দর্শক আর রানে চট্টগ্রামে অন্য এক বিপিএল

দর্শক আর রানে  চট্টগ্রামে অন্য এক বিপিএল
দর্শক আর রানে চট্টগ্রামে অন্য এক বিপিএল

নজরুল ইসলাম ।।

প্রতিবারের মত এবারেও ঢাকা থেকে শুরু বিপিএল । বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে এবারের বিপিএলের নাম দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু বিপিএল। এবারের বিপিএলের অনেক কিছুতে পরিবর্তন আসলেও শুরুটা সেই আগের মতই। ঢাকা পর্বে রান আর দর্শক খরা দিয়েই শুরু বিপিএলের এবারের আসর। তবে বিপিএল চট্টগ্রামে নোঙ্গর করতেই বদলে গেল সব। বরাবরই চট্টগ্রামে এসে পূর্ণতা পেয়েছে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে সবচাইতে আলো ঝলমলে এই আসরটি। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

চট্টগ্রামে বিপিএলের প্রথম দিন থেকেই রানের বন্যা বইতে শুরু করে। প্রথম ম্যাচেই জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট উপহার দিয়েছে দুইশ কাছাকাছি রানের ইনিংস। আর সে রান টপকেও গিয়েছিল পরে ব্যাট করা দল। ১৮৯ রানের ইনিংস দিয়ে শুরু হয়েছিল চট্টগ্রামে বিপিএলের যাত্রা। আবার রাজশাহীর করা বিশাল সে স্কোর টপকে ম্যাচও জিতল খুলনা। এরপর যতই দিন গড়িয়েছে ততই যেন রানের ফোয়ারা ছুটেছে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ২২ গজে। চট্টগ্রাম-ঢাকা ম্যাচেতো দু’দল মিলে প্রায় সাড়ে চারশর মত রান করল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দর্শকদের চাহিদা হচ্ছে চার আর ছক্কার ঝড়। আর সেটা বেশ ভালই উঠছে চট্টগ্রামের ভেন্যুতে। বিশেষ করে স্বাগতিক চট্টগ্রাম যেন দর্শকদের প্রত্যাশা পূরন করেই চলছে। এর আগে যত আসরই বসেছে স্বাগতিক দল তেমন দর্শকদের প্রত্যাশা পুরন করতে পারেনি। এবারে কিন্তু ‘তার ব্যতিক্রম হতে চলেছে। বিশেষ করে দর্শকদের চাহিদা পুরন করতে সক্ষম হচ্ছে ব্যাটসম্যানরা। চট্টগ্রামে রান হচ্ছে তার মানে কেবল ব্যাটসম্যানরাই সুবিধা নিচ্ছে তা কিন্তু’ নয়। বোলাররাও এখানে দারুন পারফরম্যান্স করছে। বিশেষ করে পেস বোলাররা ভাল করছে এখানে। সে তুলনায় স্পিনাররা বেশি সুবিধা করতে পারছেনা। তবে ব্যাটসম্যানরা যেন প্রত্যাশা পুরনে এগিয়ে থাকছে।

বরাবরের মত এবারের আসরেও দর্শকরা বিপিএলকে জমিয়ে তুলছে চট্টগ্রামে। প্রথম দিন কিছুটা দর্শক উপস্থিতি কম থাকলেও এরপর সময় যতই গড়াচ্ছে ততই দর্শকরা আসতে শুরু করেছে মাঠে। আর এর পেছনেও স্বাগতিক দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স বড় ভুমিকা রাখছে। স্বাগতিকরা ভাল করাতে দর্শকদের মাঠে আশার আগ্রহটা বেড়েছে। এরই মধ্যে তিনদিন গড়িয়ে গেছে বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের। প্রতিদিনই বেড়েছে দর্শক সংখ্যা।

