চালের দাম বেড়েই চলছে , শীতেও মিলছে ইলিশ

চালের দাম বেড়েই চলছে , শীতেও মিলছে ইলিশ
চালের দাম বেড়েই চলছে , শীতেও মিলছে ইলিশ

শাহীন হাওলাদার ।।
 

হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে চালের বাজার যদিও চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে বাজারে। অপরদিকে ভারত রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর দেশের বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ কমতে শুরু করেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে কেজি প্রতি ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে পেঁয়াজের। পেঁয়াজের দাম কমলেও শীতকালীন সবজি নিয়ে এখনও অস্বস্তিতে ক্রেতারা। এদিকে চলতি শীত মৌসুমেও বাজারে প্রচুর ইলিশের দেখা মিলছে।

শুক্রবার বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়। সরেজমিন দেখা যায়, বাজারে চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও দিনাজপুরে চালের বাজার হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম ৫০ কেজির বস্তাতে বেড়েছে দেড়শ থেকে দুইশ টাকা। কেজিতে বেড়েছে ৩ টাকা। ৪২ টাকা কেজির মিনিকেট ৪৫ টাকায়, ৩৫-৩৬ টাকা কেজির আটাশ চালের দাম বেড়ে ৩৯ টাকা, ২৫-২৬ টাকার গুটিস্বর্ণা ২৮ টাকা এবং ৫০ টাকার নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকায়। স্বর্ণা প্রতিবস্তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৬০ টাকা আগে ছিল ১ হাজার ৪০০ টাকা। গুটিস্বর্ণা প্রতিবস্তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৫০ টাকা আগে ছিল ১ হাজার ৪৫০ টাকা। আটাশ চাল প্রতিবস্তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ টাকা আগে ছিল ১ হাজার ৭৫০ টাকা। উনত্রিশ প্রতি বস্তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮৫০ টাকা আগে ছিল ১ হাজার ৭০০ টাকা। মিনিকেট প্রতিবস্তা এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ টাকা আগে ছিল ২ হাজার ১০০ টাকা। হঠাৎ করেই চালের এই মূল্য বৃদ্ধিতে স্বল্প ও নিম্ন আয়ের ক্রেতারা ক্ষুব্ধ।

একজন ক্রেতা বলেন, বাজারে চালের দাম বাড়ায় চাল কিনতে হিমশিম খাচ্ছি। চালের দাম যাতে না বাড়ে সে জন্য নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। না হলে আমাদের মতো গরিবরা তো মারা যাবে। এদিকে চালের মূল্য বৃদ্ধির জন্য ধানের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি চালকল মালিকদের কিছুটা কারসাজিও রয়েছে বলে মনে করেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। পাইকারি আর খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পর্যাপ্ত চাল মজুত থাকার পরও মিলারদের কারসাজির কারণে বেড়েছে দাম। চালকল মালিকরা বলছেন, সরকারের ক্রয় অভিযান এবং বাজারে ধানের দাম বাড়ার কারণে চালের দাম বেড়েছে।

এদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, শিম, টমেটো, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগমে বাজার ভরপুর থাকলেও বেশিরভাগ সবজি বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। শসা ৪০-৬০ টাকা, পেঁপে ৪০-৬০ টাকা, করলা ৫০-৭০ টাকা, দেশি পাকা টমেটো ৪০-৬০ টাকা, শিম ৪০-৫০ টাকা, গাজর ৪০-৫০ টাকা, মুলা ২০-২৫ টাকা, নতুন গোল আলু ২৫-৩০ টাকা, শালগম ৩০-৪০ টাকা, বেগুন ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। শীতের অন্যতম সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা প্রতি পিস।

সবজির পাশাপাশি আটা, তেল, ডাল, চিনিসহ সব ধরনের নিত্য পণ্যের দাম বেড়েছে। মাসের ব্যবধানে আটার দাম কেজিতে ১৩ শতাংশ বেড়ে ২৬-৪৫ টাকায় উঠেছে। খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ বেড়ে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা। পাম অয়েলের দাম ১৩ শতাংশ বেড়ে প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকা। মসুর ডালের দাম প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ বেড়ে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫-১৩০ টাকায়। এক কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকা।

মসলার বাজার গরম
পেঁয়াজের ঝাঁঝ কিছুটা কমলেও রাজধানীর বাজারগুলোতে ১০০ টাকার নিচে মিলছে না দেশি নতুন পেঁয়াজের কেজি। আমদানি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা। টিসিবির হিসাবে, বছরের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম ৩১১ শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ২১১ শতাংশ বেড়েছে। রসুনের দাম বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৮৭ শতাংশ। বর্তমানে আমদানি করা রসুন কেজি ১৩০-১৫০ টাকা এবং দেশি রসুন ১৪০-২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এক মাস ধরেই রসুনের এমন চড়া দাম। শুকনো মরিচের দাম মাসের ব্যবধানে ১৪ শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে সাড়ে ৪২ শতাংশ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২০-৩৫০ টাকা কেজি। আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০-১৫০ টাকা। বছরের ব্যবধানে এ পণ্যটির দাম বেড়েছে ১৮ শতাংশ। জিরার দাম বছরের ব্যবধানে ৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩৫-৪৫০ টাকা কেজি। দারুচিনির দাম ৩৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪২০-৪৫০ টাকা কেজি। আর এলাচের দাম বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ বেড়ে ৫ হাজার টাকা কেজি হয়েছে।

শীতেও মিলছে ইলিশ
শীত মৌসুম সাধারণত ইলিশ শূন্য হিসেবে পরিচিত। কিন্তু তার ব্যতিক্রম ঘটিয়ে এবারের চলতি শীত মৌসুমেও ক্রেতাদের অনেকটা নাগালের মধ্যেই ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ও সাগরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে, আর তারই বদৌলতে এখন বিলুপ্ত মৌসুমেও দেখা মিলছে ইলিশের। জেলেরাও জানাচ্ছেন একই রকম কথা। তারা বলছেন, চলতি বছরে নিয়মিত মৌসুমের বাইরেও সাগরের পাশাপাশি নদীতে ইলিশ ধরা পড়ছে।

জানা যায়, শীত মৌসুমে ইলিশের চাহিদা তেমন একটা থাকে না, তাই এ সময়টাতে দাম এমনিতেও কম থাকে। আবার সম্প্রতি নদ-নদীতে ইলিশ ধরা পড়ায় দাম আরও কমে গেছে। এখন ৫শ গ্রাম থেকে ১২শ গ্রাম পর্যন্ত আকার ভেদে ইলিশ মণপ্রতি ২০ থেকে ৩৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাইকাররা এসব আমদানি ইলিশ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাচ্ছেন। এসব ইলিশের সংরক্ষণাগার থাকলে আরও ভালো হতো বলে অভিমত এ মাছ ব্যবসায়ীর।