পড়া দ্রুত আয়ত্তের কৌশল

পড়া দ্রুত আয়ত্তের কৌশল
পড়া দ্রুত আয়ত্তের কৌশল

পোস্টকার্ড ( ক্যাম্পাস) ডেস্ক ।।

অনেকেই চাইবেন যেন তারা দ্রুত পড়তে পারেন, সেই সঙ্গে সব তথ্য গ্রহণও করতে পারেন। এ বিষয়টি আয়ত্ত করতে কয়েক দশক আগে থেকে মানুষ কিছু কৌশল অবলম্বন করে আসছে। এই আশায় যে তারা এক ঘণ্টার মধ্যে বড় কোনো বই পড়ে শেষ করে ফেলতে পারবে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত একটি কৌশল হলো স্কিম রিডিং, যেটা আমরা কম-বেশি সবাই কখনও না কখনও করেছি।
স্কিম রিডিং হলো বইয়ের পাতায় প্রতিটি লাইনে শুধু চোখ বুলিয়ে যাওয়া এবং সেখান থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শব্দ বের করে বোঝার চেষ্টা করা। আর এই কাজটি সহজ করতে বইয়ের লাইন বরাবর হাতের আঙুল বা কলম ব্যবহার করা হয়। যেন চোখ অন্য কোনো লাইনে সরে না পড়ে। এতে মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হওয়ারও আশঙ্কা থাকে না এবং চোখ ওই নির্দিষ্ট লাইন বরাবর রাখা সম্ভব হয়। সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট শব্দগুলো সহজেই চিহ্নিত করা যায়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় মেটা গাইডিং। বিবিসি।
আবার এমনও কিছু কৌশল রয়েছে যার মাধ্যমে এক সঙ্গে কয়েক লাইন পড়া সম্ভব। এখন বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনে নির্দিষ্ট কিছু শব্দ লিখে দিলে, ওই অ্যাপই পুরো বই খুঁজে আপনার জন্য শব্দগুলো বের করে দেবে। শব্দগুলো স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করতে থাকবে। এই চতুর পদ্ধতিগুলো আপনার পড়ার গতি বাড়াতে অনেক সাহায্য করতে পারে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে প্রশ্ন হলো এই দ্রæতগতিতে পড়ার মধ্যে বইয়ের তথ্যগুলো আপনি কতটা বুঝতে পারবেন। যখন এ ব্যাপারে শক্ত প্রমাণের হিসাব আসে, তখন স্পিড রিডিংয়ের সক্ষমতা উন্নত করবে বলে দাবি করা বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোর্স এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলো মূল্যায়ন করা কঠিন হয়ে পড়ে।
কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বাধীন পর্যবেক্ষকরা একটি নিয়ন্ত্রিত অবস্থার অধীনে এই পরীক্ষাগুলো করেন না। তাই কিছু উত্তরের জন্য ক্যালিফোর্নিয়ার, সান ডিয়েগোর প্রয়াত মনোবিজ্ঞানী কিথ রায়নার কিছু কাজের দিকে চোখ ফেরানো হয়। তিনি বহু বছর ধরে এমন কয়েকটি কৌশলের পিছনে থাকা গঠন পদ্ধতিগুলো মূল্যায়ন করেছেন। চোখের চলাচল অনুসরণের মাধ্যমে তিনিই প্রথম পড়ার-গতি নিয়ে গবেষণা করেন।
২০১৬ সালে তিনি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন, যেখানে আমাদের পড়ার গতি বাড়ানোর চেষ্টা সম্পর্কে বিজ্ঞান কী বলতে পারে সেই বিষয়গুলো তুলে আনা হয়। যখন আমরা পড়ি, তখন আমাদের চোখের ভেতরে রেটিনার কেন্দ্রীয় অংশ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শব্দ শনাক্ত করে। রেটিনার এই কেন্দ্রটিকে ফোভে বলা হয় যেখানে কোনজ নামের কোষ উচ্চমাত্রায় রয়েছে।
এই কোষগুলো পৃষ্ঠার হালকা এবং অন্ধকার অংশের প্যাটার্ন শনাক্ত করে এবং সেই তথ্য মস্তিষ্কে পৌঁছে দেয় যেখানে প্যাটার্নটিকে শব্দ বলা হয়। কিছু স্পিড রিডিং পদ্ধতির লক্ষ্য হলো মানুষকে পেরিফেরিয়াল ভিশনের মধ্যে থাকা লেখাগুলো আরও দ্রæত পড়তে শেখানো, যাতে মানুষ একবারে একাধিক শব্দ গ্রহণ করতে পারে। পেরিফেরিয়াল ভিশন হলো কেন্দ্রের আশপাশের যে বিষয়বস্তুগুলো দৃষ্টির মধ্যে থাকে। তবে রেটিনার পেরিফেরি বা পরিধিতে কোনজের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম থাকে এবং এখানকার কোষগুলোকে রডস বলা হয়। কোনজের মতো রডস বইয়ের পাতার আলো ও অন্ধকার অংশের প্যাটার্ন এত ভালোভাবে শনাক্ত করতে পারে না।
