বিপদ আমাদের ঈমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত, বিপদে বান্দার পরীক্ষা

হাফেজ আরমান হোসেন

বিপদ আমাদের ঈমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত, বিপদে বান্দার পরীক্ষা

প্রত্যেক বিপদ-আপদ সাধারণ দৃষ্টিতে স্বাভাবিক বিষয় মনে হলেও এটি প্রকৃতপক্ষে আমাদের ঈমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আল্লাহ ঈমানদারদের ঈমানের পরীক্ষা গ্রহণ করেন বিপদে ফেলার মাধ্যমে। আবার কখনও বিপদের মাধ্যমে বান্দার গুনাহ মাফ করা হয়ে থাকে। তাই মুমিনের জন্য বিপদ মূলত কল্যাণ লাভের একটি মাধ্যম।

আল্লাহ বিপদ দিয়ে বান্দাকে পরীক্ষা করেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেনÑ ‘আমি তোমাদের অবশ্যই পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, জানমালের ক্ষতি এবং ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে তোমাদের মধ্যে যারা ধৈর্যশীল এবং বিপদের সময় ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন’ (অর্থ: নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমাদের সবাইকে তার নিকট ফিরে যেতে হবে) বলে, তাদের প্রতি রয়েছে মহান রবের পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ ও নেয়ামত। আর তারাই প্রকৃতপক্ষে হেদায়েতপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা : ১৫৫-১৫৭)। অন্য একটি আয়াতে এসেছে, ‘লোকেরা কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’Ñ এ কথা বললেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? তাদের পূর্বে যারা ছিল আমি তাদের পরীক্ষা করেছিলাম। অতঃপর আল্লাহ অবশ্য জেনে নেবেন কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী।’ (সুরা আনকাবুত : ১-৩)
অনেক সময় বিপদ প্রদানের মাধ্যমে বান্দার গুনাহ ক্ষমা করা হয়ে থাকে। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন নারী-পুরুষের বিপদ-মুসিবত লেগেই থাকে। এ বিপদ-মুসিবত তার শারীরিক, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির ব্যাপারে হতে পারে। আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তা চলতেই থাকে। আর আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর তার ওপর গুনাহের কোনো বোঝাই থাকে না।’ (মেশকাত : ১৫৬৭)। অন্য একটি হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন- ‘মুসলমানদের ওপর যেসব বিপদাপদ আসে এর দ্বারা আল্লাহ তার পাপ দূর করে দেন। এমনকি যে কাঁটা তার শরীরে ফুটে এর দ্বারাও।’ (বুখারি : ৫৬৪০; মুসলিম: ৬৪৫৫)। আরেকটি হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেনÑ ‘কোনো মুসলিমের ওপর কোনো বিপদ পতিত হলে তার বিনিময়ে তার গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়, এমনকি ক্ষুদ্রতর কোনো কাঁটা বিদ্ধ হলেও।’ (মুসলিম : ৬৪৫৯)
দুনিয়ার জীবনে এসব বিপদ থেকে পরিত্রাণও বলে দেওয়া হয়েছে। কিছু আমলের মাধ্যমে বান্দা এসব বিপদ থেকে মুক্তি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ বরকত লাভ করতে পারে। হাদিসে এসেছে, হজরত হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।’ (আবু দাউদ : ১৩১৯)। আল্লাহ তায়ালাও মুমিনদের এমন নির্দেশই দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছেÑ ‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর, আর তা আল্লাহভীরু ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের কাছে নিশ্চিতভাবেই কঠিন।’ (সুরা বাকারাহ : ৪৫)
লেখক : শিক্ষার্থী, দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসা, ডেমরা, ঢাকা