করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে , স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বাংলাদেশ

করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে , স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বাংলাদেশ
করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে , স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে চীন ও থাইল্যান্ডসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে নিউমোনিয়া সদৃশ ‘করোনা ভাইরাস’ । চীন জুড়ে ছড়িয়ে পড়া রহস্যজনক নতুন ধরনের এই ভাইরাসে দেশটির ২৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যাও ইতোমধ্যে আটশ বেশি ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যু ও আক্রান্তদের বেশিরভাগই উহান শহরের; হুবেই প্রদেশের এ রাজধানী থেকেই গত বছর নতুন এ করোনা ভাইরাস উদ্ভূত হয়েছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে।

চীনের উহান প্রদেশে এই রোগ দেখা দিলেও এখন বেইজিং, সাংহাই ও সেনঝেন প্রদেশেও আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। চীনের বাইরে থাইল্যান্ডেই সবচেয়ে বেশি চারজনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান মিলেছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও। চীনের বাইরে আরও সাতটি দেশে ভাইরাসটির অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো যোগাযোগ থাকায় বাংলাদেশও এই ভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে।

দেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, চীন থেকে আসা জ্বরে ভোগা দুজন ব্যক্তির লালার নমুনা পরীক্ষা করে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি। ঝুঁকি থাকলেও প্রস্তুত আছে সরকার। এখনও কেউ শনাক্ত না হলেও করোনা ভাইরাস ঠেকাতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।

চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ২৫ জনের মৃত্যু এবং আরও ৮৩০ জনের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ১৭৭ জনের অবস্থা গুরুতর বলেও জানিয়েছে তারা। সন্দেহভাজন আরও ১ হাজার ৭২ জনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। চীনে গত ডিসেম্বর থেকে দেখা যাওয়া এই নতুন ভাইরাস মূলত ফুসফুসে বড় ধরনের সংক্রমণ ঘটায়। ভাইরাসটিকে এক ধরনের করোনা ভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এটি একটি কমন ভাইরাস যা নাক, সাইনাস বা গলার উপরিভাগে সংক্রমণ ঘটায়।

চীনা নববর্ষের ছুটির মধ্যে দেশটির কোটি কোটি মানুষ এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করলে সংক্রমণ হু হু করে বাড়তে পারে বলেও কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে। আজ শনিবার থেকে চীনে লুনার নিউ ইয়ারের সপ্তাহ জুড়ে ছুটি শুরু হচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে উহান ও হুয়াংগাং শহরে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেইজিংয়ে সব বড় উৎসব ও মন্দিরের মধ্যে মেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, চলচ্চিত্র মুক্তি স্থগিত এবং বিখ্যাত পর্যটন নগরী বন্ধ রয়েছে। হুবেই প্রদেশের প্রায় ২ কোটি মানুষকে অন্যদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। উহানের সঙ্গে বিমান ও রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যাতায়াত বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ সড়কেও। উহানের সর্বত্র ফেসমাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে; কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে শহরটি একটি ভ‚তুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ে জেনেভায় বৈঠকও করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। চীনে মারাত্মক আকার ধারণ করলেও অন্যান্য দেশে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৩ জনের শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়ায় পরিস্থিতিকে এখনই ‘বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা’ হিসেবে ঘোষণা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস বলছেন, চীনে জরুরি অবস্থা সৃষ্টি করলেও এটি এখনই বিশ্ব জুড়ে ভয়াবহ উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেনি, তবে হয়ে উঠতে পারে। এই ভাইরাসে বাংলাদেশের এখনও কেউ আক্রান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর নজরদারি বাড়িয়েছে। ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে প্রাণঘাতী এমনটা এখনই বলা যাবে না। তিনি বলেন, হেলথ কার্ড তৈরি করা হয়েছে। যারা চীন থেকে আসবে, তাদের এই কার্ডটা দিয়ে দেওয়া হবে। তাদের বলা হয়েছে, আসার সময় জ্বর না থাকলেও চীন থেকে আসার ১৪ দিনের মধ্যে যদি জ্বর হয়, তাহলে যেন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আইইডিসিআরের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। তাদের নির্দেশনা মেনে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর দুটি কৌশল গ্রহণ করেছে। প্রথমত দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত করা; দ্বিতীয়ত আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলে তাকে কড়া নজরদারিতে রাখা এবং প্রয়োজনে পৃথক করে ফেলা। কুর্মিটোলা হাসপাতালে রোগী রাখার ব্যবস্থা আছে।

আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, এ পর্যন্ত সন্দেহভাজন আটজনের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছে আইইডিসিআর। তাদের দুজনের লালার নমুনা পরীক্ষা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এই দুজন সম্প্রতি চীন থেকে দেশে এসেছেন। তবে তারা সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে।- সময়ের আলো ।