ঢাকায় দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে মানববন্ধন

ঢাকায় দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে মানববন্ধন
ঢাকায় দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে মানববন্ধন

নিউজ ডেস্ক ।।

ভারতের দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে ঢাকায় মানববন্ধন করেছে ‘জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক প্রতিরোধ মোর্চা’।

মঙ্গলবার (৩ মার্চ) সকাল ১১টায় শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাস গুপ্ত বলেন, ১৯৪৭ সালের ক্যাবিনেট মিশন রিপোর্ট বলেছিল ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ কখনই সমস্যার সমাধান দিবে না। সেদিন সেই কথায় কেউ কর্ণপাত না করলেও আজকে ৭ দশক পরে সেটা সবাই টের পাচ্ছে।

ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীকে যে নাথুরাম গডসে খুন করেছিল, আজকে সেই খুনির ১৮০ ফুট ভাস্কর্য নির্মাণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ ভারতে যেমন গান্ধীবাদী রাজনীতি হচ্ছে, ঠিক তেমনি নাতুরমের প্রেতাত্মারা অপরাজনীতি, দাঙ্গা এসব করে যাচ্ছে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, পৃথিবীর যে প্রান্তেই মানবতা ভুলুণ্ঠিত হবে, সাধারণ মানুষের উপর হামলা হবে আমরা সবসময় তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিব। ভারতের মত অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র যারা কিনা নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য পদ আশা করছে, সেই দেশে এরকম সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কাম্য নয়। ভারতের সাধারণ মানুষ এসকল অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আর এই বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের একটি মহল উস্কানি দিতে চেষ্টা করছে যাদের লক্ষ্য কোনোভাবেই মানবিকতা রক্ষা নয়, বরং তারাও সাম্প্রদায়িক চিন্তা করে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের সরকার প্রধান আসবে এটাই তো স্বাভাবিক, আমরা মোদির বাংলাদেশে আগমনকে স্বাগত জানাই।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বাবু চন্দন শীল বলেন, বিন্দু থেকেই সিন্ধু হয়, আজকের পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। আমাদের দেশেও কিছু কিছু মহল ধর্মীয় প্রচারণার নামে উস্কানিমূলক কথা বলছে, এসব থামাতে না পারলে এখানেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

জামিআ ইকরা বাংলাদেশের মুফতী ও মুহাদ্দিস ফয়জুল্লাহ আমান তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমান পৃথিবীতে সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশেও একটি চক্র এই সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিতে চেষ্টা করছে। যে চক্র মনে করে, বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বললে কুফরি হয়, সেই তারাই আবার বলছে মুজিববর্ষের ইজ্জত রক্ষা করতে মোদিকে বাংলাদেশে আসা রুখতে হবে। তাদের মতলব মোটেই সাম্প্রদায়িকতা নিঃশেষ করা নয় বরং সাম্প্রদায়িকতা লালন করা। তারা যদি আসলেই মুসলমানদের পক্ষে থাকতো তবে, চীনের উইঘুরের মুসলমানদের পক্ষেও কথা বলত, চীনের সাথেও সম্পর্ক ছেদ এর কথা বলত। তা না করে শুধু ভারতের সাথে সম্পর্ক ছেদ করতে চায়। এরা মূলত পাকিস্তানি প্রেতাত্মা, রাজাকারদের দোসর।

আমরা দিল্লিতে দেখতে পাই, দাঙ্গায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ওলামায়ে হিন্দ, গুরুদুয়ারার মতো সংগঠন। তারা মানুষের জন্য তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করছে। গাজওয়ায়ে হিন্দ বা জিহাদ ঘোষণার মতো ফালতু কাজ না করে, হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই হিসেবে থাকতে হবে।

সমাপনী বক্তব্যে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক প্রতিরোধ মোর্চার আহবায়ক ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ঢাকা থেকে দিল্লী, শাহবাগ থেকে শাহীনবাগ, আমরা রাজনীতি বুঝি না, আমরা কূটনীতি বুঝি না। আমরা শুধু চাই ধর্ম, বর্ণ অথবা গোত্রের ভিত্তিতে মানবহত্যা চলবে না, চলতে দেওয়া যাবে না।

জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক প্রতিরোধ মোর্চার প্রধান সমন্বয়ক এফ এম শাহীনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন অপরাজেয় বাংলার সদস্য সচিব এইচ রহমান মিলু, উঠোনের সভাপতি অনিকেত রাজেশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের জি এস শান্ত এবং বিজয় ৭১ হলের ছাত্রনেতা তারিক।   

উপস্থিত ছিলেন বিবার্তা২৪ এর সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি, সাবেক ছাত্রনেতা জসিমউদ্দীন ভূঁইয়া, সাবেক ছাত্রনেতা তারেক রহমান এলিট, রবিউল রুপম, বিশিষ্ট সাংবাদিক শাহনেওয়াজ দুলাল, রোকেয়া হল ছাত্র সংসদের এ জি এস ফাল্গুনী দাস তন্বীসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীবৃন্দসহ জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক প্রতিরোধ মোর্চার নেত্রীবৃন্দ।