দ্বীপ রক্ষায় ৫৬৪ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রস্তাব, উপকূল রক্ষা পেলে পাল্টে যাবে অরক্ষিত সন্দ্বীপ

দ্বীপ রক্ষায় ৫৬৪ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রস্তাব, উপকূল রক্ষা পেলে পাল্টে যাবে অরক্ষিত সন্দ্বীপ
দ্বীপ রক্ষায় ৫৬৪ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রস্তাব, উপকূল রক্ষা পেলে পাল্টে যাবে অরক্ষিত সন্দ্বীপ

আমেনা বেগম, সন্দ্বীপ ।। 

চট্টগ্রামের উপকূলীয় উপজেলা সন্দ্বীপ। বর্তমানে এই দ্বীপের চারপাশ ভাঙনের মুখে। আর দ্বীপের ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষই কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। সন্দ্বীপ ও উরির চরে কৃষি জমি আছে ২৬ হাজার ৭৩৩ হেক্টর। কিন্তু সন্দ্বীপ উপকূল অরক্ষিত থাকায় নিয়মিত চাষাবাদ থেকে বিরত থাকেন বেশিরভাগ কৃষক। এতে ফসল উৎপাদনও কম হয়। 

সন্দ্বীপ উপজেলার পোল্ডার নং-৭২ এর সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) এ প্রতিবেদন দিয়েছে।

তবে এ দ্বীপ রক্ষায় ৫৬৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পুরোপুরি পাল্টে যাবে অরক্ষিত দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ। পাল্টে যাবে এ দ্বীপের জনগণের জীবনধারা। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) এমন তথ্য দিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান খান। 

তিনি বলেন, সন্দ্বীপে কয়েক দশক আগের পুরাতন বেড়িবাঁধ আছে। কিন্তু আমরা সেখানে স্থায়ী বেড়িবাঁধ করতে চাই। উরির চরের ৭.৫ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র ভাঙন আছে। তাই সন্দ্বীপ উপকূল রক্ষায় একটি প্রকল্প খুবই দরকার। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে আছে। 

তিনি বলেন, পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সন্দ্বীপের কৃষি, মৎস্য ও সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। সাথে পাল্টে যাবে এই দ্বীপ উপজেলার মানুষের জীবনযাত্রাও। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শুধুমাত্র এই উপজেলায় ফসল উৎপাদন হবে এক লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। যা বর্তমানের চেয়ে ২২ হাজার ২৯৩ মেট্রিক টন বেশি।

পাউবোর তথ্যমতে, সন্দ্বীপ উপজেলার আয়তন ৭৩২ দশমিক ৪২ কিলোমিটার। সন্দ্বীপে বেড়িবাঁধের দৈর্ঘ্য ৫৫ কিলোমিটার। ইতোমধ্যে সিসি ব্লক দ্বারা ৯ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সুরক্ষিত আছে। অধিক ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে ২৯ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। 

সন্দ্বীপের সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের পথে উপকূলীয় ভাঙন প্রতিরোধ অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উড়ির চরের মুন্সির হাট, কালনি বাজার, আদর্শ পাড়া, পূর্বের চরের ম্যানগ্রোভ বন পর্যন্ত তীব্র ভাঙন রয়েছে। সন্দ্বীপের উত্তর অংশে দিঘাপাড়, আমানুল্লাহ, সন্তোষপুর ও কালাপানিয়া এলাকায় ভাঙন এলাকা বেশি। যার ফলে পুরোপুরি অরক্ষিত সন্দ্বীপ। 

সূত্র আরো জানায়, সন্দ্বীপ উপকূলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলাস্থ পোল্ডার-৭২ এর অন্তর্গত কালাপানিয়া, মুসাপুর, সারিকাইত ও মগধরা এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের স্থায়ী পুনর্বাসনসহ ঢাল সংরক্ষণ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়। প্রকল্পে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৫৬৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের অধীনে বাঁধের ঢাল সুরক্ষা কাজ ২৯ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার, বাঁধ পুনঃআকৃতিকরণ ৪৫ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার, সিল্ট অ্যাক্সিলারেটর নির্মাণ এক দশমিক ৫ কিলোমিটার, পোল্ডার ৭২-এ ড্রেনেজ সাতটি খালের পুনঃখনন ১৯ দশমিক ১৮ কিলোমিটার, নতুন রেগুলেটর নির্মাণ দুটি, রেগুলোটর সংস্কার সাতটি, ম্যানেগ্রোভ বনায়ন ৩২ দশমিক ৩ কিলোমিটার, পোল্ডারের উত্তর দিকে নতুন বাঁধ নির্মাণ ১০ দশমিক ২২ কিলোমিটার, উত্তর দিকে খাল পুনঃখনন ৬ দশমিক ৮ কিলোমিটার, উত্তর দিকে নতুন খাল খনন ৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার, উত্তর দিকে রেগুলেটর নির্মাণ তিনটি, উড়ির চরে তীর সংরক্ষণ কাজের ৭ দশমিক ৩ কিলোমিটার।

সিইজিআইএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্দ্বীপ উপজেলায় ১৫ হাজার ২৮৭ হেক্টর ও উড়িরচরে ১১ হাজার ৪৪৬ হেক্টর ফসলি জমি আছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে ধান ও ৯ হাজার ৬৬৩ হেক্টর জমিতে শস্য উৎপাদন হয়। বর্তমানে এসব জমিতে এক লাখ দুই হাজার ৭৭৯ মেট্রিক টন ধান ও শস্য উৎপাদন হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ফসল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন।

সন্দ্বীপ আসনের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা পোস্টকার্ডকে বলেন, সন্দ্বীপ ও উরির চরের উন্নয়নে ভাঙন কবলিত উপক‚লীয় এলাকা সুরক্ষিত করা জরুরী। এ জন্য একটি প্রকল্প খুবই দরকার। পানি উন্নয়ন বোর্ড যে প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে সেটি যত দ্রুত অনুমোদন হবে তত বেশি উপকৃত হবে সন্দ্বীপের মানুষ। প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে কৃষি, মৎস্য সেক্টরে বড়ধরনের পরিবর্তন ঘটবে। স্থায়ী বাঁধটি নির্মিত হলে লোকালয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ হবে। ভাঙন রোধ হবে। সন্দ্বীপ ঝুঁকিমুক্ত থাকবে বলে জানান তিনি ।

খালেদ / পোস্টকার্ড;