জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সুযোগ জীবনের বড় পাওয়া: জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সুযোগ জীবনের বড় পাওয়া: জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সুযোগ জীবনের বড় পাওয়া: জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালনের সুযোগকে জীবনের বড় পাওয়া । তিনি বলেছেন, আমরা মুজিব বর্ষ পালনের সুযোগ পেয়েছি। এ যে আমাদের জীবনে কত বড় পাওয়া, তা ভাষায় বোঝাতে পারব না। আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই দেশবাসীর প্রতি যারা আমার দল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে, পরপর তিনবার সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে মুজিব বর্ষ উদযাপনের সুযোগ করে দিয়েছেন। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

ভাষণে দেশবাসীকে নিজের ও বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানান। ভাষণে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, জাতীয় চার নেতা ও ১৫ আগস্টের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি।

পিতার স্মৃতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তুমি ঘুমিয়ে আছ টুঙ্গিপাড়ার সবুজ ছায়াঘেরা মাটিতে পিতা-মাতার কোলের কাছে। তুমি ঘুমাও পিতা শান্তিতে। তোমার বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমরা জেগে রইব তোমার আদর্শ বুকে নিয়ে। জেগে থাকবে এ দেশের মানুষ-প্রজন্মের পর প্রজন্ম-তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে। তোমার দেওয়া পতাকা সমুন্নত থাকবে চিরদিন।

ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব জুড়ে করোনাভাইরাসজনিত উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়েছে। তবে বছর জুড়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা মুজিব বর্ষ উদযাপন করব। একই কারণে বিদেশি অতিথিদের সফর স্থগিত করা হয়েছে। ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নমগেয়েল ওয়াংচুক, নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টেনিও গুতেরাস এবং ওআইসির মহাসচিব ড. ইউসুফ আল ওথাইমিনসহ বেশ কয়েকজন বিদেশি শুভাকাক্সক্ষী ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আমি তাদের ব্যক্তিগতভাবে এবং বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

জাতির পিতার স্মৃতিচারণা করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নামের এই দেশটি তিনি উপহার দিয়েছেন। দিয়েছেন বাঙালিকে একটি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়ের মর্যাদা। তাই তো তিনি আমাদের জাতির পিতা। দুঃখী মানুষকে ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে নিজের জীবনের সব সুখ-আরাম বিসর্জন দিয়ে তিনি সংগ্রাম করেছেন আজীবন। বারবার কারারুদ্ধ হয়েছেন। মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাঁকে ব্যথিত করত। অধিকারহারা দুঃখী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে তিনি দ্বিধা করেননি। এই বঙ্গভ‚মির বঙ্গ-সন্তানদের একান্ত আপনজন হয়ে উঠেছিলেন তাই তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’।

পিতার স্মৃতিচারণা করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ছোটবেলা থেকেই মানুষের দুঃখ-কষ্টে ব্যথিত হতেন জাতির পিতা। অকাতরে বিলিয়ে দিতেন তাঁর জামা-কাপড়, বই, ছাতা। যার যখন যা প্রয়োজন মনে করতেন, তাকে নিজের জিনিস দিয়ে দিতেন। নিজের খাবারও তিনি ভাগ করে খেতেন। দুর্ভিক্ষের সময় গোলার ধান বিলিয়ে দিতেন। মানুষের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যেই তিনি আনন্দ পেতেন। নিজের জীবনের কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। বাংলাদেশের মানুষকে উন্নত, সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন তিনি। তাঁর সে ত্যাগ বৃথা যায়নি। আজকে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন। আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। গড়তে হবে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

তরুণদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, আজকের শিশু-কিশোর, তরুণ সমাজের কাছে আমার আবেদন তোমরা দেশকে এবং দেশের মানুষকে ভালোবাসবে। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা। স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ^সভায় মাথা উঁচু করে চলার উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে তোমাদের নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। ঠিক যেভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষকে ভালোবেসেছিলেন, সেভাবেই ভালোবাসতে হবে। তাঁর আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।

জাতির জনকের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, পিতা, ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছে তোমাকে। তোমার দেহ রক্তাক্ত করেছে। তোমার নাম বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওরা পারেনি। ঘাতকেরা বুঝতে পারেনি তোমার রক্ত ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে-বেয়ে ছড়িয়ে গেছে সারা বাংলাদেশে। জন্ম দিয়েছে কোটি কোটি মুজিবের।

জনকের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আজ জেগে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষ সত্যের অন্বেষণে। ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, তোমার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে বিশ্ব জুড়ে। বাংলাদেশকে বিশ্ব চিনে নিয়েছে তোমার ত্যাগের মহিমায়।

শেখ হাসিনা বলেন, পিতা, তোমার কাছে আমাদের অঙ্গীকার, তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়বই। আর সেদিন বেশিদূরে নয়। তুমি ঘুমিয়ে আছ টুঙ্গিপাড়ার সবুজ ছায়াঘেরা মাটিতে পিতা-মাতার কোলের কাছে। তুমি ঘুমাও পিতা শান্তিতে। তোমার বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমরা জেগে রইব তোমার আদর্শ বুকে নিয়ে। জেগে থাকবে এ দেশের মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে। তোমার দেওয়া পতাকা সমুন্নত থাকবে চিরদিন। কবিগুরুর ভাষায় তাই বলতে চাই তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি/ তোমার সেবার মহৎ প্রয়াস সহিবারে দাও ভকতি।