ড. হাছান মাহমুদ আ.লীগের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক

ড. হাছান মাহমুদ আ.লীগের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
ড. হাছান মাহমুদ আ.লীগের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।। 

নতুন কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদকদের ক্রম নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি। আগের কমিটির চার যুগ্ম সম্পাদক স্বপদে বহাল থাকলেও তিন নম্বর যুগ্ম সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদকে নতুন কমিটিতে এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদের।  

গত শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে দলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। এ অধিবেশনে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন দলটির নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে। পরে কাউন্সিলে প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বিভিন্ন পদে মনোনীত নেতাদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন।

দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে বিদায়ী কমিটির চারজন বহাল থাকার কথা বলেন। নাম ঘোষণার সময় তিনি বিদায়ী কমিটির তিন নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদের নাম এক নম্বরে ঘোষণা করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি আগের কমিটির এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের নাম দুই নম্বরে, চার নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নাম তিন নম্বরে এবং দুই নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. দীপু মনির নাম চার নম্বরে ঘোষণা করেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি কমিটি ঘোষণার পর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের ক্রমিক আগের কমিটিতে যেভাবে ছিল ওয়েবসাইটের সেভাবেই আপলোড করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর ওয়েবসাইট থেকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নাম ছাড়া আপলোড করা সব নামের তথ্য সরিয়ে ফেলা হয় এবং আপডেট আসছে বলে নোটিশ দেয়া হয়। পরে আপলোডকৃত নতুন তথ্যে এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ড. হাছান মাহমুদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এনিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে বিভ্রান্তি শুরু হয়। পরের দিন রোববার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে আওয়ামী লীগের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি জাতির পিতার প্রতিকৃতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে হাছান মাহমুদকে এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। দ্বিতীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, ডা. দীপু মণি তৃতীয় এবং, বাহাউদ্দিন নাছিম চতুর্থ।’

অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে একমাত্র নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডেও পরপর দুবার জায়গা পান রাঙ্গুনিয়ার সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদ। 

১৯৬৩ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণকারী ড. হাছান মাহমুদ চট্টগ্ৰাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন সাস্ত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্ৰী লাভ করেন। পরে তিনি বেলজিয়ামের লিম্বুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্ৰী লাভ করেন। তিনি স্কুল ও কলেজ জীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। 

ড. হাছান মাহমুদ ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম ওয়ার্ড শাখা ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন।১৯৭৮ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত তৎকালীন সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমান সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯২ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৯৩ সাল থেকে তিনি বেলজিয়ামে অবস্থানকালে সেখানকার আওয়ামী লগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সালের মার্চ পর্যন্ত বেলজিয়াম শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

ড. হাছান মাহমুদ  ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী এবং ২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত। দলটির পরিবেশ ও বন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারেরমত আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চট্টগ্রাম-৬ আসন থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে পরাজিত করে ১,০১,৩৪০ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এ সময় শেখ হাসিনার তৃতীয় মন্ত্রীসভায় তিনি ২০০৯ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রথমে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, একই বছরের ১ আগস্ট থেকে ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং পরবর্তীতে একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ  নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-৭ আসন থেকে নির্বাচিত হন। দশম জাতীয় সংসদে তিনি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একাদশ জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভায় তিনি তথ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ভূমিকার জন্য ৫ অক্টোবর ২০১৫ সালে “গ্রিন ক্রস ইন্টারন্যাশনাল” সাধারণ অধিবেশনে ড. হাছান মাহমুদকে “সার্টিফিকেট অব অনারেবল মেনশনে” ভূষিত করে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;