরা ইউক্রেনে তাদের ফিল্ড ক্যাম্প থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রোস্তোভ-অন-ডনে প্রবেশ করে।

শ্বাসরুদ্ধকর গতিতে তারা আঞ্চলিক সামরিক কমান্ডের দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং মস্কোর উত্তরে আরেকটি শহর ভোরোনেজের সামরিক স্থাপনা দখল করে নেয় বলে জানা গিয়েছে।

যোদ্ধারা মস্কোর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলে, ক্রেমলিন মস্কোসহ অনেক অঞ্চলে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি করে। মস্কোর মেয়র শহরের বাসিন্দাদের বাইরে ঘোরাঘুরি এড়িয়ে চলতে বলেন।

ওয়াগনার সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রয়োজনে হাজার হাজার এলিট চেচেন সৈন্য মস্কোর দিকে যাচ্ছে বলেও সতর্ক করা হয়েছিল।

এর জবাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, যারা রাশিয়ার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।

রুশ টিভি চ্যানেল রোসিয়া ২৪-এর খবরে বলা হয়, বেলারুশের নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো প্রিগোশিনের সঙ্গে বৈঠকের পর শনিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করে উত্তেজনা প্রশমনে এই সমঝোতা হয়।

এর কয়েক ঘণ্টা পর ভিডিওতে দেখা যায়, ওয়াগনার সৈন্যরা রোস্তোভ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তাদের সমর্থকরা উল্লাস করছে এবং ওয়াগনার সেনাদের সঙ্গে তারা হাত মেলাচ্ছেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, পরিস্থিতি ‘সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল’।

“ক্রেমলিনের দায়িত্বরত ব্যক্তি নিশ্চয়ই খুব ভয় পাচ্ছেন এবং সম্ভবত কোথাও লুকিয়ে আছেন, নিজেকে সামনে আনছেন না। আমি নিশ্চিত যে তিনি আর মস্কোতে নেই।

“তিনি জানেন যে তিনি কীসে ভয় পান, কারণ তিনি নিজেই এই হুমকি তৈরি করেছেন। সব পৈশাচিকতা, সব ধরণের ক্ষয়ক্ষতি, ঘৃণা যা কিছু তৈরি হয়েছে – তিনিই এসব ছড়িয়েছেন।

গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে যে, পুতিন মস্কো ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। ফ্লাইট ট্র্যাকিংয়ে দেখা গিয়েছে যে, শনিবার দুটি প্রেসিডেন্সিয়াল বিমান মস্কো ছেড়ে গিয়েছে।

তবে তার প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট এখনো ক্রেমলিনেই আছেন।

পেসকভ আরও বলেন, প্রিগোশিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করা হবে এবং তার ও তার সৈন্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হবে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ওয়াগনারের কোন ভাড়াটে সৈন্য চুক্তি করতে চাইলে তারা এখনো তা করতে পারবে বলে জানিয়েছেন প্রেস সচিব।

ওয়াগনারের যোদ্ধারা চলে যাওয়ার সময় তাদেরকে আকাশে গুলি চালাতে দেখা যায়।

টুইটারে ছড়িয়ে পড়ো একটি ক্লিপে দেখা যায় যে ওয়াগনার গ্রুপের ভাড়াটে সৈন্যরা যখর রোস্তোভ থেকে সরে যাচ্ছিলেন তখন সেখানকার একজন যোদ্ধা তার রাইফেলটি আকাশে তুলে গুলি ছুড়ছে।

রাস্তায় সারিবদ্ধ বেসামরিক মানুষদের দেখা যায় তার যোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে হাততালি দিচ্ছে এবং উল্লাস করছে। গত কয়েক ঘণ্টা ধরে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরটিতে ভাড়াটে গোষ্ঠীর প্রতি জনসমর্থনের অনেক ফুটেজ দেখা গিয়েছিল ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;