শব্দগুলো আমাদের কাছে এত দ্রæত উপস্থাপন করা হয় যে মস্তিষ্ক সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করতে পারে না। চোখের সামনে পৃথক শব্দ যদি দ্রæতগতিতে উপস্থাপন করা হয়? রায়নার আবিষ্কার করেছেন যে এ বাক্যগুলোর জন্য খুব ভালোভাবে কাজ করতে পারে। তবে এটি শুধু আমাদের চোখের পাঠের গতি সীমাবদ্ধ করে নাÑ সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের দ্রæত শব্দ গ্রহণের ক্ষমতায় সীমাবদ্ধ করে দেয়।
পরিশেষে তিনি বলেন যে, এই পদ্ধতি যদি বইয়ের পুরো পাতা জুড়ে প্রয়োগ করা হয় তাহলে শব্দগুলো আমাদের সামনে এত দ্রæত উপস্থাপিত হবে যে মস্তিষ্কের সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করার সময় থাকবে না। এর ফলে আমাদের চোখের সামনে দিয়ে প্রয়োজনীয় শব্দগুলো চলে যাবে তবে আমরা সেগুলো বুঝতে পারব না।
শব্দ দেখার সঙ্গে সঙ্গে সেটা দ্রæত বুঝতে পারার একটি উপায়ও রয়েছে। আর সেটা হলো যখন আমরা আমাদের ভেতরের শব্দটি পড়ি এবং সেই শব্দটি মুখে উচ্চারণ করে আমাদের মস্তিষ্ককে বার্তা দেই তখন সেই শব্দ দ্রæত চোখে পড়া এবং বোঝার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তবে শব্দ মুখে উচ্চারণের কারণে পড়া ও বোঝার গতি কমে যেতে পারে বলে কেউ কেউ সন্দেহ করছেন।
এই উচ্চারণ বাদ দিলে আদৌ কি বড় কোনো পার্থক্য হয়? এমন ধারণার ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন আই ট্র্যাকিং মনোবিজ্ঞানী ম্যালোরি লেইনেনগার। তার গবেষণা অনুসারে অভ্যন্তরীণ কণ্ঠস্বরটি আমাদের মস্তিষ্কের ভেতরে কী ঘটছে তা বুঝতে সাহায্য করতে পারে।
যদি আমাদের চোখ এবং আমাদের মনের গতি বাড়ানোর একটি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি খুঁজে পাওয়া এতটা কঠিন হয় তবে প্রশ্ন ওঠে যে স্পিড রিডিং চ্যাম্পিয়নরা কীভাবে কয়েক ঘণ্টার পরিবর্তে কয়েক মিনিটের মধ্যে পুরো বই গ্রাস করতে পারে এবং সেই বইয়ের কথাগুলো বুঝতেও পারে? তাহলে বিষয়টি কি তাই যে ওই মানুষগুলো স্কিমিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমীভাবে অনেক ভালো?
কিছু পরিস্থিতিতে স্কিমিং আমাদের বাকিদের জন্যও ভালো কাজ করতে পারে। কখনও কখনও আপনি যা চান তা হলো, কোনো প্রতিবেদনে একটি বিশেষ তথ্য অনুসন্ধান করা, সেই ক্ষেত্রে স্কিম রিডিং ভালো একটি উপায়।
কখনও কখনও আপনাকে শুধু পুরো বিষয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেতে হবে, সে ক্ষেত্রে বাড়তি কিছু কৌশল রয়েছে যেমন শিরোনামগুলো পড়া, কী-ওয়ার্ডগুলো সন্ধান করা, প্রতিটি অধ্যায়ের প্রথম অনুচ্ছেদটি পড়া এবং পরবর্তী অধ্যায়গুলোর প্রথম বাক্যটি পড়া। তবে এসব কিছু নির্ভর করবে আপনি কোন ধরনের বই বা বিষয়বস্তু পড়ছেন তার ওপর।
সাধারণত এই পদ্ধতিটি উপন্যাসের চেয়ে পাঠ্যপুস্তক পড়ার ক্ষেত্রে বেশি কাজে লাগানো হয়। তবে ভালো খবর হলো দ্রæত পড়তে শেখার একটি উপায় রয়েছে এবং তা হলো নিয়মিত অনুশীলন করা। আবার আমরা কেবল আমাদের দৃষ্টি দ্বারা সীমাবদ্ধ নই। গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনি কোনো শব্দ কত দ্রæততার সঙ্গে শনাক্ত করতে পারছেন সেটা যদি শব্দটি আপনার অনেক পরিচিত হয় তাহলে পড়ার গতিও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। সুতরাং আপনি যত বেশি পড়বেন তত দ্রæত আপনি তা ধরতে পারবেন।