গতকাল যেন তা প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল ছিল সপ্তাহিক ছুটির দিন। আর সে ছুটির দিনটাকে বেশ ভালই কাজে লাগিয়েছে চট্টগ্রামের দর্শকরা। দলে দলে তারা হাজির হয়েছে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। গতকাল শুক্রবার ছিল বলে ম্যাচের শিডিউলে কিছুটা পরিবর্তন ছিল। অন্যান্য দিনে দুপুর দেড়টায় প্রথম ম্যাচটি শুরু হলেও গতকাল শুক্রবার হওয়ায় প্রথম ম্যাচটি শুরু হয়েছিল দুপুর ২ টায়। যদিও সকাল থেকে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া বিরাজ করছিল চট্টগ্রামে। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে কমতে থাকে শীতের প্রকোপ। আর সেটাকে বেশ ভালভাবেই কাজে লাগিয়েছে দর্শকের স্রোত। নানা বয়সী আর নানা শ্রেনীর সব মানুষের গন্তব্য যেন একটাই। আর তা হচ্ছে সাগরিকাস্থ জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম।

এমনিতেই জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যাওয়া মানে ভোগান্তির যেন শেষ নেই। এবারেও যে তার ব্যতিক্রম হচ্ছে তা কিন্তু না। কিন্তু ক্রিকেটের টানে মানুষকেতো আর ঘরে বন্দী করে রাখা যাবেনা। প্রচন্ড ঠান্ডা আর নানা ভোগান্তি কোন কিছুই থামাতে পারেনি চট্টগ্রামের দর্শকদের। দুপুর গড়াতেই স্টেডিয়াম প্রায় পরিপূর্ন। চার আর ছক্কার জমজমাট প্রদর্শনী দেখতে উম্মুখ থাকা দর্শকরা ভরিয়ে তুলল স্টেডিয়ামের গ্যালারী। তবে বরাবরের মত এ দিনও হতাশ হতে হয়নি তাদের। দিনের প্রথম ম্যাচটির শুরুটা ভাল করতে পারেনি রংপুর রেঞ্জার্স। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে শুরুর হতাশা কাটিয়ে বেশ ভাল ভাবেই ম্যাচে ফিরেছিল মোহাম্মদ নবীর দল। তাদের প্রতিটি চার আর ছক্কাকে দারুন উল্লাসে বরন করছিল গ্যালারীর দর্শকরা। গতকাল সুর্য যতই অস্তাচলের দিকে যা”িছল ততই যেন দর্শকের সরব উপসি’তিতে গর্জে উঠছিল জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারী। এবারের বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব যখন শুরু হচ্ছিল তখন বলতে গেলে ছাত্র ছাত্রীরা অখন্ড অবসরে। কারন তাদের পরীক্ষা সব শেষ। আর বর্তমানে ক্রিকেটের দর্শকের বড় একটি অংশ হচ্ছে এই স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীরা। বলতে গেলেই তারাই ভরিয়ে দিচ্ছে স্টেডিয়ামের গ্যালারী। গতকাল যেন আরেকবার গর্জে উঠেছিল গ্যালারী। তবে সন্ধ্যা গড়াতেই আবার তাদের পড়তে হয় শীতের প্রকোপে। তবে মাঠের চার আর ছক্কার মারে যেন সে শীত উড়ে গেল এক নিমিষেই। চট্টগ্রামের দর্শকরা যে বিপিএলকে বেশ ভাল ভাবেই গ্রহণ করেছে তার প্রমাণ মেলে যখন দিন গড়ানোর সাথে সাথে টিকিটের চাহিদা যখন বাড়ে। গতকাল এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এবং সাগরিকাস’ বিটাক মোড়ের টিকিট কাউন্টারে খোজ নিয়ে জানা গেছে গতকাল সকাল থেকেই ছিল টিকিটের জন্য লম্বা লাইন। যদিও বরাবরের মত অনেককেই হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে টিকিট না পেয়ে। আবার অনেকেই দ্বারস্থ হয়েছে কালোবাজারির। তবে এত কিছুর পরও যারা মাঠে গিয়ে ম্যাচ দেখতে পেরেছে তাদের কাছে যেন সব ভোগান্তি নিমিষেই পরিণত হয় আনন্দে।

বিপিএল নামক ক্রিকেট আনন্দের এই প্যাকেজটি চট্টগ্রামে অবস্থান করবে আরো তিনদিন। আর এই তিন দিনই চট্টগ্রামের ক্রিকেট প্রেমীরা গ্যালারী মাতিয়ে রাখবেন তেমনই প্রত্যাশা বিপিএল আয়োজকদের।