চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য তোড়জোড়!

চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য তোড়জোড়!
চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য তোড়জোড়!

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ) আসনের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ মারা যান গত ৫ ফেব্রুয়ারি। তার মৃত্যুতে চট্টগ্রামজুড়ে চলছে শোক। এরই মধ্যে এ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে শুরু হয়ে গেছে নেতাদের তোড়জোড়। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নেতারা বেশি সক্রিয়। এরপরে রয়েছে বিএনএফসহ অন্য প্রার্থীরা। তবে চুপ রয়েছেন বিএনপি নেতারা। 

যদিও এখনো উপ-নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু করেনি নির্বাচন কমিশন। এরিমধ্যেই প্রার্থিতার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের অন্তত অর্ধডজন নেতা। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম ও মোছলেমপত্নী শিরিন আহমদের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার জন্য আইনি বিধান রয়েছে। আসন শূন্য ঘোষণা করার পর উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন নির্বাচন কমিশন।’ 

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম ও মোছলেমপত্নী শিরিন আহমদের নাম এছাড়াও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি এসএম আবুল কালাম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার এসএম কফিল উদ্দিন, শিল্পপতি-ব্যবসায়ী সুকুমার চৌধুরী, বিজিএমই’র সাবেক সহ-সভাপতি ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের সভাপতি এসএম আবু তৈয়ব, সাবেক সংসদ সদস্য মঈনউদ্দিন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খানের নামও শোনা যাচ্ছে। বাদলের মৃত্যুর পরও তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন মহাজোট প্রার্থী জাসদের মঈনউদ্দিন খান বাদল। ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুর পর এই আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি উপ-নির্বাচনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মোছলেম উদ্দিন আহমদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাত পৌনে একটার দিকে মারা যান তিনি।

চট্টগ্রাম-৮ আসনে দ্বিতীয়বারের মতো উপ-নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি এই সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনে মাঠে রয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে ইতিমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন- তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা ও হিসাব-নিকাশ।

মনোনয়নপ্রত্যাশী নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘এই আসনের ৬৫ শতাংশ ভোটার নগরে। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র পদে দায়িত্ব পালনকালে জনগণের কাছাকাছি থাকার সুযোগ হয়েছে আমার। আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে আমার। দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি চাইলে নির্বাচন করবো।’

মোছলেম উদ্দিনের স্ত্রী শিরিন আহমদ ‘৭০-এর দশকে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে পা রাখেন। পরবর্তীসময়ে লালখান বাজার ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নগর মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন তিনি। তিনিও এখন দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

শিরিন আকতার বলেন, ‘তাঁর (মোছলেম উদ্দিন) ছায়াসঙ্গী হিসেবে দলীয় নেতা-কর্মী ও মানুষের সঙ্গে ছিলাম। এখন মোছলেম উদ্দিনের অসমাপ্ত কাজ শেষ করা ও তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দলের সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবো।’

সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, ‘২০০৮ ও ২০১৪ সালে নেত্রী আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিলেন। পরে নেত্রীর নির্দেশনায় মহাজোট প্রার্থী বাদলকে ছেড়ে দিই। তবে চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য নেত্রী আমাকে সিডিএ চেয়ারম্যান করেছিলেন। এবারও নির্বাচন করার প্রস্তুতি রয়েছে। তবে এ বিষয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। নেত্রী বিবেচনা করলেই নির্বাচন করবো।’

মনোনয়নপ্রত্যাশী এসএম আবুল কালাম বলেন, ‘১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে দলের দুর্দিনে নির্বাচন করেছিলাম। এবার মনোনয়ন পাওয়ার দাবি রাখি।’

ব্যবসায়ী নেতা এসএম আবু তৈয়ব বলেন, ‘রাজনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের জন্য কাছ করে যাচ্ছি। বোয়ালখালীবাসীর প্রত্যাশিত ও কাক্ষিত উন্নয়নের লক্ষ্যে মনোনয়ন চাইব। তাঁর নির্দেশনা পেলে নির্বাচন করবো।’

উল্লেখ্য ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের একাংশের সভাপতি মাঈনুদ্দিন খান বাদল নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু মাত্র ১ বছরের মাথায় ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর ভোর সাড়ে ৫টায় ভারতের বেঙ্গালুরুর নারায়ণ হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। 

২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদ্যপ্রয়াত সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ। তিনি ৩ বছরের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান। 

নির্বাচন কমিশনের নিয়ানুযায়ী আগামী তিন মাসের মধ্যে আবারও এ আসনে উপনির্বাচন হবে। যদিও নির্বাচন কমিশন এ আসনে উপনির্বাচনের কোনো তফসিল এখনও ঘোষণা করেনি। তবে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, এ আসনে উপনির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। শিগগিরই এ আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। 

নির্বাচন কমিশনার সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নং ওয়ার্ড এবং বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল, পশ্চিম গোমদণ্ডী, পূর্ব গোমদণ্ডী, শাকপুরা, সারোয়াতলী, পোপাদিয়া, চরণদ্বীপ, আমুচিয়া ও আহল্লা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসন। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৯২২ ও মহিলা ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ জন।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;